বাংলাদেশের মানুষ করোনাভাইরাসের ভয়াবহ রূপ দেখছিল গত বছরের ৫ আগস্ট। ওইদিন দেশে সর্বোচ্চ ২৬৪ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছিল এই ভাইরাসে। তার কয়েকদিন আগে ২৮ জুলাই দেখেছিল সর্বোচ্চ ১৬ হাজার ২৩০ জন শনাক্তের রেকর্ড। ২০২০ সালের ৮ মার্চ প্রথমবার করোনাভাইরাস শনাক্তের পর ভাইরাসটির দাপট কখনো অনেক বেশি ছিল। পরে কখনো কমেছে। আবার নতুন শক্তিতে, নতুন রূপে ফিরেও এসেছে।
বর্তমানে দেশে করোনাভাইরাস অনেকটাই দুর্বল। শনাক্তের হারও খুব কম। আর এতে মৃত্যু নেই বললেই চলে। যদিও এর মধ্যে গত ২১ মে প্রায় একমাস পর এক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়। তার ৯ দিন পর গতকাল সোমবার মৃত্যু হয় আরেকজনের। আজ মঙ্গলবার আবার মৃত্যুহীন দিন। তবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছে ৩৪ জন। শনাক্তের হার মাত্র শূন্য দশমিক ৬১ শতাংশ।
সরকারি হিসাবে বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজারেরও বেশি মানুষের। তবে সরকারের দেয়া এই তথ্যের সঙ্গে একমত নন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, প্রকৃত মৃত্যুর সংখ্যা আরও অনেক বেশি। একই অবস্থান শনাক্তের সংখ্যা নিয়েও। তবে এসব পরিসংখ্যান দিয়ে করোনাভাইরাসের ভয়াবহ রূপ প্রকাশ করা যাবে না। এটা ঠিক, এখন দেশে করোনাভাইরাস নাই বললেই চলে। কিন্তু আসতে কতক্ষণ? সেই তিক্ত অভিজ্ঞতার সাক্ষী আমরা সবাই।
করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন নিয়ে নানা ঘটনার পর এখন তা খুবই সহজলভ্য। বর্তমান পরিস্থিতি এমন- যে লাখ লাখ ভ্যাকসিন থাকলেও তা নেয়ার মানুষ পাওয়া যাচ্ছে না। এর কারণ অনেকেই বিষয়টাকে হালকাভাবে দেখছেন। কিন্তু করোনাভাইরাসকে হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। এরই মধ্যে চীন, নর্থ কোরিয়া, সাউথ কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে নতুন করে ভাইরাসটির প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। চীনে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে লকডাউনের মতো কঠোর ব্যবস্থা নিতে হয়েছে।

পরিস্থিতি যখন এমন, তখন সরকার আগামী ৪ থেকে ১০ জুন পর্যন্ত দেশব্যাপী করোনার বুস্টার ডোজ সপ্তাহ পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এতে ১৮ বছর এবং তার উপরের সব মানুষকে বুস্টার ডোজ দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দ্বিতীয় ডোজ নেয়ার চার মাস পর কোনো ব্যক্তি বুস্টার ডোজ নিতে পারবে। মূলত যারা তৃতীয় ডোজ নিতে অনীহা প্রকাশ করছেন, তাদের জন্যই সরকারের এমন উদ্যোগ। চিকিৎসকরা বলছেন, বুস্টার ডোজ ছাড়া করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নেই বললেই চলে। তাই তৃতীয় ডোজ ভ্যাকসিন নিতেই হবে।
আমরা মনে করি, করোনভাইরাসের প্রকোপ কম বলে তাকে হালকাভাবে নেওয়া সুযোগ নেই। এই ভাইরাস থেকে সুরক্ষা পেতে হলে বুস্টার ডোজ নিতেই হবে।