‘বিপর্যয় একটু কঠিন শব্দ। আমাদেরও মনে হয়েছিল ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১০০’র মধ্যে থাকা ও সবশেষ এশিয়ান কাপের শেষ ষোলোয় খেলা দলের বিপক্ষে এমন কিছু ঘটতে পারে। শুরুর ৪০ মিনিট ছিল খুবই ইতিবাচক, যেটা আমরা টেনে নিতে পারিনি। কিন্তু এই পর্যায়ে কেন আমরা ৯০ মিনিট পর্যন্ত খেলা চালিয়ে যেতে পারলাম না, তার কারণে খুঁজে বের করতে হবে।’
বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপ ফুটবলের বাছাইয়ের ম্যাচে ফিলিস্তিনের বিপক্ষে অ্যাওয়ে ম্যাচে ৫-০ গোলে হারাকে বিপর্যয় হিসেবে ভাবছেন না জানিয়ে এসব কথাই বলেন হাভিয়ের ক্যাবরেরা। বাংলাদেশ দলের কোচ ব্যর্থতা নিয়ে পড়ে না থেকে ২৬ মার্চ হোম ম্যাচের দিকেই রাখছেন সকল মনোযোগ।
বুধবার বিকেলে বসুন্ধরা কিংস অ্যারেনার ট্রেনিং গ্রাউন্ডে সেরেছে অনুশীলন। এর মাঝেই সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন ক্যাবরেরা। লাল-সবুজের দল ৪২ মিনিট পর্যন্ত জাল অক্ষতও রাখতে আকস্মিক ধসের মুখে পড়ে। বিষয়টি নিয়ে স্পেনিয়ার্ড এ কোচ জানান নিজের প্রতিক্রিয়া।
‘বিরতির ঠিক আগ মুহূর্তে দুটি গোল হজম করা আমাদের জন্য কঠিন ছিল। সম্ভবত এটা মানসিকভাবে আমাদের জন্য বড় ধাক্কা ছিল। এরপর দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আরও দুই গোল হজম করলাম। তাতে ম্যাচ শেষ হয়ে গেল। কিন্তু আবারও বলছি, এখন পর্যালোচনার, বিশ্লেষণের ও শেখার সময়। ইতিবাচক দিকগুলো নিতে হবে, নিশ্চিতভাবে কিছু বিষয় সমন্বয় করতে হবে। ফিরতি লিগে নিজেদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা, চাহিদা আরও বেশি হতে হবে। আমরা জানি, নিজেদের মাঠে আমরা আরও বেশি শক্তিশালী।’
চোখে চোখ রেখেই ম্যাচের শুরু থেকে শক্তিশালী ফিলিস্তিনের সঙ্গে টক্কর দিয়েছিল বাংলাদেশ। বেশ কয়েকটি আক্রমণ গড়ে গোলের সম্ভাবনাও জাগিয়েছিল। গোলের সুযোগ অবশ্য কাজে লাগানো যায়নি। সুবর্ণ সুযোগটি ২৭ মিনিটে এসেছিল। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া বল পায়ে টার্ন নিয়ে দেন পাস। ফাহিম বল আদায় করে সোহেল রানার দিকে বাড়ান। গোলের দারুণ সুযোগ থাকলেও সোহেল লক্ষ্য বরাবর শট নিতে পারেননি। অহেতুক উঁচু শট নিলে বল উপর দিয়ে ভলে যায়। গোল হাতছাড়ায় বাংলাদেশের ফুটবলারদের শরীরী ভঙ্গিতে হতাশা ঝরে পড়েছিল। পরে রক্ষণের রক্ষণের ব্যর্থতায় বরণ করতে হয় বড় পরাজয়।
ক্যাবরেরার ভাষ্য, ‘আমরা হাই লাইন ডিফেন্ডিংয়ের চেষ্টা করেছিলাম আমরা। এই ধরনে আমাদের দ্বিতীয়ার্ধে আরও আগ্রাসী হওয়ার পরিকল্পনা ছিল । যেভাবে আসলে আমরা প্রথমার্ধে খেলতে পেরেছিলাম, কয়েকটি ভালো সুযোগ পেয়েছিলাম, কিন্তু কাজে লাগাতে পারিনি। হয়তো, ওগুলো হলে ম্যাচও ভিন্নরকম হতে পারতো। শেষ পর্যন্ত আমরা রক্ষণে ভুগেছি। ফিলিস্তিন শক্তিশালী দল। তাদের ভালো, গতিময় ও শক্তিশালী খেলোয়াড় আছে। আবারও বলছি, এখন পুনর্গঠনের এবং দ্বিতীয় লেগের জন্য প্রস্তুত হওয়ার সময়।’
অভিজ্ঞ ডিফেন্ডার তারেক কাজী চোটের কারণে স্কোয়াডে না থাকার প্রভাব রক্ষণে পড়েছে। তপু বর্মন, বিশ্বনাথ ঘোষরা সেরাটা দিতে পারেননি। তবে বাংলাদেশ কোচের দৃষ্টিতে তারেকের না থাকা নয়, দুদলের মানের ফারাকটাই এমন বড় হারের কারণ।
‘আমি ডিফেন্ডারদের নিয়ে খুশি। জটিল পরিস্থিতিতে তারা নিজেদের কাজ খুব ভালোভাবে করেছে। আমরা একটু হাই লাইন ডিফেন্ডিং করেছি, যাতে করে ফিলিস্তিনের ক্রসের জায়গা সংকুচিত করতে পারি। কিন্তু সেটা আমরা পুরো ম্যাচজুড়ে করতে পারিনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে পেরেছি। আসলে বিষয়টা আমাদের দুর্বলতার নয়, তার চেয়ে বরং ফিলিস্তিনের মানের। ছেলেদের প্রতি আমার পুরো আত্মবিশ্বাস আছে। তাদের প্রতি কোনো অভিযোগ নেই ।’
‘তারেকের অনুপস্থিতি আমার কাছে বলার মতো কোনো পয়েন্ট নয়। কেননা, শুরু থেকেই আমরা জানতাম, সে খেলতে পারবে না। ওই অনুযায়ী আমরা সবকিছু গুছিয়েছিলাম। তারেক গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়। কিন্তু স্কোয়াডে অন্য যারা আছে, তার জায়গা পূরণের সামর্থ্য তাদের আছে। আবারও বলছি, রক্ষণভাগ নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই।’