চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

ই-কমার্স: ক্রেতার সঙ্গে সরাসরি ‘সম্পর্ক’ তৈরিতে উদ্যোক্তাদের আগ্রহ বেড়েছে

ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের সরাসরি ক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ তৈরির ক্ষেত্রে আগ্রহ বেড়েছে। এদিক থেকে তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আয়োজিত উদ্যোক্তা মেলাকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। ঈদ-পূজা ছাড়াও পহেলা বৈশাখ-পৌষ-বসন্তের মতো উপলক্ষগুলোকে সামনে রেখে বিভিন্ন উদ্যোক্তা মেলায় অংশ নিচ্ছেন তারা।

এসব মেলায় অংশ নেওয়া উদ্যোক্তারা বলছেন: আগে অনলাইনে যে আমার ক্রেতা ছিলেন, মেলায় অংশ নেওয়াতে তাদের সঙ্গেও দেখা হচ্ছে। সম্পর্কটা আগের থেকে ভালো হচ্ছে, আস্থার জায়গা তৈরি হচ্ছে। আবার মেলায় আসার কারণ নতুন ক্রেতা তৈরি হচ্ছে। আগে অনলাইনে যে শুধু ছবি দেখে অনলাইনে পণ্য কিনতো, সে এখন মেলায় আসছে; পণ্য দেখে যাচ্ছে, পরে অনলাইনে অর্ডার করে পণ্য সংগ্রহ করছে।

Bkash July

ই-কমার্স বিজনেসের ক্ষেত্রে সঠিক সময়ে পণ্যের ডেলিভারি এবং প্রকৃত পণ্যটি ক্রেতার হাতে পৌঁছে দেওয়াটাকে গুরুত্বপূর্ণ বলছেন উদ্যোক্তারা।

এ প্রসঙ্গে পিঞ্জরা বুটিকসের স্বত্বাধিকারী ফারহানা আহমেদ দুহিতা জানান: আমরা চেষ্টা করি সিজনে সিজনে ক্রেতাদের জন্য আমাদের পণ্যের পসরা সাজিয়ে বিভিন্ন চমক দিতে। অনলাইনে যেহেতু আমাদের বিজনেস তারপরও মেলাতে যাওয়ার কারণ হচ্ছে অফলাইনেও যেন ক্রেতাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ তৈরি হয়। অনলাইনের অনেক কাস্টমার মেলাতে আসে। যারা এতোদিন ধরে অনলাইন থেকে প্রেডাক্ট নিচ্ছে তারা হাতে এসেও নিতে পারে। আবার একটা নিবিড় যোগাযোগ  সৃষ্টি হয়। সেজন্যই এই মেলাগুলোতে আমাদের অংশগ্রহণ করা।

Reneta June

অনলাইনের ক্রেতাদের মেলায় আনার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখেন উদ্যোক্তারা বলে জানান তিনি। বলেন: মেলাগুলো থেকে আমরা ক্রেতাদের বিভিন্ন ধরনের অফার দিয়ে থাকি। যেমন- ফ্রি ডেলিভারি, ডিসকাউন্ট, কুপন-গিফটের ব্যবস্থাও করে থাকি।  তাহলে ক্রেতারা মেলায় আসতে আকৃষ্ট হয়। আবার অনেক ক্রেতাই আছে যারা বুকিং দিয়ে যাচ্ছে, ঈদের জন্য চাচ্ছে। মেলাতে এতো বেশি প্রডাক্ট আনা সম্ভবও না। আমরা ছোট ছোট স্যাম্পল আনার চেষ্টা করি, যাতে তারা টেস্ট করে আরো বড় পরিসরে অর্ডার করতে পারে।

মেলাতে উদ্যোক্তাদের বেচা-বিক্রি নিয়েও কথা হয় তার সঙ্গে। বলেন: যদি চিন্তা করা হয় আমি শুধু লাভের জন্য মেলায় যাবো, সেটা কেউই পুরোপুরি তুলে নিতে পারে না। মেলা আসলে আমাদের প্রোডাক্টটা পরিচিত করানো, আমরা বিজ্ঞাপন করি বিজ্ঞাপনটাও একটা ইনভেস্টমেন্ট, মেলাটাকেও এ ধরনের ইনভেস্টমেন্ট বলা চলে।

বিগত দিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে দুহিতা জানান: বিগত দিনের অভিজ্ঞতা থেকে আমি বলতে পারি- মেলা থেকে আমি অনেক অপরিচিত ক্রেতা পেয়েছি। এটাও মেলা থেকে আমাদের একটা বেনিফিট।

ছবি: আদনান দেলোয়ার

ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের নিয়ে বিভিন্ন সময় মেলার আয়োজন করা লিওনা আনোয়ার জানাচ্ছিলেন এ ধরনের মেলা আয়োজনের অভিজ্ঞতা। বলেন: আমরা প্রতি দুই মাসে একটা করে মেলা করি। ঈদকে টার্গেট করে এবার আমরা বাসন্তী মেলা করছি। ঈদে টেইলারিংটা কমানোর জন্য অনেকে আগে কেনাকাটা করে টেইলারিংয়ের কাজটা সেরে রাখার চেষ্টা করে। আমরা সেই সুবিধাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছি।

উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে কেমন সাড়া পাওয়া যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন: উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পাচ্ছি। এবারের মেলায় মূলত ৬৮টা স্টল থাকার কথা ছিল। অতিরিক্ত চাহিদা থাকার কারণে আমরা ৯২ জন উদ্যোক্তাকে ৭২টি স্টল দিয়েছি।

ক্রেতা আকৃষ্ট করার জন্য সোসাইটির বিভিন্ন পর্যায়ের ইনফ্লুয়েন্সার কিংবা সেলিব্রেটিদের মেলায় আমন্ত্রণ জানানোর কথা জানান লিওনা আনোয়ার। এই সকল ইনফ্লুয়েন্সারের কারণে যদি ১০০ লোক মেলায় আসে আর ১০ দশ জন প্রোডাক্ট ক্রয় করে তাহলে উদ্যোক্তারা লাভবান হয় বলে মন্তব্য তার।

ব্যক্তি উদ্যোক্তাদের পাশাপাশি মেলাগুলোতে অংশ নিচ্ছে বিভিন্ন সংগঠনও। তারা তাদের প্রান্তিক পর্যায়ের লোকবল ব্যবহার করে প্রস্তুতকৃত দেশিয় বিভিন্ন পণ্যের পসরা সাজিয়ে বসছে মেলাগুলোতে।

তেমনই একটি মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশন। সংগঠনটি কাজ করে গ্রামাঞ্চলের অসহায়, ডিভোর্সি ও প্রতিবন্ধী নারীদের নিয়ে। এ সঙ্গে মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রেসিডেন্ট নার্গিস সুলতানা বলেন: ২০২০ সালে যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে আমরা মোট নয়টি শাখায় কাজ করছি। যার মধ্যে একটি শাখা হচ্ছে ‘উন্নয়নে নারী’। গ্রাম অঞ্চলের অসহায়-হতদরিদ্র, ডিভোর্সি কিংবা প্রতিবন্ধী নারীরা রয়েছেন তাদেরকে দিয়ে আমরা কাজগুলো (ক্রাফ্ট) করাচ্ছি। আমরা চাচ্ছি এখান থেকে উপার্জিত অর্থে আমাদের মা-বোনরা যেন তাদের পরিবারের অর্থনীতিতে কিছুটা ভূমিকা রাখতে পারে। তারা যেন তাদের বাড়তি ইনকাম দিয়ে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার ব্যবস্থা করতে পারে।

ছবি: আদনান দেলোয়ার

তিনি আরও বলেন: আমরা তাদের তৈরি পণ্যগুলো আমরা ঢাকা এবং দেশের বাইরে সেল করছি। এই সেলের একটি অংশ আমরা ওই মা বোনদের জন্য দিচ্ছি, আর বাকি অংশ প্রতি শুক্রবার অসহায় পথশিশুদের জন্য খাবারের আয়োজন করছি। আমাদের মা-বোনরা যেন স্বাবলম্বী হয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে সেজন্য আমাদের এ উদ্যোগ নেওয়া।

প্রতি শুক্রবার রাজধানীর মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যানে মঙ্গল আলোয় ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে ৪০০ থেকে ৫০০ অসহায় মানুষ ও পথশিশুদের জন্য একবেলা খাবারের আয়োজন করা হয় বলে জানান নার্গিস সুলতানা।

ই-কমার্স বিজনেস প্লাটফর্ম সুহাসিনী’র স্বত্বাধিকারী রুমানা আক্তার মনে করেন মেলায় অংশ নেওয়ার কারণে ক্রেতাদের কাছে উদ্যোক্তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে। কেননা, অনলাইনে প্রোডাক্ট পারসেজ করা একজন ক্রেতা যখন মেলায় আসছেন তখন তিনি তার পছন্দের পণ্য সরাসরি দেখেশুনে ক্রয় করতে পারছেন। ভালো মন্দের পার্থক্য বুঝতে পারছেন।

ই-কমার্স বিজনেসে বিশ্বাসের জায়গা তৈরিটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করে বলে মন্তব্য রুমানার। তার বক্তব্য: কোন উদ্যোক্তা যদি তার পণ্য সঠিক সময়ে চাহিদা অনুযায়ী পণ্য পৌঁছে দিতে পারে তাহলে তার ব্যবসা থেমে থাকার কোন কারণ নেই।

অনলাইনে একটি পণ্য অর্ডার করে সেটির বিপরীতে অন্য একটির পণ্য ধরিয়ে দেওয়ার নজির বহু। এই সঙ্কট দূর করা গেলে আগামি দিনে ই-কমার্স বাংলাদেশে ভালো একটা জায়গায় পৌঁছাবে বলে মনে করছেন বিভিন্ন সময় মেলায় অংশ নেওয়া উদ্যোক্তারা।

ছবি: আদনান দেলোয়ার

প্রসেস ফুড প্রতিষ্ঠানগুলোও অংশ নেয় উদ্যোক্তা আয়োজনে। অনলাইনের বিজনেস চালিয়ে যাবার পাশাপশি মেলায় আসার কারণে গ্রাহক পর্যায়ে গ্রহণযোগ্যতা সৃষ্টিতে বড় সহায়ক বলে মনে করা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে।

এ প্রসঙ্গে সেবা ফুডসের ব্র্যান্ড কমিউনিকেশন এবং মার্কেট ডিপার্টমেন্টের ম্যানেজার শারমিন জানান: কৃষকদের উৎপাদিত ফসলগুলো প্রসেস ফুড এর মাধ্যমে বাজারজাত করার চেষ্টা করছি আমরা। আমাদের পণ্যগুলো ম্যাক্সিমাম আমাদের নিজস্ব খামারের। যেমন আম, লিচু’র মতো ফল গুলোর নিজস্ব বাগান রয়েছে। সরিষার ক্ষেত রয়েছে। গাজীপুরে আমাদের গরুর ফার্ম রয়েছে। সেখানে বিভিন্ন দুগ্ধজাত পণ্যগুলো তৈরি হয়।

Labaid
BSH
Bellow Post-Green View