চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Nagod

বিএসএমএমইউ সমাবর্তন: প্রকাশনাতে ২৪ চিকিৎসকের ‘এক নাম’

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চতুর্থ সমাবর্তনের প্রকাশনাতে একটি  ‍পৃষ্ঠায় ২৪ চিকিৎসকের ভিন্ন ছবি থাকলেও সবার ক্ষেত্রে ‘এক নাম’ ব্যবহার করা হয়েছে। অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা এই ভুল নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। পাশাপাশি সমাবর্তনে বিশৃঙ্খল পরিবেশ ও চরম অব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রশ্ন তুলে জড়িত সকলকে তদন্তের আওতায় এনে উপযুক্ত জবাবদিহিতার দাবি জানিয়েছেন। যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকাশনা ও মুদ্রণ উপ-কমিটি ঘটনার জন্য আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেছে।

সোমবার ১৩ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চতুর্থ সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয়।  ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালের জুলাই পর্যন্ত যারা পিএইচডি, এমডি, এমএস, এমফিল, এমএমএড, এমটিএম, এমপিএইচ, ডিপ্লোমা, বিএসসি ইন নার্সিং এবং এমএসসি নার্সিং ডিগ্রি অর্জন করেছেন, তারা এ সমাবর্তনে অংশ নেন।

Bkash July

এবারের সমাবর্তনে সাড়ে তিন হাজার স্নাতক ও স্নাতকোত্তর চিকিৎসক, সেবিকা অংশ নেন। এর মধ্যে রয়েছে- মেডিসিন অনুষদে প্রায় আটশ’, সার্জারি অনুষদে প্রায় এক হাজার চারশ’, শিশু অনুষদে প্রায় তিনশ’, বেসিক সায়েন্স ও প্যারাক্লিনিক্যাল অনুষদে পাঁচ শতাধিক, প্রিভেনটিভ এন্ড সোশ্যাল মেডিসিন অনুষদে প্রায় তিনশ’, ডেন্টাল অনুষদে শতাধিক স্নাতকোত্তর চিকিৎসক এবং নার্সিং অনুষদে শতাধিক স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সেবিকা।

সমাবর্তনে তিনজনকে পিএইচডি ডিগ্রি এবং ৩৫ জনকে ‘চ্যান্সেলর স্বর্ণপদক’ দেওয়া হয়।

Reneta June

ভিন্ন ছবিতে ‘এক নাম’ ২৪ চিকিৎসকের
বিএসএমএমইউ’র চতুর্থ সমাবর্তনের প্রকাশনায় দেখা যায়, মেডিসিন বিভাগের স্নাতকোত্তর সনদপ্রাপ্ত চিকিৎসকবৃন্দের একটি পাতায় ২৪ জন চিকিৎসকদের ভিন্ন ছবি থাকলেও ‘একটি নাম’ ব্যবহার করা হয়েছে। ওই নামটি হচ্ছে মো. রিফাত উদ্দিন তারেক। চিকিৎসকদের ছবি ঠিক থাকলেও প্রত্যেকের নামের নীচে ‘মো. রিফাত উদ্দিন তারেক’ নামটি ব্যবহার করা হয়েছে।

এক চিকিৎসক চ্যানেল আই অনলাইনকে বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন: সমাবর্তনের দিন বিএসএমএমইউ’র ফেসবুক পেজ থেকে সমাবর্তনের প্রকাশনা নিয়ে দুঃখপ্রকাশ করে বিবৃতি দেওয়া হয়েছিল। ১০ মিনিট না যেতেই সেটা তুলে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। আসলে আমরা নিজের ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করা বা অনুতপ্ত হতে ভুলে গেছি। তাই এত এত আলোচনার পরও তারা নিশ্চুপ হয়ে আছেন।

অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা বলছেন: সমাবর্তনের প্রতিটি বিষয় হতে হবে নিখুঁত এবং নির্ভুল।

২০১৮ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) তৃতীয় সমাবর্তনেও কিছু ভুল বানান এবং ভুল বাক্য সকলের নজর কেড়েছিল। সে সময় দেখা যায়, একটি ফেস্টুনে লেখা ছিল, ‘উচ্চশিক্ষ’ লাভ ব্যক্তিকে জাতির কাছে দায়বদ্ধ করে তোলে। অথচ শব্দটি হবে ‘উচ্চশিক্ষা’।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে টাঙানো আরেকটি ফেস্টুনে লেখা ছিল, উচ্চশিক্ষা একটি জাতির ‘মেরুদন্ত’ যেখানে শব্দটি হবে ‘মেরুদণ্ড।’

তৃতীয় আরেকটি ব্যানারে লেখা হয়েছিল, ‘চিকিৎসা একাধারে যেমন সেবা অন্যদিকে এক প্রকার কলাও বটে’। এই বাক্যটিতে রয়েছে মারাত্মক ত্রুটি। বাক্যটি হতে পারে, ‘চিকিৎসা একাধারে সেবা এবং কলা’ অথবা ‘চিকিৎসা একদিকে যেমন সেবা অন্যদিকে এটি এক প্রকার কলা’।

সমাবর্তন উপলক্ষে করা স্মারকে লেখা সম্পাদকীয়তে ছিল অসংখ্য ভুল। সেখানে ১২ লাইনে কমপক্ষে ছিল ২৫টি ভুল।

সারাদিনে ২৫০ মিলি পানি, বসার জন্য প্লাস্টিকের চেয়ার
এক চিকিৎসক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন, ‘এটা কিভাবে সম্ভব? মূল সম্মেলন কক্ষে খাওয়ার জন্য পানি ছিল না।’ হাস্যরস করে আরেক চিকিৎসক পোস্টে জানান, ‘‘পানি খাবা, ২৫০ মিলি দিসিলাম না সারাদিনের জন্য? এ ব্লকের ফোয়ারা দেখনি আসার আগে?’’। আরেক চিকিৎসক জানালেন: সমাবর্তন যে সম্মেলন কক্ষে হলো সেখানে শুধু মাত্র রেড কার্ডধারীদের ঢুকতে দিলো। অথচ যাদের সমাবর্তন তাদেরকে মূল সম্মেলন কক্ষে ঢুকতে দেওয়া হলো না। তাদেরকে বাইরে প্লাস্টিকের চেয়ার দিয়ে বসিয়ে বড় পর্দায় সমাবর্তন দেখতে বলা হলো।

‘সম্মানিত না অপমানিত হতে গিয়েছিলাম’
ডিগ্রীধারী চিকিৎসক বলছেন ‘১৫ মিনিটের বেশী থাকতে পারলাম না। এত বিশৃঙ্খল পরিবেশ, তার ওপর চরম অব্যবস্থাপনা!’ তিনি ফেসবুক পোস্টে লিখেন ‘‘শ্রদ্ধেয় বিএসএমএমইউ প্রশাসন, পোস্টগ্রাজুয়েট ডিগ্রী প্রদানকারী বাংলাদেশের একমাত্র মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে আপনারা সমাবর্তন আয়োজনে সম্পূর্ণ ব্যর্থ। আজকে সম্মানিত না, মনে হয়েছে অপমানিত হতে গিয়েছিলাম।’’ ‘‘আপনাদের এত টাকা দিলাম আমরা, আপনারা কি আরেকটু ভাল/বড় ভেন্যু নির্বাচন করতে পারতেন না??’’

সার্বিক অব্যবস্থাপনার চিত্র!
সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী আরেক চিকিৎসক লিখেছেন ‘‘স্মরণকালের লজ্জাজনক সমাবর্তন অনুষ্ঠান আয়োজনের নির্লজ্জ প্রদর্শনী করে দেখালো বিএসএমএমইউ। তৃতীয় শ্রেণীর একটা নামমাত্র অনুষ্ঠান আয়োজন করার প্রয়োজন সম্ভবত টাকা আদায় করা। এর বাইরে কোন কিছুতেই এটা সমাবর্তন হতে পারে না। জঘন্য। ঘৃণা জানাচ্ছি একজন অংশগ্রহণকারী হিসেবে। একটা অনুষ্ঠান আয়োজনের ন্যূনতম সদিচ্ছা এদের ছিলো না। সক্ষমতা ও নেই।’’ তিনি শেষ করেছেন ‘লজ্জা লজ্জা লজ্জা।’ লিখে।

আরেক চিকিৎসক সমাবর্তনকে স্মরণকালের হাস্যকর, চরম বিশৃঙ্খল ইত্যাদি বিভিন্ন বিশেষণে ভূষিত করেছেন।

সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকরা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান: নিম্ন মানের খাবার, কুরুচিপূর্ণ আয়োজন, নিম্নমানের প্রকাশনার মাধ্যমে বিএসএমএমইউ শুধু দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদেরকেই অবমূল্যায়ন করেনি, এর সাথে জুড়ে থাকা জাতির জনকের নামকেও অসম্মান করেছে।

অংশগ্রহণকারী আরেক চিকিৎসক বললেন: একটা করে চিকেন বিরানীর প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। যার সর্বোচ্চমূল্য ১৬০ টাকা হতে পারে। সাথে একটা ড্রিংকস। অধিকাংশরাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেয়েছেন। ডিগ্রীপ্রাপ্তদের কোনো স্মারক দেওয়া হয়নি। চূড়ান্ত ভাবে অপমান করা।

তারা বিএসএমএমইউ’র বিশৃঙ্খল আয়োজনকে ধিক্কার জানানো পাশাপাশি এর সাথে জড়িত সকলকে তদন্ত করে উপযুক্ত জবাবদিহিতার আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।

দেড় কোটি টাকায় সম্মেলন কক্ষ সাজানো!
সমাবর্তনে অংশগ্রহণকারী একাধিক চিকিৎসক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছেন, তারা জেনেছেন সমাবর্তন উপলক্ষ্যে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা সম্মেলন কক্ষ দেড় কোটি টাকা দিয়ে সাজানো হয়েছে। তারা বলছেন: পাঁচ লাখ খরচ করলে পুরো সম্মেলন কক্ষ সাজানো যায়। এটা পরিকল্পিত অর্থ লোপাটের একটা নীল নকশা। টাকা পয়সা নয়-ছয় হয়েছে অথচ টাকা নেওয়া হয়েছে সার্টিফিকেট দেওয়াসহ ৮ হাজার করে, প্রত্যেকের পেছনে পাঁচ’শ টাকার বেশি খরচ হয়নি।

এক চিকিৎসক জানান: বিএসএমএমইউ’র দরকার ছিলো মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে এনে একটা অনুষ্ঠান করা, সেটা আয়োজন করতে যে টাকার দরকার ছিলো সেই টাকা যোগানোর জন্য সমাবর্তনের মুলা ঝুলিয়ে সবাইকে নিবন্ধন করালো। এটা কোনোভাবেই সমাবর্তনের মধ্যে পড়েনা। একটা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনও আরো সুন্দর হয়।

সমাবর্তনে রেড-গ্রীন কার্ডের মানে কী?
প্রশ্ন রেখে এক চিকিৎসক বললেন বিএসএমএমইউ আসলে কাদের জন্য সমাবর্তনের আয়োজন করেছিলো? যারা সমাবর্তনের জন্য নিবন্ধন করেছে তাদেরকে গ্রীন কালার কার্ড দেওয়া হলো এবং বিএসএমএমইউ এর কর্মকর্তাদের এবং কিছু পছন্দের লোকদের রেড কালার কার্ড দেওয়া হলো।

আরেক চিকিৎসক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: সমাবর্তন হবে খোলা মাঠে, এক প্যান্ডেলের নীচে, এখানে লাল-সবুজ কার্ডের ব্যাপারটা কেন আসল সেটা আমাদের বোধগম্য নয়।

এবার কেন এমন হলো প্রশ্ন রেখে এই চিকিৎসক বলেন: গত তিনটি সমাবর্তনে মাঠ ভাড়া নেওয়া হয়েছিল। তাহলে এবার কি হলটা ব্যবহার করে মাঠ ভাড়া বাঁচানোর জন্য এমনটা করল সংশ্লিষ্টরা।

দ্রুত নির্ভুল কপি ডিগ্রীধারীদের কাছে পৌঁছানো হবে
মঙ্গলবার ১৪ মার্চ রাতে বিএসএমএমইউর অফিসিয়াল ফেসবুক পেইজে প্রকাশনা ও মুদ্রণ উপ-কমিটির পক্ষ থেকে পোস্ট করে দুঃখ প্রকাশ করে বলা হয়, ‘‘অতি দ্রুত নির্ভুল কপি স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী সকল চিকিৎসক ও নার্সদের কাছে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’

এতে আরও বলা হয় ‘‘সাড়ে তিন হাজারেরও অধিক ছবি, নাম ও বিভাগসহ তথ্য সম্বলিত ডাটার কপি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইটি অফিস থেকে যথাসময়ে সম্পন্ন করা হয়নি। প্রকাশনা ও মুদ্রণ উপ-কমিটির কাছে ডাটার কপি সরবরাহে অত্যন্ত বিলম্ব করা হয়। এ ছাড়া সরবরাহ করা ডাটায় বিভ্রান্তি থাকায়, নির্ধারিত সময়ে সমাবর্তনে অংশ নেওয়া স্নাতক, স্নাতকোত্তর ডিগ্রীধারী সকল চিকিৎসক, নার্সদের হাতে সমাবর্তনের বই পৌঁছানো সম্ভব হয়নি।’’

কর্তৃপক্ষীয় ব্যাখ্যা
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, কিছু ভুলত্রুটি যেগুলো বলছেন, সেগুলো দেখারই সুযোগ হয়নি। আশা করছি অতি দ্রুত ভুল ত্রুটিগুলো ঠিক করে প্রয়োজনে প্রত্যেকের বাড়িতে জার্নালগুলো পৌঁছে দেওয়া হবে।

বিএসএমএমইউ কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আতিকুর রহমান বলেন: সমাবর্তনে কোন ভুল ত্রুটি হয়ে থাকলে এ বিষয়গুলো নিয়ে আমরা লজ্জিত। বিএসএমএমইউ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলো থেকে আলাদা, কারণ এখানে আমাদের ছাত্ররাই একেকজন চিকিৎসক। তারা যদি আমাদের বিষয়ে অভিযোগ করে সেটা খুবই দুঃখজনক। এমন অভিযোগে আমরা বিব্রত ও দুঃখিত।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রকাশনায় ভুলের বিষয়ে চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: ‘সমাবর্তনে এমন ভুল খুব সহজেই নজর কাড়বে এটিই স্বাভাবিক। এই ভুলগুলো  প্রিন্টিং মিসটেক। ইতোমধ্যে প্রকাশনা ও মুদ্রণ উপ-কমিটির পক্ষ থেকে দুঃখ প্রকাশ করা হয়েছে। আসলে আমাদের সময় স্বল্পতা ছিল, এর সঙ্গে সমন্বয়হীনতাও ছিল। কেউতো আর ইচ্ছাকৃত ভুল করে নিজের বিপদ ডেকে আনতে চায় না।’

অংশগ্রহণকারী চিকিৎসকদের অভিযোগের জবাবে বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন বলেন: অনুষ্ঠানটিতে খাবার, বিদেশি মেহমানদের থাকা-খাওয়া, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট, সবকিছুতেই আমাদেরকে বড় একটা বাজেট খরচ করতে হয়েছে। সুতরাং এটা নিয়ে কোনো প্রশ্ন তোলার সুযোগ নেই। শুধুমাত্র ইভেন্ট ম্যানেজমেন্টে ৮০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেই টাকাটা কে দেবে? অবশ্যই শিক্ষার্থীরাই দেবে। এটা শুধু আমাদের নিয়ম না, প্রত্যেকটি জায়গাতেই যাদের সমাবর্তন হয় তাদের টাকা দিয়েই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। যে টাকা নেওয়া হয়েছে, সেগুলো তাদের পিছনেই খরচ হয়েছে। এই টাকা আমাদের কারো পকেটে যায়নি।

ISCREEN
BSH
Bellow Post-Green View