রাস্তায় দাঁড়িয়ে রোগীর স্বজনবেশে গাড়িতে এগিয়ে দেওয়ার সহায়তা চেয়ে গাড়ি ছিনতাই করা ৫ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. রানা (৩০), মো. বিশাল (২৩), মো. রুবেল (২২), মো. রাব্বী (২২) ও মো. নয়ন ইসলাম (২৪)।
শনিবার (২৩ ডিসেম্বর) রাজধানীর খিলগাঁও এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে ডিবি তেজগাঁও বিভাগ।
এ সময় তাদের কাছ থেকে ছিনতাই করা প্রাইভেটকার, পিকআপ ভ্যান, চারটি মোটরসাইকেল ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
রোববার (২৪ ডিসেম্বর) রাজধানীর মিন্টু রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানান ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
ঘটনার বিবরণে তিনি জানান, রাজধানীর মিরপুর এলাকার বাসিন্দা কাজল চন্দ্র মহন্ত (৩২) পেশায় একজন রেন্ট এ কারের গাড়িচালক। গত ১৪ ডিসেম্বর রাত ২টার দিকে দিনভর যাত্রী পরিবহন শেষে বাসায় ফিরছিলেন তিনি।
রাজধানীর সোনারগাঁও মোড় থেকে পান্থপথে যাওয়ার পথে এক ব্যক্তি তাকে গাড়ি থামানোর সংকেত দেন। গাড়ি থামালে একজন এগিয়ে এসে জানান, তার এক স্বজন অসুস্থ। রাতে গাড়ি পাচ্ছেন না জানিয়ে গাড়িচালক কাজলকে সাভারের হেমায়েতপুর বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেন ওই ব্যক্তি।
মানবিক দিক বিবেচনায় কাজল যেতে রাজি হলে চলে দরদাম। পরে ৯০০ টাকা ভাড়ায় তাদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে রাজি হলে উঠে পড়েন পাঁচজন।
গাড়িটি হেমায়েতপুর বাস স্ট্যান্ডের কাছাকাছি যাওয়ার পর যাত্রীবেশে থাকা ছিনতাইকারীরা চালকের গলায় ছুড়ি ও গামছা পেচিয়ে হত্যার হুমকি দেয়।
পরে চালক কাজলকে গাড়ির পেছনের সিটে নিয়ে হাত-পা বেঁধে ফেলে গাড়ির নিয়ন্ত্রণ নেয় ছিনতাইকারীরা। হাত-পা বাঁধা অবস্থায় চালক কাজলকে গাজীপুর কালিয়াকৈর রেল গেট এলাকায় ফেলে পালিয়ে যায়। সেসময় তার মোবাইল কিংবা টাকা পয়সা না নিলেও মোবাইল নম্বর নিয়ে যায় চক্রের সদস্যরা।
এরপর তার মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে গাড়ি ফিরিয়ে দেওয়ার নামে আবারও টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রের সদস্যরা।
এদিকে, এই চক্রের হাতেই ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে পণ্যবাহী পিকআপ ভ্যান হারিয়েছেন মো. দেলোয়ার। তিনি গত ১৯ ডিসেম্বর রাজধানীর পুরান ঢাকার শ্যামবাজার থেকে আদা রসুনের বস্তা নিয়ে গাজীপুর যাচ্ছিলেন। পথে আশুলিয়ার পলাশবাড়ি এলাকায় এই চক্রের কবলে পড়েন তিনি।
একটি প্রাইভেটকার দিয়ে তার গতিরোধ করে অস্ত্রের মুখে তার হাত-পা বেঁধে মালামাল ভর্তি পিকআপ ভ্যান ছিনতাই করে নিয়ে যায়। আর দেলোয়ারকে একটি পুকুরে ফেলে দেয়। যদিও নিজের চেষ্টায় মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষাপান দেলোয়ার।
ডিবি প্রধান বলেন, সড়কে দাঁড়িয়ে গাড়ি থামার সংকেত দিয়ে অসুস্থ যাত্রীর স্বজনবেশে গাড়িতে উঠে অস্ত্রের মুখে গাড়ি ছিনতাই করে এ চক্রটি। ছিনতাইকরা গাড়ি ফেরত দেওয়ার নামে আবারও টাকা আদায় করত তারা। এই মামলায় ভুক্তভোগীর কাছ থেকে গাড়ি পেরত দেওয়ার কথা বলে ৬০ হাজার টাকা আদায় করে। এরপর সেই প্রাইভেটকার ব্যবহার করে মালবাহী পিকআপ ছিনতাই করে। চক্রের সদস্যরা ছিনতাই করা পিকআপ ভ্য়ান দিয়ে বিভিন্ন স্থান থেকে মোটরসাইকেল চুরি করে। অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডিবির তেজগাঁও বিভাগ তদন্তে নেমে এইসব ছিনতাইয়ের সন্ধান পায়।
এ চক্রের সদস্যরা এক সময় মোবাইল ছিনতাই করত। এরপর তারা গাড়ি ছিনতাই শুরু করে। এক সময় এরা সবাই লেগুনা চালক ও হেলপার হিসেবে কাজ করতো ।
তিনি আরও বলেন, চক্রের প্রত্যেক সদস্যের নামে একাধিক মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। দুই ঘটনায় তাদের বিরুদ্ধে কলাবাগান ও আশুলিয়া থানায় মামলা হয়েছে।