সারা বছর নতুন সিনেমার খবর পাওয়া না গেলেও বছরের দুই ঈদে থাকে নতুন সিনেমা মুক্তির হিড়িক! এই সময় সিনেমা মুক্তি দেয়ার ম্যারাথন দৌড়ে নামেন প্রযোজক-পরিচালকরা। আসন্ন ঈদুল ফিতরেও দেখা যাচ্ছে একই চিত্র!
মঙ্গলবার (১৯ মার্চ) আট রমজান পর্যন্ত একাধিক প্রযোজক ও নির্মাতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেল, ঈদে মুক্তির লাইনআপে থাকা সিনেমার সংখ্যা এক ডজন! অথচ এই বিরাট সংখ্যক সিনেমা মুক্তির জন্য হাতে নিয়মিত হলের সংখ্যা সব মিলিয়ে মাত্র ৬৭টি!
প্রদর্শক সমিতি বলছে, এবার ঈদে হয়তো বছর জুড়ে শ’খানেক বন্ধ সিনেমা হল চালু হতে পারে। ঈদে মুক্তির ঘোষণা দেয়া সিনেমাগুলো হচ্ছে, রাজকুমার, ওমর, কাজল রেখা, দেয়ালের দেশ, লিপস্টিক, সোনার চর, ডেডবডি, আহারে জীবন, মোনা: জ্বীন-২, পটু, মায়া দ্য লাভ, এশা মার্ডার এবং মেঘনা কন্যা। এসব সিনেমা সংশ্লিষ্টরা কম বেশি প্রচারণায় নিজেদের সিনেমাকে বেস্ট দাবি করে জানাচ্ছেন, তারা নিশ্চিত ঈদে আসবেন।
অতীত ক্যালেন্ডারে চোখ রাখলে দেখা যায়, অধিকাংশ সিনেমা রমজানের শুরুতে ঈদে আসবে বলা হলেও শেষ মুহূর্তে ছিটকে পড়ে। কারণ, ঈদে সিনেমা মুক্তি নিয়ে জোর আলোচনা তৈরি হয়। সেই আলোচনার অংশ হতে এমন ‘কৌশল’ অবলম্বন করেন অনেকেই। আবার, ঠিকমতো হল না পেয়ে অনেকে সরে যান।
ঈদে মুক্তির ভিড়ে থাকা একডজন সিনেমার মধ্যে সিনেমা হল মালিকরা কোন কোন সিনেমা চালাতে আগ্রহী সেই খবর জানার চেষ্টা করেছে চ্যানেল আই অনলাইন। তবে এবারের ঈদে ১ ডজন ছবি মুক্তির প্রতীক্ষায় থাকা নিয়ে বহু হল মালিক মজা করে বলেছেন ‘হলের চেয়ে এবার সিনেমা বেশী’!
দেশের বেশকিছু সিনেমা হল সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মুঠোফোনে আলাপ করলে অধিকাংশই জানান, তাদের আগ্রহের শীর্ষে সুপারস্টার শাকিব খানের সিনেমা ‘রাজকুমার’। যেটি আরশাদ আদনানের প্রযোজনায় পরিচালনা করেছেন ‘প্রিয়তমা’ খ্যাত পরিচালক হিমেল আশরাফ।
স্টার সিনেপ্লেক্সের টিকেটের মূল্য জনপ্রতি ৪০০/৫০০ টাকা। ঈদ উৎসবে এতো টাকা দিয়ে সিনেমা দেখে দর্শক যেন নেগেটিভ ভাইভ নিয়ে হল থেকে বের না হন এবং যে টাইপের সিনেমার হাইপ বেশি সেগুলো প্রদর্শন করাই দেশের অভিজাত থিয়েটার সিনেপ্লেক্সের সবগুলো ব্রাঞ্চের প্রধান টার্গেট। এমনটাই জানিয়েছেন সিনেপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ।
স্টার সিনেপ্লেক্সের মিডিয়া ও বিপণন বিভাগের সিনিয়র ম্যানেজার মেজবাহ আহমেদ বলেন, এবার ঈদে আমাদের ফোকাস বেশি রাজকুমার, ওমর, কাজল রেখা সিনেমাগুলোতে। দর্শকরাও জানে এই সিনেমাগুলো ঈদে আসবে। অনেক সিনেমা আছে, যা ঈদে আসবে বলে আসে না। শুনেছি ১০টির বেশি সিনেমা রিলিজ পাবে। শেষ সময়ে এতগুলো সিনেমা থাকবে না! তবে যেগুলোর হাইপ বেশি দর্শক চাইবে সেগুলো চলবে বেশি।
ঐহিত্যবাহি মধুমিতা সিনেমা হলটি ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে বন্ধ। এর কর্ণধার ও সাবেক হলমালিক সমিতির সভাপতি এবং প্রযোজক ইফতেখার নওশাদ জানান, ‘রাজকুমার’ দিয়ে হল খুলবেন।
বললেন, মধুমিতার ৫৫ বছরের ইতিহাসে সর্বাধিক আয়করা সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘প্রিয়তমা’ এগিয়ে। একই টিমের সিনেমা ‘রাজকুমার’। সুতরাং এছাড়া কোনো ওয়ে নেই। শাকিবের বেশকিছু ভক্ত আমাকে ‘রাজকুমার’ চালানোর জন্য হোয়াটসঅ্যাপে মেসেজ পাঠায়। তারা শাকিবের আমেরিকায় স্নো-ফলে দাঁড়ানো এমন কয়েকটি ছবিও দিয়েছে। আমি নিজেও তা দেখে মুগ্ধ। তাই আমি ‘রাজকুমার’ দেখাবো।
সর্বশেষ ‘মুজিব একটি জাতির রুপকার’ দিয়ে ভালো ব্যবসা করেছিল সিরাজগঞ্জের রুটস সিনেক্লাব। এর চেয়ারম্যান সামিনা ইসলাম বলেন, মুজিবের পর আর কোনো সিনেমা ব্যবসা করতে পারেনি। শুনেছি এবার ঈদে ১৩টি সিনেমা আসবে! এটা আমাদের এবং দর্শকদের জন্য অত্যন্ত দুঃখের বিষয়।
বিষয়টির ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন,“এই সিনেমাগুলো যদি ১৩ সপ্তাহে আসতো তাহলে আমরা ও দর্শকরা দুপক্ষই পজিটিভভাবে নিতাম। কিন্তু ১৩ সপ্তাহের খোরাক একসঙ্গে আসছে! বাকি সপ্তাহগুলো উপোষ থাকতে হবে? পার্সোনালি আমি ‘কাজল রেখা’ দেখতে চাই, কিন্তু দর্শক চায় ‘রাজকুমার’, এ কারণে আমাদের আগ্রহ বেশি ওখানে।”
চট্টগ্রামের সবচেয়ে বড় সিঙ্গেল স্ক্রিন সুগন্ধা-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাহাদত হোসেন বলেন, ‘রাজকুমার’ ছাড়া কোনো সিনেমার নাম শুনছি না। চট্টগ্রামে শাকিব খানের দর্শক সর্বাধিক। উনি যদি শিকারী, নবাব, প্রিয়তমা টাইপের সিনেমা দিতে পারেন আরও ২০ বছর তার চাহিদা অক্ষুণ্ণ থাকবে।
কিশোরগঞ্জের কুলিয়ার চরের ‘রাজ’ সিনেমা হলের ব্যবস্থাপক সাজু আহমেদ বলেন, যেকোনো মূল্যে আমি রাজ সিনেমা হলে ‘রাজকুমার’ চালাবো। পাশেই আরেকটি হল আছে। কিন্তু প্রযোজকের সঙ্গে আমার সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই হাই রেন্টালের বিনিময়ে হলেও আমরা ‘রাজকুমার’ প্রদর্শন করবো।
এছাড়া পরিবেশক ও বুকিং এজেন্ট সূত্র থেকে জানা গেছে, দেশের বড় বড় সিঙ্গেল স্ক্রিনগুলোর মধ্যে সাভার সেনা অডিটোরিয়াম, মনিহার (যশোর), নবীন (মানিকগঞ্জ), নন্দিতা (সিলেট), শাপলা (রংপুর), তামান্না (সৈয়দপুর), ছায়াবাণী (ময়মনসিংহ) এসব সিনেমা হলগুলোতে ‘রাজকুমার’ চালাবে।