ঘরের মাঠ শেখ ফজলুল হক মণি স্টেডিয়ামে ঢাকা আবাহনী যখন লিড পায়, তখন ফেডারেশন কাপের গত আসরের ফাইনালের স্মৃতিটাই যেন অনেকের মনে উঁকি দিচ্ছিল। সেবার পিছিয়ে পড়েও রুদ্ধশ্বাস প্রতিদ্বন্দ্বিতা শেষে টাইব্রেকারে জিতে শিরোপা জেতে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। আসরটির চলতি মৌসুমেও একই গ্রুপে পড়া দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীর লড়াইয়ে আকাশী-নীলরা এগিয়ে গিয়েছিল। ইমানুয়েল সানডের জোড়া লক্ষ্যভেদে দারুণ প্রত্যাবর্তনে ২-১ গোলে জয়ের হাসিটা সাসা-কালোরাই হেসেছে।
এ জয়ের ফলে ‘বি’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে টুর্নামেন্টের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলবে মোহামেডান। মতিঝিল পাড়ার ক্লাবটি তিন ম্যাচের সবকোটি জিতে পেয়েছে ৯ পয়েন্ট। দুই জয় ও এক হারে ৬ পয়েন্ট পাওয়া ঢাকা আবাহনী হয়েছে গ্রুপ রানার্সআপ।
কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করা আট দল হল- শেখ জামাল ধানমণ্ডি, বাংলাদেশ পুলিশ, ঢাকা আবাহনী, লিমিটেড, মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব, শেখ রাসেল, রহমতগঞ্জ, বসুন্ধরা কিংস ও ফর্টিস। ‘এ’ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ হিসেবে শেষ আটে গেছে শেখ জামাল ও পুলিশ। ‘সি’ গ্রুপ থেকে বসুন্ধরা ও ফর্টিস। তৃতীয় সেরা দল হিসেবে নকআউটে খেলবে শেখ রাসেল ও রহমতগঞ্জ। ১০ দলের আসর থেকে বাদ পড়েছে চট্টগ্রাম আবাহনী ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন।
মঙ্গলবার দুপুরে গোপালগঞ্জে গড়ানো ম্যাচে খেলতে নামেননি মোহামেডানের সেরা তারকা সোলেমান দিয়াবাতে। তার অনুপস্থিতিতে সানডেকে বাড়তি দায়িত্বটা নিতেই হতো। আস্থার প্রতিদানটা দারুণভাবেই দিলেন নাইজেরিয়ান মিডফিল্ডার।
খেলার ১৬ মিনিটে সানডের দূরপাল্লার শট পোস্টের বেশ উপর দিয়ে বেরিয়ে যায়। মিনিট চারেক পর ব্রাজিলিয়ান ওয়াশিংটন সান্তোস বাঁ প্রান্ত দিয়ে আক্রমণে গেলেও প্রতিপক্ষের এক খেলোয়াড় ডি বক্সের ভেতর বল কর্নারের বিনিময়ে ক্লিয়ার করেন।
২৭ মিনিটের মাথায় সানডের দূরপাল্লার কোণাকোণি শট মাসুদ রানা মৃধার হেডে কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা করেন। দশ মিনিট পর ওয়াশিংটনের ডানপায়ের দূরপাল্লার শটে গোলরক্ষক পরাস্ত হলেও বল পোস্টের সামান্য উপর দিয়ে যায়।
ডেডলক ভাঙে ৩৯ মিনিটে, গোল পায় আবাহনী। হাসান মুরাদের ভুল পাসের সুযোগে বল পান ওয়াশিংটন। ব্রাজিলিয়ান এ ফুটবলারের পাসে বল নিয়ে বল জালে জড়ান ফরোয়ার্ড কনেলিয়া স্টুয়ার্ট। বিরতির আগমুহূর্তে যোগ করা সময়ের প্রথম মিনিটে জনাথনের ভুল পাসে বল নেন মোজাফফরফ। মোহামেডানের অধিনায়কের ডান ডানপায়ের দূরপাল্লার শট ঠেকান প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক পাপ্পু হোসেন।
দ্বিতীয়ার্ধে খোলস ছেড়ে বেরিয়ে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলতে থাকে মোহামেডান। ৫১ মিনিটে হাতেনাতে পায় ফল। প্রতিপক্ষের দুই সেন্টার ব্যাকের মাঝ দিয়ে লম্বা পাস দেন মোজাফফরফ। ডি বক্সে ডান পায়ের টোকায় বল জালে পাঠিয়ে ম্যাচে সমতা টানেন ইমানুয়েল সানডে।
চার মিনিট পর সাদা-কালো সমর্থকদের আবারো উল্লাসে মাতার উপলক্ষ এনে দেন সানডে। হাসান মুরাদের থ্রো ইনে ডি বক্সের কাছে হেড নেন আইভোরি কোস্টের মিডফিল্ডার দোসো সিদিক। তার হেডের সময় পাপ্পু বেরিয়ে আসায় পোস্ট ফাঁকা হয়ে যায়। আবাহনীর দুর্বল রক্ষণের সুযোগ নিয়ে বাঁ-পায়ের স্পর্শে বল জালে জড়াতে সানডে মোটেও ভুল করেননি।
আরও বড় ব্যবধানে হারতে পারতো আবাহনী। গোলরক্ষক পাপ্পু ৬৯ মিনিটে কিক নেয়ার সময় তা ঠিকঠাক নিতে পারেননি। তার সামনে থাকা শাহরিয়ার ইমন বাঁ-পায়ে ভলি করলেও অল্পের জন্য লক্ষ্যভেদ হয়নি।
ওয়াশিংটনের ক্রস ৭৮ মিনিটে লাফিয়ে হাত দিয়ে ঠেকান মোহামেডান গোলরক্ষক সাকিব আল হাসান। এরপর সমতায় ফেরার চেষ্টা করলেও আবাহনী হার এড়াতে পারেনি।