সুদানের সেনাবাহিনী আর আধা-সামরিক বাহিনীর মধ্যকার সংঘর্ষ দেশটিকে এক অস্থির পরিস্থিতির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ইতিমধ্যে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১০০ বেসামরিক নাগরিক। আধাসামরিক বাহিনী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) এবং সৈন্যদের মধ্যে রাজধানী গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে চলছে তুমুল লড়াই।
সংঘর্ষের কারণ?
জেনারেল বুরহান ২০২১ সালের ডিসেম্বরে সুদানের বেসামরিক সরকারকে উৎখাত করে ক্ষমতাসীন হন। এরপর থেকেই দেশটিতে রাজনৈতিক তোলপাড় চলছে। সেই ধারাবাহিকতায় সুদানের রাজনৈতিক দলগুলো এর আগে সেনাবাহিনী ও আরএসএফের সাথে ক্ষমতা-ভাগাভাগির এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল। তবে এ দুটি বাহিনীর মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরেই উত্তেজনা চলছিল।
ক্ষমতার দ্বন্দ্বের সেই উত্তেজনা এখন রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে রূপ নিয়েছে। চলমান এই লড়াই শেষ পর্যন্ত সর্বাত্মক সংঘাতে রূপ নিলে সুদানে বেসামরিক শাসনে ফেরার দীর্ঘদিনের প্রচেষ্টা ব্যাহত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে অনেকেই।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান যিনি সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এবং কার্যত দেশটির রাষ্ট্রপতি এবং তার ডেপুটি এবং আরএসএফ নেতা হলেন জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
সুদান কোথায়?
উত্তর-পূর্ব আফ্রিকান দেশটির উত্তরে মিশর এবং পূর্বে ইথিওপিয়াসহ সাতটি দেশের সীমান্ত রয়েছে। লোহিত সাগরের সাথে একটি উপকূলরেখাও রয়েছে, যা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের জন্য অপরিহার্য।
কয়েক দশকের গৃহযুদ্ধের পর ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদান স্বাধীনতা লাভের আগ পর্যন্ত এটি এলাকা অনুসারে মহাদেশের বৃহত্তম দেশ ছিল।
চলমান সংঘর্ষ কেন শুরু হয়েছিল?
গত সপ্তাহে দেশজুড়ে আরএসএফ সদস্যদের পুনরায় মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী এই পদক্ষেপকে হুমকি হিসেবে দেখেছিল। আলোচনার মাধ্যমে পরিস্থিতির সমাধান হতে পারে এমন কিছু আশা করা হলেও শেষমেশ তা হয়ে উঠেনি ।
শনিবার সকালে কে প্রথম গুলি ছুড়েছিল তা নিয়ে রয়েছে বিতর্ক। উভয়পক্ষই এক অপরকে দোষারোপ করছে।
কেন বেসামরিক মানুষরা ক্ষতির স্বীকার হচ্ছে?
যদিও সংঘাতটি মূল স্থাপনাগুলোর নিয়ন্ত্রণেকে লক্ষ্য করে তবে এর বেশিরভাগই শহরাঞ্চলে ঘটছে এবং বেসামরিক লোকেরা অজান্তেই হামলার শিকার হয়েছে।
আরএসএফ এর ঘাঁটিগুলো কোথায় অবস্থিত তা ঠিক পরিষ্কার নয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে তাদের যোদ্ধারা ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় রয়েছে।
সুদানের বিমানবাহিনী রাজধানীতে বিমান হামলা চালিয়েছে। ৬ মিলিয়নেরও বেশি লোকের শহর, যার ফলে বেসামরিক হতাহতের সম্ভাবনা রয়েছে।শনিবার উভয় পক্ষের দ্বারা সম্মত হওয়া লড়াইয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বিরতি ছিল, যাতে লোকেরা নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে পারে।
আরএসএফ কারা?
আরএসএফ ২০১৩ সালে গঠিত হয়েছিল এবং এর উৎপত্তি কুখ্যাত জানজাওয়েদ মিলিশিয়া থেকে যারা দারফুরে বিদ্রোহীদের সাথে নির্মমভাবে লড়াই করেছিল।
তারপর থেকে জেনারেল দাগালো একটি শক্তিশালী বাহিনী তৈরি করেছেন যা ইয়েমেন এবং লিবিয়ায় সংঘাতে হস্তক্ষেপ করেছে। তিনি সুদানের কিছু সোনার খনি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন।
আরএসএফ এর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৯ সালের জুন মাসে ১২০ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে গণহত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
সেনাবাহিনীর বাইরে এমন শক্তিশালী দলকে দেশে অস্থিতিশীলতার কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
সামরিক বাহিনী কেন দায়ী?
২০১৯ সালে রাষ্ট্রপতি ওমর আল-বশিরকে তার প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের আহ্বান জানিয়ে বিশাল বিক্ষোভ সংগঠিত হয় এবং সেনাবাহিনী তাকে ক্ষমতা থেকে সরাতে অভ্যুত্থান পরিচালনা করে।
কিন্তু বেসামরিক লোকেরা গণতান্ত্রিক শাসনে ফিরে আসার জন্য প্রচারণা চালিয়ে যায়।
তারপরে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবরে আরেকটি অভ্যুত্থানের মাধ্যমে তা ভেঙ্গে দেওয়া হয়। আর তখন থেকেই জেনারেল বুরহান ও জেনারেল দাগালোর মধ্যেকার দ্বন্দ্ব তীব্র হয়।
বেসামরিকদের হাতে ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি চুক্তি গত ডিসেম্বরে করা হলেও চূড়ান্ত আলোচনা ব্যর্থ হয়ে।
দুইজন কি চায়?
জেনারেল দাগালো বলেছেন, ২০২১ সালের অভ্যুত্থানটি একটি ভুল ছিল এবং তিনি নিজেকে এবং আরএসএফ খার্তুম অভিজাতদের বিরুদ্ধে জনগণের পাশে থাকার চেষ্টা করেছেন। যদিও তার কিছু সমর্থন আছে তবে আধাসামরিক বাহিনীর নৃশংস রেকর্ডের কারণে এই বার্তাটি বিশ্বাস করা কঠিন বলে মনে করে অনেকেই।
এদিকে, জেনারেল বুরহান বলেন, সেনাবাহিনী কেবলমাত্র একটি নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।
তবে সন্দেহ রয়েছে যে সামরিক ব্যক্তিরা এবং তাদের সমর্থকরা উভয়েই চিন্তিত যে তাদের অবস্থান থেকে সরিয়ে দিলে তাদের সম্পদ এবং প্রভাবের কী হতে পারে।
অন্যান্য দেশ কি করতে পারে?
আশঙ্কা রয়েছে যে লড়াইটি দেশটিকে আরও বিভক্ত করতে পারে। রাজনৈতিক অস্থিরতাকে আরও খারাপ করতে পারে। কূটনীতিকরা দুই জেনারেলকে আলচনার মাধ্যমে একটি উপায় খুঁজে বের করার জন্য মরিয়া হয়ে চেষ্টা করছেন।
যুক্তরাজ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ইইউ সবাই যুদ্ধবিরতি এবং সংকট সমাধানে আলোচনার আহ্বান জানিয়েছে।