ছিনতাইয়ের অপরাধে এক বছর কারাভোগের পর জামিনে বের হয়ে আবারও সেই পন্থায় বেছে নেয় সাদ্দাম হোসেন সাব্বির। যিনি ছিনতাই জগতে সিটু সাব্বির ও সাগর নামে পরিচিত।
সম্প্রতি রাজধানীর বনানী ও মহাখালী থেকে ১২টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন ছিনতাই করে গত শুক্রবার ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিচ্ছিল সিটু সাব্বির। এক পর্যায়ে মদ্যপ অবস্থায় কথাকাটি হয় ফারুকের সঙ্গে। পরে নিজের কাছে থাকা ধারালো চাকু দিয়ে ফারুকের বাম পায়ের উরুতে আঘাত করেন।
গুরুতর আহত অবস্থায় ফারুক হোসেন কে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হলে রাতেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় ফারুক।
এ বিষয়ে পরিবারের করা মামলার প্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে শনিবার ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর তেজগাঁও থানাধীন পশ্চিম রাজাবাজার ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন মোল্লাবাড়ী বস্তি এলাকা থেকে হত্যাকারী মো. সাদ্দাম হোসেন সাব্বির ওরফে সিটু সাব্বির ওরফে সাগর (২৩) সহ তার দুই সহযোগি মো. রনি (২৬) ও মো. বিজয় (৩৪) গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগ। অভিযানে তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ১টি ধারালো চাকু ও ১০টি বিভিন্ন মডেলের মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
রোববার ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক।
তিনি বলেন, নিহত ফারুক হোসেন দিনমজুর করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। তার গ্রামের বাড়ি জামালপুর। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে কারওয়ান বাজার বস্তিতে একটি ঘরে ভাড়া থাকতেন ফারুক।
ডিসি আজিম বলেন, ঘটনাটি ঘটে শুক্রবার ২৪ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ১২টার দিকে। গ্রেপ্তার আসামিরা জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তেজগাঁও থানাধীন পানি ভবন সংলগ্ন ফুটপাথে পূর্ব পরিচিত রনির সাথে আড্ডা দিচ্ছিলেন। দীর্ঘদিন পর কারাগার থেকে মুক্তি হয়েই ছিনতাইয়ের মাধ্যমে ১২ টি ফোন প্রাপ্তি এবং ছিনতাইকৃত ফোন বিক্রির মাধ্যমে মোটা অংকের অর্থপ্রাপ্তির সম্ভাবনা উদযাপন করতে যেয়ে ঘটনার রাতে বার থেকে মদ কিনে পান করে মূল অভিযুক্ত সাব্বির। ভুক্তভোগী ফারুককে নিয়ে এ সময় বারের বাইরে আসে রনি ও বিজয়।
অপর অভিযুক্ত পূর্ব থেকেই বাইরে অপেক্ষমান ছিল। এ সময় বারের বাইরে উপস্থিত সহ-অভিযুক্ত এবং ভুক্তভোগীও সাব্বিরের কাছে মদ খেতে চায়। সবাই মিলে মদ খেতে যেয়ে সাব্বিরের বেশি মদ খেয়ে ফেলে। অভিযুক্তদের সাথে ফারুকের ১২ টি চোরাই মোবাইল কেনা-বেচা নিয়ে তর্কাতর্কি ও গালাগালির এক পর্যায়ে হঠাৎ নিজের কাছে থাকা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ফারুককে আঘাত করে সাব্বির। আঘাত করেই পালিয়ে যায়ে সবাই। পরে আঘাতের পর ফারুককে হাসপাতালে নিয়ে যায় বিজয়। ভুক্তভোগীর মৃত্যুর পরই হাসপাতাল ত্যাগ করে বিজয়।
ডিসি বলেন, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ভিকটিমের স্ত্রী জানান, সন্ধ্যার পর পূর্ব পরিচিত রনি ডেকে নিয়ে গিয়েছিল ফারুককে। বিস্তারিত তথ্যের জন্য রনির সন্ধানে নামে পুলিশ। পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে প্রথমেই গ্রেপ্তার হয় রনি (২৬)। রনির কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী সাব্বির ওরফে সিটু সাব্বির (২৩) কে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকা সাব্বিরের সহযোগী বিজয় (৩৪) কে গ্রেপ্তার করা হয়। সাব্বিরের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় হত্যায় ব্যবহৃত ধারালো অস্ত্রটি।
তিনি বলেন, সাদ্দাম হোসেন সাব্বির একজন চিহ্নিত অপরাধী। তেজগাঁও ও হাতিরঝিল থানায় তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, দস্যুতা, মাদক ও দস্যুতার চেষ্টার অপরাধে ৭টি মামলা রয়েছে। ফারুককে হত্যার ৩ দিন আগে সে দীর্ঘ ১ বছর পর কারাগার থেকে জামিনে মুক্তি পান।
জিজ্ঞাসাবাদে সাব্বির জানায়, জামিনে বের হয়েই রাজধানীর বনানী ও মহাখালী এলাকা থেকে ১২ টি মোবাইল ছিনতাই করে সে।
তেজগাঁও পুলিশ বলছে: অভিযুক্ত মো. রনির বিরুদ্ধে তেজগাঁও ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় অস্ত্র, মাদক, দস্যুতার চেষ্টা ও ডাকাতির চেষ্টাসহ বিভিন্ন অপরাধে ১৩ টি মামলা রয়েছে। অভিযুক্ত হৃদয় ওরফে বিজয় শেখের বিরুদ্ধে তেজগাঁও ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ১৪ টি মাদকসহ মোট ১৭ টি মামলা আছে। এসব মামলায় একজন অভিযুক্ত পলাতক। নিহত ফারুক হোসেনের নামেও তেজগাঁও ও তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় ২টি মাদক মামলা ছিল।