কুমিল্লার দাউদকান্দিতে ক্লাস চলাকালে অসুস্থ হয়ে হাবিবা আক্তার (১২) নামের এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার ৬ জুন দুপুরে উপজেলার গৌরীপুর সুবল-আফতাব উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।
মারা যাওয়া হাবিবা আক্তার ওই স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির ‘খ’ শাখার ছাত্রী। হাবিবা কুমিল্লার তিতাস উপজেলার চান নাগেরচর গ্রামের জিয়াউল হকের মেয়ে।
এদিকে শ্রেণিকক্ষে হাবিবার মৃত্যুর পর ‘হিট স্ট্রোকে’ মারা গেছে বলে এলাকায় খবর ছড়িয়ে পড়ে। কয়েকজন অভিভাবক ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, তীব্র তাপদাহের প্রভাবে ‘হিটস্ট্রোকে’ তার মৃত্যু হয়েছে। যদিও চিকিৎসকরা বলছেন, মৃত্যুর সঠিক কারণ ময়নাতদন্ত ছাড়া বলা যাচ্ছে না।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম জানান, ক্লাস চলাকালে হাবিবা হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে। একপর্যায়ে বমি করে। পরে সহপাঠী ও শিক্ষকদের সহযোগিতায় তাকে গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. ওয়াহেদুজ্জামান চিকিৎসা করেন। পরে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ঢাকা নিয়ে যাওয়ার পথে দাউদকান্দি বলদাখাল এলাকায় পৌঁছালে নাকে-মুখে রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাকে নিকটস্থ এ্যাপোলো হসপিটালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে পুনরায় গৌরীপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
দাউদকান্দি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. তৌহিদ আল হাসান জানান, হাবিবা আক্তার নামের এক স্কুলছাত্রীকে দুপুর পৌনে ১টার দিকে জরুরি বিভাগে আনা হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। দুপুর ১টা ৪০ মিনিটে পুনরায় ওই ছাত্রীকে নিয়ে হাসপাতালে আসলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ঠিক কি কারণে মৃত্যু হয়েছে ময়নাতদন্ত ছাড়া বিষয়টি সঠিক বলা যাচ্ছে না।
দাউদকান্দি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মুহাম্মদ আলমগীর ভূঞা জানান, স্কুলছাত্রীর মৃত্যুর সংবাদে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। এনিয়ে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা হয়েছে।
দাউদকান্দি উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মহিনুল হাসান বলেন, ক্লাস চলাকালে ওই ছাত্রী অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে তার মৃত্যু হয়। তার মৃত্যুর কারণ চিকিৎসকরা বলতে পারবেন।
জানতে চাইলে কুমিল্লার ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. নিসর্গ মেরাজ চৌধুরী বলেন, স্কুল ছাত্রীর মৃত্যু হিটস্ট্রোকে হয়েছে বলে সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। হাবিবার মৃত্যুর আগে প্রাথমিক যে লক্ষণ দেখা গেছে তা- হিটস্ট্রোকের রোগীদের সাথে সামঞ্জস্য নয়। স্বজনরা চিকিৎসকদের জানিয়েছেন, হাবিবা খালি পেটে ছিল। খালি পেটেই তালের শাঁস খেয়েছে। শিশু-কিশোররা যদি খালি পেটে তালের শাঁস বা লিচু জাতিয় খাবার খায়, তাহলে তাদের শরীর অনেক সময় এই খাবারগুলোকে সহজে হজম করতে পারে না। অনেক ক্ষেত্রেই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। সেই থেকে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। তবে ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া মৃত্যুর সঠিক কারণ বলা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, হিটস্ট্রোকে মৃত্যু হলে সাধারণত মুখ শুকিয়ে যায়। কিন্তু তার মুখে প্রচুর ফেনা ছিল। যেহেতু ছাত্রীটি খালি পেটে ছিল, খালি পেটেই তালের শাঁস খেয়েছে, তার ওপর প্রচণ্ড গরম সবমিলিয়ে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় তার মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে।