এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
উপজেলা নির্বাচনে দলীয় কর্মীদের মূল্যায়ন করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন: এক জায়গায় বউকে দিলো, আরেক জায়গায় ছেলেকে দিলো, এগুলো ঠিক না। কর্মীদের মূল্যায়ন করা উচিত। সেটাই নেতাকর্মীদের বলতে চেয়েছি।
বৃহস্পতিবার (২ মে) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক থাইল্যান্ড সফর নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন: পারিবারিক ফর্মুলায় কারা পড়েন? নিজের ছেলে-মেয়ে-স্ত্রী, এই তো? হিসাব করে দেখেন কয়জন ছেলে-মেয়ে, কয়জন স্ত্রী নির্বাচনে দাঁড়িয়েছেন? এর বাইরে তো পরিবার ধরা হয় না। আমাদের কথা হচ্ছে নির্বাচন যেন প্রভাবমুক্ত হয়। মানুষ যেন স্বাধীনভাবে ভোট দিতে পারে। এটাই আমাদের লক্ষ্য।
তিনি আরও বলেন: সবকিছু নিজেরা নিয়ে নেব, আমার নেতাকর্মীদের জন্য কিছু রাখবো না, এটা হয় না। সেই কথাটাই আমি বলতে চেয়েছি। নির্বাচনে যেন প্রভাব বেশি না ফেলে। সবাই দাঁড়িয়েছে নির্বাচন করছে, এটার লক্ষ্য হলো নির্বাচনকে অর্থবহ করা।
শেখ হাসিনা বলেন: অনেকগুলো রাজনৈতিক দল নির্বাচন বর্জন করেছে। তারা বর্জন করে কেন? নির্বাচন করার মতো সক্ষমতাই নাই। পার্লামেন্ট নির্বাচন করতে হলে জাতিকে দেখাতে হবে যে, পরবর্তী নেতৃত্বে কে আসবে? প্রধানমন্ত্রী কে হবে? নেতা কে হবে? একটা নেতা দেখাতে হবে। আপনার কাছে উপযুক্ত নেতা না থাকলে তখন তো আপনাকে ছুতা খুঁজতে হয়। নির্বাচন করলাম না, বিরাট ব্যাপার দেখালাম!আমাদের দেশে সেটাই হচ্ছে।
এসময় যুক্তরাষ্ট্রে ছাত্র আন্দোলন দমনে মার্কিন পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন: অবশ্য আমাদের মনে হয় নতুন পথ নেওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আমরা যদি এখন পুলিশকে বলে দেই, আমেরিকার স্টাইলে আন্দোলন দমন করতে। আমেরিকা পুলিশ যেভাবে আন্দোলন থামায়, সেটা অনুসরণ করতে। আমার মনে হয়, আমাদের পুলিশ এখন থেকে আমেরিকান পুলিশকে অনুসরণ করতে পারে।
এসময় তিনি ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবরের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন: আমি তো ধৈর্য্য ধরতে বলেছিলাম। ধৈর্য্য ধরতে গিয়ে তাদেরকেই পিটিয়ে হত্যা করেছে। সেই সাথে হাসপাতালে আক্রমণ, গাড়ি পোড়ানো। কাজেই এখন আমাদের পুলিশ আমেরিকান পুলিশের স্টাইলে আন্দোলন দমনে ব্যবস্থাটা নিতে পারে।
থাইল্যান্ড সফরের অর্জন বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘কৃষি উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে কৃষিখাতে পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির মাধ্যমে আমরা থাইল্যান্ডের অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে খাদ্য নিরাপত্তা সুদৃঢ় করতে পারি। এজন্য থাইল্যান্ডের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করেছি। আমরা শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধির ব্যাপারে আলোচনা করি। থাইল্যান্ডকে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগেরও আহ্বান জানাই।’
থাইল্যান্ডে ছয় দিনের সরকারি সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী গত সোমবার (২৯ এপ্রিল) ব্যাংকক থেকে দেশে ফেরেন।
থাই প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিনের আমন্ত্রণে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে গত ২৪ এপ্রিল থাইল্যান্ডে পৌঁছান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা গত ২৬ এপ্রিল থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের সঙ্গে গভর্নমেন্ট হাউসে দ্বিপক্ষীয় আলোচনা করেন। দুই নেতার উপস্থিতিতে দুই দেশের মধ্যে ভিসা অব্যাহতি, জ্বালানি, পর্যটন ও শুল্কসংক্রান্ত বিষয়ে সহযোগিতা এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (এফটিএ) আলোচনার বিষয়ে পাঁচটি দ্বিপক্ষীয় নথি সই হয়।
সেখানে থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী থাভিসিনের দেওয়া আনুষ্ঠানিক মধ্যাহ্নভোজের সভায় শেখ হাসিনা তার এই সফরকে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের একটি মাইলফলক হিসেবে অভিহিত করেন।
পাশাপাশি গত ২৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুসিত প্রাসাদের অ্যামফোর্ন সাথার্ন থ্রোন হলে থাইল্যান্ডের রাজা মহা ভাজিরালংকর্ন ফ্রা ভাজিরা ক্লাওচা উয়ুয়া এবং রানি সুথিদা বজ্রসুধা বিমলা লক্ষ্মণের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
একই দিন শেখ হাসিনা ব্যাংককের জাতিসংঘ সম্মেলন কেন্দ্রের এসকাপ হলে এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের জন্য জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কমিশনের (ইউএনএসকাপ) ৮০তম অধিবেশনে ভাষণ দেন।