চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ভয়ংকর হয়ে ওঠা ডেঙ্গুর চিকিৎসায় যে পরামর্শ দিলেন বিশেষজ্ঞরা

একদিনে শনাক্ত ৬৭ ডেঙ্গু রোগী

মৌসুম শুরুর আগেই হঠাৎ ভয়ংকর হয়ে ওঠা ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসায় প্লাটিলেটের চেয়েও দরকারী তরল খাবার জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। বিশেষজ্ঞরা কমলা, ডালিম, ডাবের পানি, লেবুর শরবতসহ বিভিন্ন ফলের জুস পানের পরামর্শ দিয়েছেন। পাশাপাশি তৈলাক্ত, ভাজা ও মসলা জাতীয় খাবার এড়িয়ে চলতে বলেছেন।এছাড়া এডিস মশার জন্মস্থান বিষয়ে সকলকে সচেতন থাকার কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বর্ষা মৌসুম সামনে রেখে ডেঙ্গু প্রতিরোধে প্রস্তুতি শুরু করেছে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন।

গত ২৪ ঘণ্টায় ৬৭ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এদের মধ্যে ঢাকায় ৫৮ জন ও ঢাকার বাইরে নয়জন।রোববার ২৮ মে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুম থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বলা হয়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে মোট ২০৯ জন ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাধীন আছেন। ঢাকার ৫৩টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে বর্তমানে ১৮০ জন এবং অন্যান্য বিভাগে ২৯ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রয়েছেন।

চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে সারাদেশে এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৭৭১ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকায় ১ হাজার ১৭৭ জন এবং ঢাকার বাইরে ৫৯৪ জন।

অন্যদিকে চিকিৎসা শেষে হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ১ হাজার ৫৪৯ জন। এর মধ্যে ঢাকায় ৯৮৭ ও ঢাকার বাইরে বিভিন্ন স্থানে ৫৬২ জন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন।

২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গু শনাক্ত হওয়ার পর থেকে বছরের প্রথম ৫ মাসে এতো মৃত্যু এবং হাসপাতালে এতোসংখ্যক রোগী আগে দেখা যায়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে ডেঙ্গুর ধরণ বদলেছে। তাতে একদিকে ডেঙ্গু যেমন ভয়ংকর হয়ে উঠছে, তেমনি ‘শহুরে রোগ’ হিসেবে পরিচিত ডেঙ্গু শহর ছাড়িয়ে ঝুঁকি বাড়িয়েছে দেশজুড়ে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের লাইন ডিরেক্টর (সিডিসি) অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ডেঙ্গু হলেই আমরা প্লাটিলেটের জন্য উদ্বিগ্ন হয়ে যাই। কিন্তু ডেঙ্গু আসলে প্লাটিলেট ডিজঅর্ডার নয়, এক্ষেত্রে ঝুঁকির কারণ হতে পারে প্লাজমা লিকেজ। এককথায় বলতে গেলে ডেঙ্গুতে প্লাটিলেটের কোনও ভূমিকা নেই। প্লাটিলেটের চেয়ে ডেঙ্গু রোগীর জন্য বেশি দরকার তরল খাবার।

তিনি বলেন, ডেঙ্গুর বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। ডেঙ্গুতে শট হতে পারে, ডেঙ্গুতে হেমারেজ হতে পারে। এমনকি অর্গান ইনভলমেন্টও হতে পারে, যা শরীরের বিভিন্ন অর্গানকে ইনভলব করে ফেলে। এটি হলো সবচেয়ে মারাত্মক পর্যায়। এই অবস্থায় আসা রোগীদের বাঁচানো অনেক কঠিন।

বর্ষা মৌসুম শুরুর আগেই ডেঙ্গুর বিপজ্জনক অবস্থার বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমান ডেঙ্গু বিস্তারকারী এডিস মশার লার্ভা এখন জমে থাকছে নির্মাণাধীন ভবন, ওয়াসার মিটার বক্সসহ বিভিন্ন জায়গায়। আর এসব কারণে ডেঙ্গু হয়ে উঠেছে সারা বছরের রোগ। এটা কেবল ঢাকাকেন্দ্রিক নয়, পুরো দেশের ঝুঁকির কারণ।

অধ্যাপক ডা. রোবেদ আমিন বলেন, ‘ঢাকা শহরে অপরিকল্পিত নগরী গড়ে উঠছে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে। আমাদের উচিত সচেতনতায় সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া।’

ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এবার ডিসেম্বর পর্যন্ত মশা নিধন কার্যক্রম চালানো হবে। ফগারমেশিনসহ অন্যান্য ওষুধও অগ্রিম কেনা হবে।

দেশে গত কিছুদিন ধরে আবারও ডেঙ্গুর সংক্রমণ বাড়ছে বলে আগেই জানিয়েছিলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গত ৭ মে টিকাদান সপ্তাহের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, দেশে আবারও ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ছে, ডেঙ্গুর সংক্রমণ থেকে মুক্ত থাকতে হলে সবাইকে সতর্ক হতে হবে।

সেসময় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ডেঙ্গু থেকে বাঁচতে মশার কামড় থেকে মুক্ত থাকতে হবে। আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। বাসা-বাড়ির ছাদ, আঙিনায় যেন পানি জমে না থাকে সেই ব্যাপারে খেয়াল রাখতে হবে।

চলতি বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে এ পর্যন্ত ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।