চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এভাবে আর কত প্রাণ অনিয়মের বলি হবে

ঢাকার গুলিস্তানে নটর ডেম কলেজের এক ছাত্র ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের একটি ময়লার গাড়ির নিচে চাপা পড়ে নিহত হয়। এসময় নাঈম কলেজে যাচ্ছিল। বাসা থেকে কলেজের উদ্দেশে রওনা দিয়েছিল দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাঈম হাসান। মাত্র ১৭ বছরে একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যতের মৃত্যু হলো বড় একটি অনিয়মের কারণে। কারণ জানা যায় ঐ গাড়িটি চালাচ্ছিলেন একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মী। অথচ চালানোর কথা ছিল কর্পোরেশনের নিয়োগকৃত চালকের। এর মাত্র ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানে ঢাকা উত্তর সিটির বর্জ্য অপসারণের গাড়ির ধাক্কায় আহসান কবির খান নামের একজন গণমাধ্যমকর্মী নিহত হয়েছেন।

ঢাকা সিটির ঘটনায় জানা গেছে, ময়লার গাড়িটিতে কর্পোরেশন নিয়োগ করা কোনো ভারী যানবাহনের চালক ছিলেন না। তার বদলে গাড়িটি চালাচ্ছিল হারুন অর রশিদ নামের একজন পরিচ্ছন্নতাকর্মী। ঘটনার পর পুলিশ রাসেল নামের অন্য এক শ্রমিককে আটক করেছে। রাসেল সিটি করপোরেশনের স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে নিয়োগকৃত কর্মী নন। হারুন অর রশিদ ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গেছেন।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ময়লার গাড়ি চাপায় সহপাঠী নাঈম হাসানের মৃত্যুতে বৃহস্পতিবার সকালে থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো গুলিস্তানসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছে নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীরা। নটর ডেমের শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করে আরও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্ররাও রাস্তায় নেমেছে।এসময় তারা স্লোগান ও প্ল্যাকার্ডে প্রকৃত আসামির গ্রেপ্তার ও দ্রুত বিচার দাবি করে।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- মানুষসহ সড়কের সব প্রাণীর নিরাপত্তা দিতে হবে, ২০১৮ সালের নিরাপদ সড়ক আইন বাস্তবায়ন করতে হবে এবং নাঈমের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বলছে: ২০১৮ সালে সড়ক আইন বাস্তবায়ন হলে এমন ঘটনা ঘটত না। তবে এই আন্দোলন শুধু নটর ডেম কলেজের শিক্ষার্থীদের। এর সঙ্গে বাসে হাফ ভাড়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তাদের বক্তব্য এই ঘটনায় সিটি কর্পোরেশনের গাফিলতি রয়েছে। একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের গাড়ি লাইসেন্স ছাড়া অন্য কেউ চালাবে কেন? সেসময় প্রশাসনের কেউ তাদের আন্দোলনে দুঃখপ্রকাশ করতে আসেনি বলে দাবি করে শিক্ষার্থীরা বলেন: শুধু একটা তদন্ত ছাড়া এই ঘটনার কোনো পদক্ষেপই প্রশাসন গ্রহণ করেনি।

এই বিষয়টিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমরা বলতে চাই, এ ধরণের ঘটনাগুলোতে অতীতে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হওয়াতে দেশের ভবিষ্যত তরুণদের তাজা প্রাণ বিসর্জন দিতে হয়। এমনিতে সরকারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের দুর্নীতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ পাচ্ছে নানা ধরণের অনিয়ম। কোন একটি প্রতিষ্ঠানও নেই দুর্নীতিসহ একাধিক অপকর্মের মধ্য দিয়ে না যাচ্ছে। সিটি কর্পোরেশনের ময়লার গাড়িটি একজন পরিচ্ছনন্নতা কর্মী চালাচ্ছিল এবং তিনি নিয়োগ প্রাপ্তও নন। এত বড় অনিয়মের কারণে একটি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। এর দায় সিটি কর্পোরেশনকে নিতে হবে। এর একদিন পরই আবার আরেক সিটি কর্পোরেশনের গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আমরা মনে করি, দ্রুত তদন্তের মাধ্যমে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করে এই ধরণের প্রবণতাকে সমূলে উৎপাটিত করতে হবে। নতুবা ছোট একটি অগ্নিঝলক থেকে আগ্নেয়গিরির লাভা ধ্বংস করে দিতে পারে যেকোন জনপদ।