শুক্রবার ভারতের সঙ্গে একই দিনে বাংলাদেশে মুক্তি পাবে ব্রাত্য বসুর ‘হুব্বা’। ছবির নামভূমিকায় আছেন বাংলাদেশের মেধাবী অভিনেতা মোশাররফ করিম। ছবিটি নিয়ে ভারতের এক গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন নির্মাতা।
ভারতীয় গণমাধ্যম ‘খবর ৩৬৫ দিন’-এ দেয়া সাক্ষাৎকারে ব্রাত্য বসু কথা বলেছেন সিনেমার নানা বিষয় নিয়ে। জানান রিয়্যাল ক্যারেক্টার হুব্বাকে নিয়ে ছবি করার ভাবনা এবং নন পলিটিকাল করে প্রেজেন্ট করা চাপটা কীভাবে সামলেছেন সেই বিষয়ে।
নির্মাতা বলেন, অভিজ্ঞ পুলিশ কর্মকর্তা সুপ্রতিম সরকারের ‘আবার গোয়েন্দাপীঠ’ নামের একটি বই আছে। সেখানে পশ্চিমবঙ্গে ঘটা ১২টি কেসের অপরাধমূলক বিবরণ আছে। তার একটি পড়তে গিয়ে এই ছবির গল্পের আইডিয়া আসে। তখন থেকেই ভাবছিলাম। পুলিশের সূত্রেই বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে দেখা করি যারা হুব্বাকে কাছ থেকে দেখেছেন। তাদের থেকেই হুব্বার অনেক গল্প নেই। তখন থেকেই স্ক্রিপ্ট তৈরি শুরু করি।
নির্মাতাকে প্রশ্ন করা হয়, হুব্বা শ্যামলের টাইটেল ট্র্যাক বের হতেই গানের আয়োজন দেখে রাম গোপাল বর্মার ‘সত্য’ সিনেমার ‘কাল্লু মামা’ গানের মতো মনে হলো। সেখান থেকে কি অনুপ্রাণিত?
উত্তরে বলেন, একদম ঠিক। ওখান থেকেই অনুপ্রাণিত। আমি রাম গোপাল বর্মার খুব বড় ভক্ত। তাছাড়া মুম্বাই ইন্ডাস্ট্রিতে ‘শিবা’ এবং ‘সত্য’ পাথ ব্রেকিং। তার থেকেই বড় কথা এই সিনেমা আমি রাম গোপাল বর্মাকে উৎসর্গ করেছি। তাছাড়া আমি গ্যাংস্টার ছবির ভক্ত। দেশ-বিদেশের গ্যাংস্টার ছবি দেখি। ফলে এই সিনেমা বানাতে ভালোই লেগেছে।
‘হুব্বা’ ছবিতে হুব্বা শ্যামলের ব্যক্তিগত জীবন দেখিয়েছেন নির্মাতা। আর তার পেছনের কারণ জানতে চাইলে নির্মাতা বলেন, ‘আমি তার ব্যক্তিগত জীবনকে এলিমেন্ট হিসেবে দেখেছি (গডফাদার উপন্যাসের কিছু অংশ এবং হিন্দি সিনেমা সত্য-এর কিছু অংশ টেনে এনে বলেন)। ওখানে যেভাবে দাম্পত্য দেখানো হয়েছে, আমি সেভাবে দেখি না। আমি যেভাবে দেখি, তেমনই হুব্বা শ্যামলের ব্যক্তিগত জীবন মধ্যবিত্তের মতো বিপদ-ভালোবাসা-দোলাচল সবই আছে সেখানে। আমার ছবিতে সেটাই দেখানো হয়েছে।
নির্মাতা জানান ‘হুব্বা’র কোন বিষয়টি তাকে টেনেছে। বলেন, বাঙালি ভদ্রলোক, বাঙালি মধ্যবিত্ত, এগুলোতো বরাবরই আমাদের ছবির উপজীব্য। এটা সত্যজিৎ রায় এরকমভাবে যে ঘরানা তৈরি করে দিয়ে গেছেন পরবর্তীতে বিশ্বায়ন-উত্তর যুগেও বাংলা ছবি সেটাই অনুসরণ করেছে। আমরা সবাই কমবেশি সেটার দ্বারা আচ্ছন্ন এখনও। ভদ্রলোকের জীবন নিয়ে ছবি হতে পারে, কিন্তু এর বাইরেও যেই জগত, যে জীবন আছে, তথাকথিত অর্থে ছোটলোকদের জীবন, যেটা বাংলা উপন্যাসে বহুদিন আগে উঠে এসেছে। সেটা সিনেমাতেও এসেছে কিন্তু উপন্যাসের তুলনায় কম। আমার এই ধরনের জীবন নিয়ে কাজ করতে বরাবরই ভালো লাগে। আমার মনে হয়, ‘হুব্বা’ একদম সময়োপযোগী ছবি। ২০১১ সালে হুগলির বৈদ্যমাটির খালে হুব্বার দেহ ভেসে উঠেছিল। তার আগেই এই গ্যাংস্টার বহুবার গ্রেপ্তার হয়েছে। তবু তাকে ধরে রাখা যাচ্ছিল না। একসময় নিখোঁজ হয় সে।
ইমপ্রেসের ‘কমলা রকেট’-এ মোশাররফ করিমকে দেখে মুগ্ধ হয়েছিলেন নির্মাতা। ‘হুব্বা’ চরিত্রে মোশাররফ করিমকে নেয়া প্রসঙ্গে নির্মাতা বলেন, ‘আমি জানতামই না মোশাররফ করিম এত জনপ্রিয়। তাকে প্রথম দেখেছি কমলা রকেট-এ। সেটা দেখে আমি আপ্লুত হয়ে যাই। তারপরেই ‘ডিকশনারি’-তে কাজ। সেই কাজ করতে করতে হুব্বার কথা মোশাররফ করিমকে বলি। উনিও বলেন।
নির্মাতা জানান, ছবির সব শুটিং রিয়েল লোকেশনে হয়েছে। মন্ত্রী হয়েও রাস্তায় নেমে কাজ করতে হয়েছে। নির্মাতা বলেন, আলখাল্লা খুলে রেখে কাজ করাই ভালো। আমিতো এর আগেও ‘ডিকশনারি’ করেছি। থিয়েটার করেছি। ফলে অভ্যাস হয়ে গেছে। আর আমার ইউনিট যথেষ্ট সতর্কতামূলক পাহারা দিয়েছে।
ব্রাত্য বসু জানান, তিনি মন্ত্রী কিংবা নির্মাতা নয়, অভিনেতা পরিচয়টাই বেশি পছন্দ করেন। অভিনেতা হিসেবে পরিচালকের বাধ্য হয়ে কাজ করতে হয়। আগে থেকে প্রস্তুতি নিয়ে চরিত্র নিজের মাঝে ধারণ করতে হয়। মনোযোগ দিতে হয়। এসব তার ভালো লাগে।
ঢাকা/এনএস/এমটিএল