ডিবেট ফর ডেমেক্রেসির আয়োজনে প্রবাসী আয়ের গতিশীলতা বৃদ্ধিতে করণীয় শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে। শনিবার ২ সেপ্টেম্বর এটিএন বাংলার প্রধান কার্যালয়ে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।
ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান ও অভিবাবন বিশ্লেষক হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ সেমিনারে মূলপ্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ এসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজ বায়রা-এর সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাসার, সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন, দৈনিক সমকাল এর বিজনেস এডিটর জাকির হোসেন ও এটিএন বাংলার এডিশনাল চিফ তাশিক আহমেদ।
হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় এই বছর প্রবাসী আয় কমেছে ৫.৮৮ শতাংশ। আগস্টে রেমিট্যান্স প্রবাহ আরও নিচে নেমেছে। সেপ্টেম্বরেও বৈদেশিক আয় কমার শঙ্কা রয়েছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে চলতি বছর অন্যান্য বছরের তুলনায় রেমিট্যান্স কমে যেতে পারে। এর প্রধান কারণ হুন্ডি ও অর্থ পাচার। ব্যাংকিং চ্যানেলের সার্ভিস ঘাটতি, বৈধভাবে অর্থ প্রেরণের অতিরিক্ত খরচ এবং ডলারের বিনিময় হারের পার্থক্যের কারণেই প্রবাসী আয় বাড়ছে না।
তিনি বলেন, সর্বশেষ বাজেট প্রস্তাবের সময় আমরা দাবী করেছিলাম ফরেন রেমিট্যান্সের উপর প্রণোদনা ২.৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫ শতাংশে উন্নীত করা এবং ব্যাংকিং চ্যানেলে টাকা প্রেরণ করলে কোন বাড়তি খরচ না নেওয়া, অথচ তা করা হয়নি। একজন প্রবাসী কর্মী বৈধ চ্যানেলে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে অর্থ প্রেরণ করলে ১০০ টাকা পাঠালে প্রণোদনাসহ ১০২ টাকা ৫০ পয়সা পাবেন।
হাসান আহমেদ বলেন, প্রবাসী কর্মীদের বৈধ চ্যানেলে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠাতে শতকরা ৩ টাকা বেশি ব্যয় হয়। সেই হিসেবে বৈধভাবে অর্থ পাঠালে শতকরা ৫০ পয়সা কমে যায়। হুন্ডির মাধ্যমে কর্মীদের কাছ থেকে টাকা সংগ্রহ করে দেশে পাঠালে তারা শতকরা ৩/৪ টাকা বেশি পায়। এছাড়া যারা হুন্ডিতে টাকা প্রেরণ করে তারা কর্মীর কর্মস্থল থেকে অর্থ সংগ্রহ করে দেশে তার পরিবার পরিজনের কাছে বাড়ি বাড়ি গিয়ে অর্থ পৌঁছে দেয়। এতে কর্মীর কষ্ট করে দূরে গিয়ে ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণ করা লাগে না এবং কর্ম ঘণ্টাও নষ্ট হয় না। তাহলে কেন কর্মীরা কষ্ট করে লস দিয়ে বৈধ পথে অর্থ প্রেরণ করবে।
তিনি আরও উল্লেখ করেন, প্রতি বছর অর্থ প্রেরণকারী সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স যোদ্ধাকে সরকারি স্বীকৃতি প্রদান করে প্রয়োজনে পুরস্কারের ব্যবস্থা করা গেলে কর্মীরা বৈধপথে টাকা প্রেরণ করতে উৎসাহিত হবে। এই ক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশে কর্মরত কর্মীদের মধ্যে থেকে শ্রেষ্ঠ ১০/১৫ জন রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে আর্থিক পুরস্কার ঘোষণা করা যেতে পারে। সর্বোচ্চ অর্থ প্রেরণকারী এইসব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদেরকে অর্থ পুরস্কার প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের কল্যাণ ফান্ডে গচ্ছিত অর্থ থেকে দেওয়ার উদ্যোগ নিতে পারে সরকার। তাহলে রেমিট্যান্স প্রবাহের গতি আরও বাড়ানো সম্ভব হবে।
বায়রার সভাপতি মোহাম্মদ আবুল বাসার বলেন, ফরেন রেমিট্যান্সের গতিশীলতা বৃদ্ধিতে বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশ দূতাবাস, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়সহ বায়রাকে সাথে নিয়ে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত। একই সাথে আমাদের কর্মীদের বৈধ পথে অর্থ প্রেরণের সুফল সম্পর্কে অবগত করতে হবে। প্রবাসী কর্মীদের দূতাকাসের সেবা বাড়িয়ে বাংকের মাধ্যমে অর্থ প্রেরণের সময় অযথা নানা রকম ফরম পূরণ থেকে বিরত থাকতে হবে।
বায়রার সাবেক মহাসচিব মোহাম্মদ রুহুল আমিন বলেন, ব্যাংকগুলোকে তাদের সার্ভিস কর্মীদের ধোরগোড়ায় পৌঁছানোর উদ্যোগ নিতে হবে। যাতে সংশ্লিস্ট দেশের বন্ধের দিনেও কর্মীরা বৈধভাবে ব্যাংকের মাধ্যমে দেশে অর্থ প্রেরণ করতে পারবে। প্রবাসী আয়ের গতিশীলতা বৃদ্ধি শুধুমাত্র কর্মীর সদিচ্ছার উপরে নির্ভর করে না। যত সহজে কর্মী বাজারমূল্যে ডলারের বিনিময় হারে অর্থ প্রেরণ করতে পারবে, তত বেশি তারা বৈধ পথে দেশে অর্থ পাঠাবে। ভারতের মত বাংলাদেশের কর্মীরাও যাতে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে পৃথিবীর যেকোন দেশ থেকে বাংলাদেশে তার উপার্জিত অর্থ নিমিষে পাঠাতে পারে তার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারকে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা উচিত।