চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

বইমেলা নিয়ে তরুণ লেখকদের ভাবনা ও প্রত্যাশা কী?

দুয়ারে কড়া নাড়ছে অমর একুশে গ্রন্থমেলা। ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালির প্রাণের এই বইমেলা।আসন্ন মেলাকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যেই প্রকাশক, লেখক এবং পাঠকদের মাঝে চলছে উৎসবের আমেজ। বিশেষ করে তরুণ লেখকদের চোখে-মুখে উচ্ছ্বাস।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান এবং বাংলা একাডেমি ঘুরে দেখা যাচ্ছে আবেগ ও অনুভূতির সংমিশ্রণে কাজ করছে শ্রমিকরা।

রফিক নামের এক শ্রমিক জানান, প্রথমবারের মতো বই মেলার স্টল তৈরিতে কাজ করছেন তিনি। দীর্ঘদিন শ্রমিকের কাজ করলেও এখানে কাজ করতে তার বেশ ভালো লাগছে। এক সপ্তাহ আগে থেকে সোহরাওয়ার্দীতে স্টল তৈরিতে কাজ করছেন তিনি। এরই মধ্যে নিজেকে ভাগ্যবান মনে করছেন। তার ভাষায়, ‘অনেক জ্ঞানী মানুষরা আমার সাথে কথা বলছে। অনেক খুশি লাগছে। এখানে বই বিক্রি করবে, আর বইয়ের দোকানের জন্য কাজ করতেছি, তাই আমি অনেক খুশি।’

অন্যদিকে সময় যত ঘনিয়ে আসছে ততোই নির্ঘুম রাত কাটছে সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থী রাব্বি হোসেনের। তার দ্বিতীয় উপন্যাস প্রকাশিত হচ্ছে আসন্ন মেলায়। প্রথম উপন্নাস পাঠক জনপ্রিয়তা পাওয়ায় দ্বিতীয় উপন্যাস লেখার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন উল্লেখ করে তরুণ এ লেখক বলেন, আমার প্রথম উপন্যাস ‘স্মৃতির রুমাল’ পাঠকের প্রশংসা পেয়েছে। আর পাঠকের চাওয়া এবং ভালোবাসায় দ্বিতীয় উপন্যাসের কাজ শুরু করেছিলাম। এবার বইমেলায় তা পাঠকের হাতে পৌঁছে যাবে। তিনি আশা করছেন আসন্ন বইটিও লেখক জনপ্রিয়তা পাবে।

স্কুলজীবন থেকে বই পড়ার প্রতি প্রবল আগ্রহ, আর সেখান থেকে লেখালেখির হাতেখড়ি। প্রকাশ হচ্ছে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী মিরাজ আহম্মেদ-এর প্রথম উপন্যাস ‘লক্ষ্মী পঞ্চায়েত’। বর্তমান সময়ের বাস্তবধর্মী একটা উপন্যাস হাতে পাবে তার পাঠকরা। তার প্রত্যাশা পাঠক ভালোভাবে গ্রহণ করবে তার লেখা।

দীর্ঘদিন পরিশ্রমের ফল হাতে পেতে যাচ্ছে নবীন লেখকরা। পাঠকরা কিভাবে নেবে তা নিয়ে বেশ চিন্তিত তারা। তবে তাদের প্রত্যাশা ভালো এবং সৃজনশীল বই উপহার পাবে পাঠকসমাজ। ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থী মশিউর আলম বলেন, তার লেখা প্রথম কাব্যগ্রন্থ হাতে পেতে যাচ্ছে গ্রন্থমেলায়। তরুণদের একটা অংশ কবিতার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। তারা কবিতার ভাষা, ছন্দ কঠিন মনে করে পড়তে চায় না। আমার গ্রন্থে সহজ এবং সাবলীল ভাষা ব্যবহারের চেষ্টা করেছি। আশা করি পাঠক খুব সহজে বুঝতে পারবে এবং কাব্যের প্রতি তাদের ভালোবাসা ফিরে পাবে।

তরুণ লেখকদের গ্রন্থমেলায় অগ্রাধিকার দেওয়া হয় উল্লেখ করে বই প্রকাশক মঈন মোরসালিন বলেন, এ বছর আমার প্রকাশনী থেকে ৩০ থেকে ৩৫ জন নতুন লেখকের বই প্রকাশ হতে যাচ্ছে। আমি চেষ্টা করেছি, তরুণদের অগ্রাধিকার দিতে, তাদের সুযোগ করে দিতে। তাদের আবেগ আর অনুভূতি বোঝার চেষ্টা করি।

এছাড়াও তিনি তরুণদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অন্য প্রকাশনীগুলোর প্রতিও অনুরোধ জানান।

নবীন লেখকদের বিজ্ঞান ভিত্তিক বই লেখার আহ্বান জানিয়ে বাংলা একাডেমির প্রশাসন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও পরিকল্পনা বিভাগের পরিচালক এবং অমর একুশে বইমেলা ২০২৩-এর সদস্য সচিব কে এম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, বাংলা একাডেমি তরুণ লেখক, প্রকাশকদের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অন্তত ২০ থেকে ৩০টি স্টল বাড়িয়েছে। আমরা নবীনদের সুযোগ করে দিতে চাই। তাদের বেশি বেশি লেখায় অভ্যস্ত হতে হবে। যতো বেশি লেখবে ততই ভুলগুলো সংশোধন হবে।

কে এম মুজাহিদুল ইসলাম, সদস্য সচিব, অমর একুশে গ্রন্থমেলা

এছাড়াও ডা. মুজাহিদুল ইসলাম জানান, মেলা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষ্যে বইমেলার জন্য প্রত্যেক সেক্টর থেকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নিয়ে কমিটি গঠন করা হয়েছে। এবারও একাডেমির মহাপরিচালক মুহম্মদ নূরূল হুদাকে সভাপতি করে ৩১ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটি নানা বিষয়ে আলোচনা সাপেক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে।

এবার বইমেলায় কিছু আঙ্গিকগত পরিবর্তন হয়েছে উল্লেখ করে সদস্য সচিব বলেন, মেলার পুরো বিন্যাসই পরিবর্তন করা হয়েছে। মেলায় মূল মঞ্চ থাকবে বাংলা একাডেমি অংশে। আর গ্রন্থ উন্মোচন ও লেখক বলছি মঞ্চ থাকবে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অংশে। বেশি স্টল ও প্যাভেলিয়ন থাকছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

মেট্রারেলের কারণে বিগত সময়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট সংলগ্ন যে ১৮২টি স্টল ও ১১টি প্যাভিলিয়ন ছিল তা এবার সরিয়ে এনে সোহরাওয়ার্দীর মূল কেন্দ্রে স্থাপন করা হয়েছে। আর সেই স্থানে ফুডকোর্টসহ নানা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া তিনি বলেন, আগে যেখানে মেলার প্রধান প্রবেশ পথ ছিল তা পরিবর্তন করা হয়েছে। আগেকার সেই প্রবেশ ফটক এবার প্রস্থানের জন্য রাখা হয়েছে। মূল প্রবেশদ্বার রাখা হয়েছে বাংলা একাডেমির উল্টো দিকে। মন্দিরের প্রবেশদ্বার দিয়ে আগতরা মেলায় প্রবেশ করবে। এবার মেলায় আগতদের জন্য নির্দিষ্ট স্টল খুঁজে পেতে ডিজিটাল বোর্ডসহ প্ল্যাকার্ড এর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। সেখানে ম্যাপ থাকবে এবং বিভিন্ন বইয়ের প্রচ্ছদ প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করা হবে।

গ্রন্থমেলার সদস্য সচিব নবীন, প্রবীণসহ সমাজের সর্বস্থরের মানুষকে মেলায় আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বই মেলায় আসুন, ভালো লাগবে, নতুন কিছু শিখবেন, উপভোগ করবেন, সাথে ভালো বই সংগ্রহ করবেন।’

একটি সুন্দর এবং সুশৃঙ্খল গ্রন্থমেলার অপেক্ষায় লেখক-পাঠকসহ সারা দেশের মানুষ। অন্যান্যবারের চেয়ে এবারের মেলা আরও বেশি লেখক-পাঠকদের মিলনমেলায় পরিণত হবে এমন প্রত্যাশা সংশ্লিষ্ট সকলের।