বিএনপি নামক রাজনৈতিক দলটি ১৯৭৮ সালের ১লা সেপ্টেম্বর সামরিক শাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান’র হাতে গঠিত হয়েছিল। অবৈধ প্রক্রিয়ায় সেনা কুঞ্জ হতে গঠিত দলটির মূল উদ্দেশ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সকল সুবিধাবাদিদেরকে একত্রিতকরণ এবং দেশকে স্বাধীনতাবিরোধীদের ক্ষমতায়নের এক মঞ্চস্থলে পরিনত করা। সেই সময়ে জেনারেল জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় এই দলটি গঠণ করেন।
দেশের সংবিধান অনুসারে সেনাবাহিনীতে কর্মরত অবস্থায় কখনই কোন রাজনৈতিক দল গঠন করতে পারে না। তার এই অবৈধ পন্থায় রাজনৈতিক দল গঠনের কারণে উক্ত বাহিনীতে সাধারণ সেনাদের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি হয়। যার ফলে সেনাবাহিনীর সদস্যগন বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে পড়েন। এই প্রেক্ষিতে জেনারেল জিয়াউর রহমান’র বিপক্ষে এবং স্বাধীনতার পক্ষে থাকা সেনা সদস্যদের হত্যা করে স্বৈরাচারী রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেন। তা ছাড়া, বিএনপি গঠনের পরপরেই ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করার মাধ্যমে পূর্বের সকল বিচার কাজ স্থগিত করে বাংলাদেশে এক ধরনের বিচারহীনতার সংস্কৃতি কায়েম করেছিলেন।
সুতরাং যেদল অবৈধভাবে গঠন, স্বাধীনতাবিরোধীদের একত্রিতকরণ এবং কোনো সৎ উদ্দেশ্যবিহীন তৈরি হয়েছিল, সে দল হতে আমরা কখনোই ভাল কিছু আশা করতে পারি না।
জেনারেল জিয়া গঠিত বিএনপি ‘হ্যাঁ’ এবং ‘না’ ভোটের মাধ্যমে প্রথম ক্ষমতাকে হস্তগত করে নিয়েছিল। সুতরাং তাদের মুখে গণতন্ত্রের কথা খুবই বেমানান। তা ছাড়া, ২০০৪ সালের ২১ শে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে তৎকালীন আওয়ামী লীগ ও বিরোধীদলের নেত্রী ও তার সহচরসহ সকলকে হত্যা করার বিশাল ষড়যন্ত্র করেছিল। ঐ সময় আওয়ামী লীগের নেত্রী প্রাণে বেঁচে গেলেও বহুনেতা ও নেত্রী মৃত্যুবরণ করেন।

এই প্রসঙ্গে বলা যেতে পারে যে, বিএনপি নামক রাজনৈতিক দল কখনোই এই কথা বলার অধিকার রাখে না যে দেশে একটি শক্তিশালী বিরোধী দল থাকা দরকার। তা ছাড়া, ইতোপূর্বে ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী বিরোধীদলের অনেক বর্ষীয়ান নেতাকর্মীদের হত্যা, অমানবিক নির্যাতন করাসহ নানা ধরনের দেশবিরোধী কাজে লিপ্ত ছিলেন। তাছাড়াও, ‘বাংলা ভাই’ নামক ব্যক্তি তৈরি করে তাদের হাতে দেশের আইন-শৃঙ্খলার কাজটি তুলে দেন যার ফলে দেশের আইনিকাঠামো মারাত্মকভাবে ধ্বংস হয়েছিল।
বিগত সময়েও বিএনপি-জামায়াত ক্ষমতায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে অবরোধ ও হরতাল নামক ধ্বাংসাত্মক কাজে লিপ্ত ছিলেন। যেমন: ২০১১ সালের জুলাই মাসে টানা ছয়দিন হরতাল নিয়ে জাতিসংঘের উন্নয়ন বিষয়ক সংস্থা ইউএডিপির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হওয়াসহ প্রতিটি হরতালে জিডিপির গড় ক্ষতি ছিল সাড়ে ৫ হাজার কোটি।
একই প্রতিবেদনে বলা হয়, হরতালের কারণে দেশের মোট অর্থনীতির ২০ শতাংশ ক্ষতির মুখে পড়ে। এছাড়া আমদানি-রপ্তানিতে ক্ষতির পরিমাণ ১০ শতাংশ এবং শুধু একদিনের হরতালের কারণে দেশে দ্রব্যমূল্যের দাম বাড়ে ১০ শতাংশ।
বিজ্ঞাপন
ইউএনডিপির প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০০৯-২০১৩ সালে বিএনপি ৭০টির বেশি হরতাল দিয়েছে। শুধু ২০১৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত এ সংখ্যা ছিল ৪০। যেখানে একদিনের হরতালে এত ক্ষতি সেখানে বছরে ৪০ দিনের হরতাল দেশের অর্থনীতিকে স্পষ্টত ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছিল, সেকথা বলার অপেক্ষা রাখে না।
বিগত এক দশকে হরতালের নাম-গন্ধ না থাকায় এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বিরাজ করায় দেশের অর্থনীতির চাকা ছিল পুরোদমে সচল। অবরোধ ও হরতালের কারণে ব্যষ্টিক অর্থনীতি থেকে সামষ্টিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। হরতাল দিলে সবচেয়ে বেশি কষ্টের মধ্যে পড়েন খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে মানুষের নাভিশ্বাস। এর মধ্যে সমাজের নিম্নবিত্ত মানুষ যদি কাজে বের হতে না পারে তাহলে তাদের অবস্থা আরও সংকটময় আকার ধারণ করবে।
প্রায় চার বছর পর আবারও হরতাল ও অবরোধ ডেকেছে বিএনপি। বিশ্ব অর্থনীতির এমন অস্থির সময়ে হরতাল ডেকে দেশকে স্থবির করে দেয়ার পরিকল্পনা কতটা যুক্তিযুক্ত এমন প্রশ্ন দেশের সচেতন মহলের। হরতাল পূর্ববর্তী সহিংসতা এবং হরতালের দিনে জ্বালাও-পোড়াও কর্মকাণ্ডে মানুষের মনে চাপা আতংক বিরাজ করছে রাস্তার পাশের ছোট ছোট দোকান পাট, হকারদের হাক ডাক, লোকাল বাসের জন্য দীর্ঘলাইন -এসবের অনুপস্থিতিই জানান দিচ্ছে হরতালের জন্য জনমনে সৃষ্টি হওয়া আতংক কর্মব্যস্ত দিনটিকে স্থবির করে দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দপ্তর সম্পাদক সামদানী খন্দকারের স্বাক্ষর করা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়। এতে বলা হয়, গত ২৮ অক্টোবর থেকে ৯ নভেম্বর পর্যন্ত তিন দফা হরতাল-অবরোধে এসব গাড়িতে হামলা হয়।
২৮ অক্টোবর বিএনপির সমাবেশ থেকে প্রধান বিচারপতির বাড়িতে হামলা, পুলিশ হত্যার মাধ্যমে সহিংসতা শুরু করেন দলটির নেতাকর্মীরা। এরই ধারাবাহিকতায় টানা হরতাল-অবরোধ কর্মসূচি পালন করে আসছে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে অবরোধকারীরা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছে অনেক যানবাহন এবং পুড়ে মারা গেছেন পরিবহন শ্রমিক। বিএনপির অনেক নেতাকর্মী এসব আগুন দেয়াসহ সহিংসতার ঘটনায় সরাসরি জড়িত। সুতরাং বিএনপি যখনই ক্ষমতা আসতে না পারে তখনই তারা বিভিন্নভাবে সুবিধা ভোগের জন্য অন্যান্য বিভিন্ন দলের সাথে নিজেদের জড়িয়েছেন তারমধ্যে উল্লেখ করতে চাই স্বাধীনতা বিরোধী জামায়াত-শিবির দল। এই জামায়াত-শিবির দলের সাথে যোগ দিয়ে তাদের স্বার্থ অর্জনের জন্য মরিয়া হয়ে দেশবিরোধী ভয়ংকর নোংরা রাজনীতিতে বারংবার লিপ্ত হয়ে আসছেন।
আজকে দেশে ২টি ধারার রাজনীতি প্রবাহিত হচ্ছে। ১টি স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এদেশের জনগণকে সকল দুঃখ-কষ্টে সরকারের সহায়তা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে একাত্তরের পরাজিত শক্তি সেই জামায়ত এবং পঁচাত্তরের খুনি সেই বিএনপি ও তাদের দোসররা সারাদেশে নতুন করে ভিন্ন একটি ধারার রাজনীতি শুরু করেছে। তাদের লক্ষ্য- দেশকে অস্থিতিশীল করে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করা। বিএনপি-জামায়াত অতীতে তারা যেসব অপকর্ম করেছে, রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকতে যেভাবে লুটপাট-দুর্নীতি করেছে, হাওয়া ভবনে বসে রাষ্ট্র যন্ত্র ব্যবহার করে আওয়ামী লীগের হাজার হাজার নেতাকে হত্যা করেছে, ক্ষমতার বাইরে থাকতেও পেট্রোল বোমা মেরে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, জনগণের ভোটে নির্বাচনে আর তারা রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে পারবে না। আজ তারা জনবিচ্ছিন্ন দল হিসেবে চিহ্নত হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশে আজ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় ভরে যাচ্ছে। দেশের মানুষের আস্থা ও ভরসার দল শেখ হাসিনার দল। একারণে এখন আবার নতুন করে বিএনপি-জামায়াত সম্মিলিত হয়েছে। তারা ভেবেছে, ২০১৩-১৫ সালে যেভাবে সন্ত্রাস-নৈরাজ্যের মাধ্যমে দেশকে অস্থিতিশীল করে উন্নয়ন অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছিল, আবারও সে অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি করে সরকারের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যহত করবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা করোনাকালীন মহাদুর্যোগ পাড়ি দিয়ে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতি মন্দার মধ্যেও আমরা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়েছি।
বাংলাদেশ আবার অর্থনৈতিক মন্দা থেকে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশের মানুষ নতুন করে স্বপ্ন দেখছে। পুরো বিশ্ববাসী বলছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের কারণে দেশের অর্থনীতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। এধারা অব্যাহত থাকলে আমরা ২০৩১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হব। এ ধারা নষ্ট করার জন্যই বিএনপি-জামায়াত তৎপর আছে।
বাংলাদেশ একটি গণতান্ত্রিক দেশ। এই দেশের মানুষ খুবই শান্তিপ্রিয়। কিন্তু বিএনপি নামক দল কখনই জনগনকে শান্তি দিতে পারে নাই, ভবিষ্যতেও দিতে পারবে না। বিগত ১৯৭১ সালে যখন দেশে স্বাধীনতাকামী নিরীহ মানুষের উপর পাকিস্তানীসেনারা নির্বিচারে হামলা করেছিল সেই সময় দেশের জণগনের কথা না ভেবে রাজাকার, আলবদর ও আলশামস নামক বিভিন্ন সংগঠনের মাধ্যমে পাকিস্তানীদের প্রতি সম্মান ও সঙ্গ দিয়েছে। অথচ এই বিএনপি দল গঠনের পরে দল ভারি করতে পরবর্তীতে- রাজাকার, আলবদর, আল শামসদের নিয়ে যখন নিজেদের দল বড় করে তখন এই দেশের জনগন বুঝতে পারে যে, সত্যিকারের দেশ প্রেম কাদের মধ্যে রয়েছে। বিএনপির যদি দেশ প্রেম থাকতো তাহলে তারা কথায় কথায় অবরোধ ও হরতাল ডাকতো না। হরতাল কোনো প্রতিবাদের ভাষা হতে পারে না।
বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী ও অগ্নিসন্ত্রাস মোকাবেলায় সকলকে সোচ্চার হতে হবে। বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য, দেশবিরোধী ষড়যন্ত্র বন্ধ, সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও কার্যকর বিচারের দাবিসহ তাদের যেন কঠিন আইনি ব্যবস্থার আওতায় আনা হয়। দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বাধা প্রদান কোনোমতে মেনে নেয়া যাবে না। এহেন দেশবিরোধী অগ্নিসন্ত্রাস, নৈরাজ্য ও উন্নয়ন বিরোধী কর্মকান্ড বন্ধে দেশের সকলকে সোচ্চার হতে হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)
বিজ্ঞাপন