ঢাকায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও ভারতের বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স (বিএসএফ) এর মহাপরিচালক পর্যায়ের ৫২তম সীমান্ত সম্মেলন শুরু হয়েছে। রোববার বিকেলে শুরু হওয়া এই সম্মেলন আগামী ২১ জুলাই সকালে যৌথ আলোচনার দলিল সাক্ষরের মধ্য দিয়ে শেষ হবে।
বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক সম্পর্কে মাঝেমধ্যে তিক্ততার অন্যতম প্রধান কারণ সীমান্ত হত্যা। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ প্রায়ই ‘গরু চুরির অজুহাতে’ বাংলাদেশিদের ওপর গুলি চালায়। এর ফলে বহু মানুষ প্রাণ হারান। এতে স্বাভাবিকভাবেই দু’দেশের সম্পর্কে চিড় ধরে।
এছাড়াও প্রতিবেশি দেশ ভারতের সাথে বাংলাদেশের দ্বিপাক্ষিক কিছু অমিমাংসিত ইস্যু রয়েছে। এর মধ্যে বিশেষ করে অবৈধ অনুপ্রবেশ; মাদক, অস্ত্র ও গোলাবারুদ এবং স্বর্ণসহ অন্যান্য চোরাচালান; নারী ও শিশু পাচারসহ বিভিন্ন সীমান্ত অপরাধ, আন্তর্জাতিক সীমান্তের ১৫০ গজের মধ্যে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড; সীমান্ত নদীর তীর সংরক্ষণ, বিভিন্ন সশস্ত্র উগ্রবাদী-সন্ত্রাসী সংগঠন/গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড সম্পর্কিত তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময়; সমন্বিত সীমান্ত ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ; দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের পাশাপাশি বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে পারস্পরিক আস্থা বৃদ্ধির বিভিন্ন উপায় ও বিবিধ বিষয়সমূহ নিয়ে সম্মেলনের প্রথম দিনে ফলপ্রসু আলোচনা হয়েছে। এছাড়াও ভারত হতে বাংলাদেশে বলপূর্বক বাস্তুচ্যূত মায়ানমার নাগরিকদের অবৈধ অনুপ্রবেশ রোধ নিয়েও ফলপ্রসু আলোচনা হয়।
এবারের সীমান্ত সম্মেলনের আলোচনা বিগত বছরগুলোর চেয়ে ফলপ্রসু হবে বলে আমরা আশাবাদী। তবে বাংলাদেশ-ভারতের ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আরও জোরদার করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীকে এক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে। নয়তো কাগজে-কলমে আলোচনার দলিল সাক্ষর ছাড়া এ সম্মেলন ফলপ্রসু হবে না। যা কারোরই কাম্য নয়। এ বিষয়গুলো বাস্তবায়নে আন্তরিকভাবে সচেষ্ট হলে সীমান্তে কোন ধরনের দুর্ঘটনা বা রেষারেষি হবে না বলে আমরা মনে করি। এতে উভয় দেশেরই লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এ লক্ষ্যে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী আগের চেয়েও এখন আরও বেশি আন্তরিক বলেই আমাদের বিশ্বাস।
বিজিবি-বিএসএফ সম্মেলনকে সামনে রেখে আমরা বরাবরের মতো বলতে চাই, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক শুধু সরকারের সাথে সরকারের নয়। আত্মিক এ সম্পর্ক দু’দেশের জনগণের সাথে জনগণের। এই সম্পর্ককে আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে উভয়কেই আরও কৌশলী হতে হবে। এক্ষেত্রে বিএসএফ আরও দায়িত্বশীল আচরণ করলে দু’দেশের জনগণের বোঝাপড়া অনন্য উচ্চতায় পৌঁছাবে।