দীর্ঘ এক মাসের সিয়াম সাধনার পর, ঘনিয়ে আসছে পবিত্র ঈদুল ফিতর। রমজান আমাদের জীবনের জন্য ছিল আলোকবর্তিকা। রাতভর ইবাদত ছিল ফরজ নামাজ, ২০ রাকাত তারাবিহ, তিলাওয়াতে কোরআন, তাহাজ্জুদসহ নানা ইবাদতে পূর্ণ। আবার দিন কেটেছে সিয়াম সাধনা, দান সদকায়। রমজান বিদায় নিলেও রমজানের ইতিবাচক দিকগুলো ত্যাগ করা একজন উত্তম মুমিনের জন্য উচিত হবে না।
প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তোমরা সাধ্যানুযায়ী আমল কর। কেননা আল্লাহ তাআলা তোমাদের কোন আমলকে বন্ধ করেন না, যতক্ষণ না তোমরা নিজেরাই তা বন্ধ কর। কেননা আল্লাহ তাআলার নিকট ঐ আমল অধিক পছন্দনীয় যা নিয়মিত করা হয়ে থাকে, যদিও তা পরিমাণে অল্প হয়। সুনানে আবু দাউদ, ১৩৬৮
নামাজে নিয়মিত থাকা:
সারাবছর মসজিদে না আসা অনেকেই রমজানে মসজিদমুখী হয়। এটি ভালো একটি দিক। যেকোন উত্তমের সূচনাকে ইতিবাচকভাবেই গ্রহণ করা উচিত। তবে নামাজের প্রতি এই আন্তরিকতা যেন রমজানের সাথে-সাথে শেষ হয়ে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখা অতীব জরুরি।
অবশ্য একজন সত্যিকার মুসলিম তার পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিষয়ে সচেতন হবে এবং জামাতের সাথেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করবে। যা একজন মুসলিমের প্রথম পরিচয়। হযরত আবূ দারদা রা. বলেন: যার নামায নেই, তার ঈমান-ই নেই। অর্থাৎ ঈমানের পূর্ণতা নেই।
রোজার কাজা ও কাফফারা আদায়:
আল্লাহ তাআলা বলেন: কাজেই তোমাদের মধ্যে যে এ মাস পাবে, সে যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে। তবে তোমাদের কেউ অসুস্থ থাকলে বা সফরে থাকলে অন্য দিনগুলোতে এ সংখ্যা পূরণ করবে। সুরা বাকারা ২/১৮৫
রোগী, মুসাফির, হায়েজ ও নেফাস অবস্থায় থাকা নারীর জন্য রোজা ছাড়ার অনুমতি আছে। তেমনি নিজের অথবা সন্তানের ক্ষতির আশঙ্কা থাকলে মুসলিম অভিজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারীদেরও রোজা ছাড়ার শরয়ী অনুমতি আছে। এক্ষেত্রে পরবর্তী সময়ে প্রতি রোজার বিপরীতে সমসংখ্যক রোজার কাজা আদায় করাই যথেষ্ট হবে। রমজানে ছুটে যাওয়া রোজাগুলোর কাজা আদায়ের সবচেয়ে উপযোগী সময় হলো রমজান পরবর্তী শাওয়াল মাস। দেরিতে আদায় জায়েজ, কিন্তু দ্রুত আদায় করা উত্তম। প্রয়োজনীয় সময় পেয়েও তা আদায় না করলে এবং এমতাবস্থায় মৃত্যু হলে রোজা ছেড়ে দেওয়ার জন্য গুনাহগার হয়ে মৃত্যুবরণ করতে হবে।
কিন্তু যদি কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে পানাহার বা স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে একটি রোজাও ছাড়েন সেক্ষেত্রে কাজা ও কাফফারা উভয়ই আদায় করতে হয়। রোজার কাফফারা হলো বিরতিহীনভাবে ৬০টি রোজা রাখা কিংবা ৬০ জন মিসকিনকে দু’বেলা পেটভরা খাদ্য দেওয়া। ৬০ রোজার মাঝে বিরতি দিলে পুনরায় শুরু থেকে ৬০টি রোজা আদায় করতে হবে।
শাওয়াল মাসের রোজা:
রমজান পরবর্তী শাওয়াল মাসে ছয়টি রোজা পালন করা মুস্তাহাব। শাওয়াল মাসের রোজার ব্যাপারে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উৎসাহিত করেছেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: যে ব্যক্তি রমজানের রোজা রাখল, অতঃপর শাওয়ালের ছয়টি রোজা রাখল, সে যেন সারা বছরই রোজা রাখল। মুসলিম: ২/৮২২
এই ৬টি রোজা গুরুত্ব সহকারে আদায় করা উচিত। পাশাপাশি প্রতি চান্দ্রমাসে তিন দিন রোজা রাখা মুস্তাহাব। দিনগুলো হলো আইয়ামুল বিজ তথা প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫তম দিন।
অন্যান্য ভালো কাজগুলো জারি রাখা:
অন্যমাসে ফজরে জাগতে না পারা সেই মানুষটিও রমজানে ফজরের অন্তত ৩০-৪০ মিনিট আগে ঘুম থেকে উঠেছে সাহরি গ্রহণের জন্য। রমজান শেষে এই অভ্যাস ধরে রেখে নিয়মিত তাহাজ্জুদ ও ফজরে অভ্যস্ত হওয়া জরুরি। এতে বান্দা আল্লাহর নিকটবর্তী হবে।
কোরআন তিলাওয়াত করা ও তিলাওয়াত শোনার যে ধারা রমজানে শুরু হয়, তা বছরের বাকি সময়ে ধরে রাখতে হবে, অন্তত প্রত্যহ অল্প কোরআন তিলাওয়াত ও কোরআন অনুধাবনের চেষ্টা চালাতে হবে। রমজানে যেভাবে দান সদাকাহ করা হয় সেভাবে বাকি বছরও মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। এভাবে প্রতিটি ভালো অভ্যাস ধরে রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
একটি সুন্দর গোছালো জীবনের জন্য প্রয়োজন প্রশিক্ষণের এবং প্রশিক্ষণ পরবর্তী প্রশিক্ষণ অনুসারে চলার অনুশীলন ও জরুরি। রমজান আমাদের কাছে প্রশিক্ষণের মাস হয়ে এসেছিল, আমরা ভালো কাজের প্রশিক্ষণ নিয়েছি। এখন সময় সেই প্রশিক্ষণ মোতাবেক বাকি সময়টুকু অতিবাহিত করা। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুক, আমিন।