আশুলিয়ায় অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কালার ম্যাক্স (বিডি) লিমিটেড নামের গ্যাস লাইটার কারখানায় গত মঙ্গলবারের অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ আরও একজন নারী শ্রমিক বৃহস্পতিবার মারা গেছেন। তার নাম রকি আক্তার (১৮)। এ নিয়ে দগ্ধ ২৬ জনের দুজন মারা গেছেন বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে। প্রকাশিত খবরে আরো জানা যায়, লাইটার প্রস্তুতকারী কারখানাটির জন্য বিস্ফোরক অধিদপ্তর এবং কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের অনুমতি ছিল না। অভিযোগ রয়েছে, ওই কারখানায়ও শ্রমিকদের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই। কালার ম্যাক্স কারখানাটির জায়গায় আগে ছিল মুরগির খামার। কারখানার জমির মালিক ঢাকা-১৯ আসনের বিএনপির সাবেক সাংসদ দেওয়ান মোহাম্মদ সালাহউদ্দিনের ছোট ভাই দেওয়ান মঈনুদ্দিন। তিনিই মুরগির খামার করেছিলেন। পরে ওই জায়গা ভাড়া নিয়ে গ্যাস লাইটার কারখানা করা হয়। কারখানাটির ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন নজরুল ইসলাম। গত বছরও আশুলিয়ার চারাবাগের পলমল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড গ্যাস লাইটার ফ্যাক্টরিতে অগ্নিকাণ্ডে দগ্ধ হয়েছিলেন সাত-আটজন শ্রমিক। কারখানায় আগুন লাগা এবং অগ্নিকাণ্ডে হতাহতের ঘটনা আমাদের দেশে নতুন নয়। বরং প্রায় প্রতিবছরই কারখানায় দুর্ঘটনা ঘটছে। ভয়াবহতার বিবেচনায় একেক দুর্ঘটনা আরেকটিকে ছাড়িয়ে যায়। স্মরণকালে সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা তাজরীন ফ্যাশনস, রানা প্লাজা এবং নিমতলী দুর্ঘটনা। তাজরীনের কারখানায় গুদামে আগুন লাগার মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত। রানা প্লাজার দুর্ঘটনা ভবনের দুর্বলতার কারণে। আর নিমতলীর দুর্ঘটনা কেবল কারখানায় সীমাবদ্ধ থাকেনি। সংরক্ষিত রাসায়নিকে আগুন লেগে জনবহুল পুরান ঢাকার ঘরবাড়িতে ছড়িয়ে পড়ে এবং ওই দুর্ঘটনা ভয়াবহতম ট্র্যাজেডিতে রূপ লাভ করে। তাজরীন ফ্যাশনসে ২০১২ সালের নভেম্বরে অগ্নিকাণ্ডে মারা যান ১১৩ জন। ২০১০ সালের ৩ জুন নিমতলীতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ১২৪ জন মারা যান। একটি ভবনেই বিয়ের অনুষ্ঠানের অতিথিসহ ৪১ জন নিহত হন। ফায়ার সার্ভিসের তথ্য অনুযায়ী বিয়ের অনুষ্ঠানের রান্নার আগুন একটি ভবনের নিচতলার রাসায়নিক গুদামে লেগে তা মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে। এরকম একটি ভয়াবহ দুর্ঘটনার পরও পুরান ঢাকার আবাসিক এলাকা থেকে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও কারখানাগুলো স্থানান্তর হয়নি। তাজরীন ফ্যাশনসের কারখানায় আগুন লাগার পরপরই অনেকে বেরিয়ে আসতে পারলেও হুড়োহুড়ি করে বেরোতে গিয়ে অনেকেই আহত হন। অনেক দুর্ঘটনায় হুড়োহুড়ি করে নামতে গিয়ে পায়ের নীচে চাপা পড়ে প্রাণহানির ঘটনা ঘটে। প্রায় প্রতিটি দুর্ঘটনার পর তদন্তে জানা যায় যে, কারখানায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে যথাযথ ব্যবস্থা ছিল না। নিরাপদে বের হওয়ার জন্য পর্যাপ্ত এক্সিট পয়েন্ট থাকে না। নিয়মিত দুর্ঘটনা প্রতিরোধ মহড়া হয় না। অস্বাস্থ্যকর কাজের পরিবেশে শ্রমিকরা কাজ করেন। একের পর এক এসব দুর্ঘটনা কী সার্বিক অসচতেনতা নয়? আইন অমান্য নয়? কারখানা মালিক স্বল্পমূল্যে শ্রম নিচ্ছেন কিন্তু শ্রমিকের জীবনের প্রতি দায়বদ্ধতা চোখে পড়ে না। স্বল্পসংখ্যক কারখানা মালিক এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। আমরা জানি ব্যতিক্রম কখনো উদাহরণ নয়। ব্যক্তি ব্যবসায়ীর দায়িত্বহীনতার পাশাপাশি সমান্তরালভাবে যুগের পর যুগ ধরে চলে প্রশাসনের উদাসীনতা। সার্বিক উদাসীনতায় মৃত্যুর মিছিল আর কতদিন? শেষ হোক আগুনের এ খেলা।