করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিগত দুই বছর বিশ্বজুড়ে সরাসরি যে পরিমাণ অর্থনৈতিক ক্ষতি হয়েছে তার চেয়েও বেশি ক্ষতি হয়েছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। কোমলমতি শিক্ষার্থীরা যে কেবল লেখাপড়ায় পিছিয়ে গেছে তা-ই নয়, তাদের মানসিক বিপর্যয় ঘটেছে অনেকভাবে।
দীর্ঘ সময় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ছিল একপ্রকার গৃহবন্দী। যখন তাদের বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে শিক্ষা গ্রহণের কথা ছিল, ‘সময়ের মূল্য’ রচনা লেখা কিংবা নিউটনের সূত্র শেখার কথা ছিল, তখন অনেকে মোবাইল ফোন হাতে শিক্ষার চেয়ে অশিক্ষার দিকেই বেশি এগিয়ে গেছে। এ ক্ষতি কোমল তি শিক্ষার্থীদের বোধগম্য নয়। অভিভাবকরা নিশ্চয়ই তা বুঝতে পারছেন।
এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে হলে মা-বাবা কিংবা অভিভাবক, সর্বোপরি শিক্ষকগণের অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। শিক্ষা যদি জাতির মেরুদণ্ড হয় আর শিক্ষক যদি মানুষ তৈরির কারিগর হয়ে থাকেন, তবে শিক্ষাকে অদক্ষ কারিগরের হাতে ছেড়ে দিলে জাতির ধ্বংস হতে সময়ের অপেক্ষা মাত্র।
২০২৩ সাল থেকে শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। যেমন-

*সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সপ্তাহে দুইদিন ছুটি থাকবে।
*পিইসি এবং জেএসসি পরীক্ষা নেওয়া হবে না।
*প্রাক প্রাথমিকে কোন বই থাকবে না, থাকবে শিক্ষকের সহযোগিতা।
*তৃতীয় শ্রেণি পর্যন্ত কোন পরীক্ষা নেওয়া হবে না।
*৪র্থ শ্রেণি থেকে ১০ম শ্রেণি পর্যন্ত ৪০ নম্বরের মূল্যায়ন হবে বিদ্যালয়ের শিক্ষক কতৃক।
*Hsc’র আগে বিজ্ঞান, ব্যবসায় এবং মানবিক এর কোনো বিভাজন থাকবে না।
*৯ম-১০ম শ্রেণির পরিবর্তে কেবল ১০ম শ্রেণির সিলেবাসের ভিত্তিতে Ssc পরীক্ষা হবে।
*২০২৩ সালের শিক্ষাপদ্ধতি পরিবর্তনের ধারায় সৃজনশীল পদ্ধতি থাকছে না।
*পাঠ্যবইয়ে বিষয়ভিত্তিক পরিবর্তন আনার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
যুগে যুগে শিক্ষা ব্যবস্থা পরিবর্ধন, পরিমার্জন, পরিবর্তন হয়ে আসছে। যা সময়ের সাথে ধাপে ধাপে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা মানিয়ে নিতে সক্ষম হয়, যদি শিক্ষক হন যুগোপযোগী। যেমন নব্বই এর দশক পর্যন্ত ছিল না গ্রেডিং পদ্ধতি। তখন মা -বাবা-শিক্ষকগণ মেধাবী শিক্ষার্থীদের রেজাল্ট ফার্স্ট ডিভিশন, লেটার মার্ক, স্টার মার্ক নিয়ে গর্বিত হতেন।
পরিবর্তনের ধারাবাহিকতায় পদ্ধতি যা-ই হোক, প্রতিটা পিছিয়ে পড়া এবং মেধাবী উভয় শিক্ষার্থীর প্রতি যত্নশীল হতে হবে। শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বাসপূর্ণ, আনন্দে ভরপুর পরিবেশে শিক্ষাদান করা অতীব জরুরি। স্কুলের শিক্ষকগণ ছাত্রছাত্রীদের প্রতি যতটা স্নেহপ্রবণ সেই তুলনায় মাদ্রাসার শিক্ষকগণ ততটাই কঠোর। বিষয়টির প্রতি সরকারী নির্দেশনা এবং অভিভাবকদের সচেতনতার প্রয়োজন। এর অর্থ ধর্মবিমুখতা নয়। বরং এই যে পাঠ্যভিত্তিক বিষয়সমূহ থেকে ধর্মীয় বই বাদ দেয়া হচ্ছে , তাতে সুফল বয়ে আনার সম্ভবনা নেই। সকল ধর্মের ধর্মীয় বই পাঠ্য বইয়ের অন্তর্ভুক্ত থাকা আবশ্যক। সবচাইতে বড় কথা শিশু-কিশোরদের নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সংস্কৃতিমনা করে গড়ে তুলতে হবে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বইয়ের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করতে হবে। কিছু কথা শিক্ষার্থীর অন্তর্দৃষ্টি প্রসারিত করে যেমন রাজউক কলেজ এর কথা- ‘মানুষ হওয়ার জন্য শিক্ষা’, বি সি আই কলেজের মূল কথা- ‘আগে ভালো মানুষ হওয়া, পরে ভালো ছাত্র’, ঢাকা স্কুলের- ‘শিশুর সাথে হাঁ বলি’।
শিশুদের বোঝাতে হবে, শিখাতে হবে “আমরা সবাই রাজা আমাদের এই রাজার রাজত্বে, নইলে মোরা রাজার সনে মিলব কী শর্তে”!
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)