চুয়াডাঙ্গায় আবারও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কবলে পড়ে জীবনযাত্রা অচল হয়ে উঠেছে। গেল একমাসে জেলার বহু খেটে খাওয়া মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে।
সকাল থেকে সূর্যের দেখা মিললেও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কারণে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে দুর্বিষহ। এদিকে প্রচণ্ড শীতে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৬ শিশুর মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।
বৈরী আবহাওয়ার কারণে সকাল থেকে যানবাহন চলাচল করলেও যাত্রী সংখ্যা কম। রাস্তাঘাটে, হাট বাজারে জনসমাগম লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। তীব্র শীতে উপার্জন কমে যাওয়ায় হাট বাজারে কেনাকাটা করতে আসা মানুষের সংখ্যা যৎসামান্য।
ভ্যানরিক্সা চালক রেজাউল, আব্দুর রাজ্জাক ও শুকুর আলী বলেন, সকালে রিক্সা-ভ্যান বের হয়েছি। শীতের কারণে রাস্তায় লোকজন নেই, ভাড়াও নেই।
কুলবরইয়ের পসরা নিয়ে বসা কাজল জানান, আয় রোজগার কমে যাওয়ায় সকাল সকাল আসলেও বিক্রি নেই বললেই চলে। শীতের কারণে কোর্ট এলাকায় লোকজন কম। সে কারণে বেশ খারাপ দিন যাচ্ছে।
ব্যাংক কর্মচারি মুক্তার বলেন, শীতে বাড়ি থেকে বের হওয়া কষ্টের। চাকরির কারণে বাড়িতে থেকে বের হতে হয়েছে। এত খারাপ আবহাওয়া হওয়ার পরও অফিসে যাওয়াটাই কষ্টদায়ক।
এদিকে, চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সদর হাসপাতালে ৬ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গত ১ জানুয়ারি শিশু ওয়ার্ডে শহরের প্রান্তপাড়ার তোয়াব আলীর ২০ দিন বয়সী মেয়ে তাসকিন ও জীবননগর উপজেলার মনোহরপুর গ্রামের প্রদীপের মেয়ে ৮ মাস বয়সী বৈশাখী, ৬ জানুয়ারি সরোজগঞ্জের লিটনের ছেলে ১০ দিন বয়সী আবু রহমান, ডিঙ্গেদহ গ্রামের মনিরুলের ছেলে একমাস বয়সী আব্দুল্লাহ, বালীয়াকান্দি গ্রামের ফরিদের মেয়ে চারঘন্টা বয়সী ও পীরপুর গ্রামের শরিফুলের একদিন বয়সী মেয়ে টুনি মারা গেছে। তবে এ পর্যন্ত ডায়রিয়ায় চিকিৎসা নিতে আসা কোন রোগী মারা যায়নি।
চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডা. মো. আতাউর রহমান জানান, শীতের কারণে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা হাসপাতালে বেড়ে গেছে। অতিরিক্ত রোগীর চাপ থাকায় চিকিৎসা সেবা দেয়া দুরূহ হচ্ছে। প্রত্যেকদিন ২৫০ থেকে ৩০০ জন ভর্তি রোগী ও বর্হিবিভাগে ১ হাজার ৭০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ জন রোগীর চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, শীতে প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণ চলছে। এছাড়া প্রশাসনের পক্ষ বিভিন্ন বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে পত্র পাঠিয়ে তাদেরকে শীতবস্ত্র বিতরণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রকিবুল হাসান জানান, এ জেলায় কয়েকদিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৭ শতাংশ। এর আগে এদিন সকাল ৬ টায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। ওই সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৬ শতাংশ। জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬.৩ ডিগ্রি হওয়ায় মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। এ আবহাওয়া আরও কয়েক দিন অব্যাহত থাকবে পারে।