
লক্ষ্মীপুরে চাঞ্চল্যকর ছাত্রলীগ নেতা মেহদী হাছান জসিমকে গুলি করে হত্যার দায়ে ৮ জনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। সোমবার ২৯ মে দুপুরের দিকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক আমিনা ফারহিন এ রায় দেন। রায় শুনে আসামি ও তাদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন।
লক্ষ্মীপুর জজ আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) জসিম উদ্দিন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ মামলায় ১২ আসামির বিরুদ্ধে পুলিশ অভিযোগপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে ৪ জন আসামি মারা গেছেন। অন্য ৮ জন আসামি প্রত্যেককে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দিয়েছে আদালত। রায়ের সময় ৭ আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামি হিজবুর রহমান স্বপন পলাতক রয়েছেন।
মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিরা হচ্ছেন- আলী হোসেন বাচ্চু (৪৩), মোস্তাফা (৪৩), খোকন (৪৮), আবুল হোসেন (৬৮), মোবারক উল্যা (৬১), কবির হোসেন রিপন (২৬), জাফর আহম্মদ (৬১) ও হিজবুর রহমান স্বপন (৪০)।
মেহদী হাছান জসিম চন্দ্রগঞ্জ কফিল উদ্দিন ডিগ্রি কলেজ ছাত্রলীগের সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। তিনি সদর উপজেলার দত্তপাড়া ইউনিয়নের শ্রীরামপুর গ্রামের মফিজ উল্যার ছেলে।

মামলার এজাহার সূত্র জানায়, শ্রীরামপুর গ্রামের মফিজ উল্যার সঙ্গে একই বাড়ির মোবারক উল্যা ও আলী হোসেন বাচ্চুদের জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এরই জের ধরে মোবারক গং ২০১৩ সালের ৭ জানুয়ারি মফিজ ও তার পরিবারের সদস্যদের মারধর করে। এ ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা হয়। এরপর থেকে মফিজের মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য প্রতিপক্ষ আসামিরা হুমকি দেয়, না করলে হত্যা করা হবেও হুমকি দেওয়া হয়। এ জন্য মফিজ ও তার পরিবারের সদস্যরা বাড়িতে না যেতে পেরে আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে আত্মগোপনে থাকতেন। এক পর্যায়ে প্রতিপক্ষ মোবারকদের করা মামলাটি উপপরিদর্শক (এসআই) মো. নুরনবী তদন্ত শেষে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে মফিজের ছেলে মেহদী হাছান জসিমের নাম বাদ দেওয়ায় মোবারকরা চরম ক্ষিপ্ত হয়। এ কারণে জসিম ১০ ফেব্রুয়ারি রাতে সদর উপজেলার বাঙ্গাখাঁ ইউনিয়নের রাধাপুর গ্রামে আত্মীয় গোলাম মাওলার বাড়িতে আত্মগোপনে যায়। জসিমের সঙ্গে তার বড় ভাই আবদুল হাই ও গোলাম মাওলার ভাই মাসুদ একই কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন। ওইদিন দিবাগত গভীর রাতে আসামীরা জানালার গ্রিল ভেঙ্গে ঘরের ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় তারা জসিমের বুকে গুলি করে। তাকে বাঁচানোর জন্য অন্যরা এগিয়ে আসলে আসামিরা গুলি করার হুমকি দিয়ে তাদেরকে পিটিয়ে আহত করে। পরে জসিমকে উদ্ধার করে লক্ষ্মীপুর জেলা সদর হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এ ঘটনায় পরদিন জসিমের পিতা মফিজ বাদী হয়ে সদর থানায় মোবারকসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ ও অচেনা আরও ১০-১২ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও লক্ষ্মীপুর সদর থানার তৎকালীন উপপরিদর্শক (এসআই) আবু নাছের আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সাক্ষ্য প্রমাণে মোবারক উল্যা, আলী হোসেন বাচ্চু, অজি উল্যা, কবির হোসেন রিপন, হিজবুর রহমান স্বপন, আবুল কাশেম, সফিক উল্যসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে প্রাথমিকভাবে অভিযোগ প্রমানিত হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এরমধ্যে আসামি আবুল কাশেম, সফিক উল্যা, আমির হোসেন ও অজি উল্যা মারা গেছেন। দীর্ঘ শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আদালতের বিজ্ঞ বিচারক আসামীদের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডাদেশ করেন।
মামলার বাদী মফিজ উল্যা বলেন, আমার ছেলেকে আসামিরা গুলি করে হত্যা করেছে। মামলার রায়ে আমি খুশি ও সন্তুষ্ট। তবে মামলার যেনো অবিলম্বে কার্যকর হয়। যাতে আর কোনো পিতা বা মা-সন্তান হারা না হয়। সরকারের কাছে এ আকুতি।