মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বিকেলে শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত কমিটির শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান শেষে এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার সাক্ষী হয় পুরো দেশ। এদিন সন্ধ্যায় বেশ কয়েকজন সংবাদকর্মী মারধরের শিকার হয়েছেন, যে হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন নববির্বাচিত সদস্যসহ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতি সংশ্লিষ্ট অনেকে।
বিষয়টি নিয়ে দেশব্যাপী চলছে সমালোচনা। শিল্পীদের এমন অসহিষ্ণু আচরণের নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতিসহ (বাচসাস) বিভিন্ন সংগঠন।
মঙ্গলবার রাতেই গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে দুঃখ প্রকাশ করে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনের কথা জানায় শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত সভাপতি মিশা সওদাগর ও সাধারণ সম্পাদক ডিপজল। বিবৃতিতে তারা আশ্বাস দেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে ঘটনার তদন্ত শেষ করে ব্যবস্থা নেবেন।
প্রযোজক আরশাদ আদনানকে উপদেষ্টা রেখে তদন্ত কমিটিতে ৫ জন সাংবাদিক এবং ৫ জন শিল্পীকে রাখা হয়। তবে এমন আশ্বাসের কুড়ি ঘণ্টা হতে চললেও শিল্পীদের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের তৎপরতা দেখা যায়নি বলে অভিযোগ জানিয়েছেন সাংবাদিকরা।
তদন্ত কমিটিতে থাকা ৫ জন সাংবাদিকের মধ্যে তিন জনের সাথে কথা হয় চ্যানেল আই অনলাইনের। তারা জানান, বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানে শিল্পী সমিতির কোনো ইতিবাচক উদ্যোগ এরমধ্যে তারা দেখতে পাননি।
বুধবার দুপুর আড়াইটার দিকে সাংবাদিক লিমন আহমেদ বলেন, আজ বিকেলে বসার কথা শিল্পী সমিতিতে। এখন দুপুর আড়াইটার বেশী বাজে, অথচ এ বিষয়ে কিছু জানায়নি মিশা ভাইয়েরা। কখন বসব, আদৌ বসার ইচ্ছে তাদের আছে কিনা; সেটাও পরিষ্কার না।
এসময় লিমন আহমেদ অভিযোগ করে বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় যারা হামলার শিকার হয়েছে, তাদের অনেকে হাসপাতালে ভর্তি। সমিতির পক্ষ থেকে ভুক্তভোগীদের দেখতে তো যায়নি, এমনকি খোঁজও নেয়নি। আমরা ২৪ ঘণ্টার অপেক্ষা করছি। আজ রাত ৮-৯টার মধ্যে ৫ দফা দাবি না মানলে আমরা আলোচনা করে মামলা বা অন্যান্য আন্দোলনে যাবো।
তদন্ত কমিটিতে থাকা আরেক সাংবাদিক প্রতিনিধি রাহাত সাইফুল বলেন, মঙ্গলবার সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে বিএফডিসিতে অনাকাঙ্খিত ঘটনা ঘটে। সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়। এতে করে ১০-১২ জন গণমাধ্যম কর্মী আহত হয়েছে। এমন ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও দ্রুত বিচারের দাবি জানাচ্ছি। অপরাধীদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তি দাবি ও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও আহতদের সুচিকিৎসাসহ ক্ষতিপূরণ দাবি করছি। এরই মধ্যে ১১ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আজ রাতে বৈঠক হওয়ার কথা জানতে পেরেছি। সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত আমরা আমাদের প্রতিবাদ করে যাব।
তদন্ত কমিটিতে থাকা সাংবাদিক আহমেদ তৌকীর জানান, গতকালের এমন নিন্দনীয় ঘটনার পর শিল্পী সমিতিকে আমরা সমস্যা সমাধানে ২৪ ঘণ্টা সময় দিয়েছিলাম। সেটা প্রায় শেষ হতে চললো। এই সময়ের মধ্যে কার্যত কোনো পদক্ষেপ সমিতির পক্ষে নিতে দেখিনি। অদৃশ্য কোনো কারণে তারা নিশ্চিন্ত মনে আছে যে, এটা কিছুই হবে না। যতোটুকু জানতে পেরেছি, শিল্পী সমিতির নবনির্বাচিত নেতারা এফডিসিতেই আছেন, খাওয়াদাওয়া করছেন; সাংবাদিক নির্যাতনের বিষয়টির সুরাহা নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যথা নেই।
আল্টিমেটামের ২৪ ঘণ্টা শেষ হলে কঠোর আন্দোলনে যাওয়ার কথাও এসময় ব্যক্ত করেন আহমেদ তৌকীর। তিনি বলেন, সবার সাথে আমরা কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ নিচ্ছি। যেন দ্বিতীয়বার কোনো ব্যক্তি বা সংগঠন সাংবাদিকের গায়ে অযাচিতভাবে হাত দিয়ে পার না পায়।
এসময় তৌকীর জানান, ভুক্তভোগীদের সাথে কথা বলেছি। তাদের অফিস সরাসরি হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করতে চায়। এ বিষয়ে আমরা সংবাদকর্মীরাও মোটামুটি একমত। যদি আজকের মধ্যে কোনো সমাধান না আসে, তবে গতকালের হামলাকারীদের বিরুদ্ধে খুব শিগগির মামলার প্রস্তুতিই ভুক্তভোগীরা নিবেন বলে নিশ্চিত হয়েছি।
একটি সূত্র জানিয়েছে, সাংবাদিক ও শিল্পী প্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসার সম্ভাবনা আজ নেই। তবে বৃহস্পতিবার সকাল ১০টার দিকে বিষয়টি সমাধানে সাংবাদিক ও শিল্পীদের বৈঠক হতে পারে। এছাড়া বুধবার বিকেলে এফডিসির এমডি বরাবর সাংবাদিকদের পক্ষ থেকেও একটি আবেদনপত্র জমা দেয়া হয়েছে। যেন দ্রুতই সাংবাদিকদের উপর হামলার সুষ্ঠু বিচার হয়।
এ বিষয়ে কথা বলতে তদন্ত কমিটিতে থাকা মিশা সওদাগরসহ ৫ শিল্পীর মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাদের পাওয়া যায়নি।
এফডিসিতে সাংবাদিকদের মানববন্ধন
মঙ্গলবার এফডিসিতে হামলার প্রতিবাদে সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বিনোদনসহ নানা বিটে কর্মরত সাংবাদিকরা। টেলিভিশন ক্যামেরাম্যান অ্যাসোসিয়েশন এর উদ্যোগে এই মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন বিএফইউজের সভাপতি ওমর ফারুক, মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিইউজের নব-নির্বাচিত অন্যতম সভাপতি সাজ্জাদ আলম তপু, সোহেল হায়দার, সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মুজতবা ধ্রুব, বাচসাসের সভাপতি রাজু আলীম, সাধারণ সম্পাদক রিমন মাহফুজ প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা অবিলম্বে এ ঘটনার বিচার দাবি করেন। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিনেতা জয় চৌধুরী, শিবা শানু ও আলেকজান্ডার বো-কে সমিতি থেকে সদস্যপদ বাতিলসহ অন্যান্য শাস্তি নেওয়ার দাবিও জানান তারা।
ছবি: নাদিম খান