শুভযাত্রা ও বেলুন উড়িয়ে শুরু হয়েছে সমুদ্র সৈকতের লাবনী পয়েন্টে সপ্তাহব্যাপী বীচ কার্নিভাল। বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে পর্যটকদের নানাভাবে আকৃষ্ট করতে মূলত এই মেলার আয়োজন করে জেলা প্রশাসন।
সৈকতে স্থাপন করা হয়েছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রীর বালু ভাস্কর্য। ছিল বিচ বাইক রেলি, সার্কাস, আলোচনা সভা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিশ্ব পর্যটন দিবস ও পর্যটন মেলাকে ঘিরে সৈকতে পর্যটকের বিপুল সমাগম ঘটেছে। হোটেল-মোটেল রেস্টুরেন্টগুলোতে ছাড় দেওয়ার কথা থাকলেও ছাড় দেওয়া হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছেন পর্যটকরা।
বুধবার ছিল বিশ্ব পর্যটন দিবস। এই সময়ে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসন কক্সবাজার সৈকতের লাবনী পয়েন্টে সপ্তাহব্যাপী বিচ কার্নিভালের আয়োজন করে। সকাল সাড়ে নয়টার সময় সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে শুরু হয় র্যালি। এরপর সৈকতের লাবনী পয়েন্টে এসে অতিথিরা বেলুন উড়িয়েই সপ্তাহব্যাপী বিচ কার্নিভালের উদ্বোধন করেন। এরপর শুরু হয় আলোচনা সভা।
জেলা প্রশাসক মো. শাহিন ইমরানের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কক্সবাজার-০৩ আসনের সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমল। এছাড়াও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক এড. সিরাজুল মোস্তফা, সংসদস সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক, জাফর আলম, কানিজ ফাতেমা মোস্তাক, পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম, টুরিস্ট পুলিশের এসপি মো. জিল্লুর রহমান, কক্সবাজার প্রেসক্লাবের সভাপতি আবু তাহের, পৌর মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরীসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মূলত বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে কক্সবাজারকে বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে এবং এখানকার পর্যটন শিল্পের প্রসারে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান আয়োজকরা। আজ বুধবার থেকে আগামী ৩ অক্টোবর পর্যন্ত পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যাল চলবে।
পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যালকে ঘিরে কক্সবাজার শহরকে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। হোটেল-মোটেল,রেস্তোরাঁ ও পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পর্যটক বরণে নিয়েছে নানা প্রস্তুতি। পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যালের জন্য মেলার মঞ্চ ও দুই শতাধিক স্টল নির্মাণ করা হয়েছে। হোটেল-মোটেল থেকে শুরু করে খাবারের রেস্তোরাঁ, কিটকটসহ পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে জড়িত সব প্রতিষ্ঠানে ‘বিশেষ ছাড়’ দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। তবে কয়েকজন পর্যটক হোটেলে ঘোষণা দেওয়া স্যার না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন।
ঢাকা থেকে আসা পর্যটক রফিকুল ইসলাম বলেন, টেলিভিশনের ছাড় দেওয়ার কথা শুনে কক্সবাজার আসার পর এখানে দেখি কোন ছাড় নেই।
পর্যটন মেলার আহ্বায়ক ও কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন বলেন, মেলায় নানা প্রকার স্টল রয়েছে, পর্যটন শিবিরে এসব স্টলে নানা প্রকার পণ্য ও বিভিন্ন প্রকার পর্যটন সেবা তুলে ধরেছে।
সৈকতের লাবনী পয়েন্টে গতকাল সন্ধ্যায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভালো ভাস্কর্য উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক শাহিন ইমরান। এ সময় তিনি বীচ বাইক দিয়ে একটি র্যালি করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা শিক্ষার্থীদের নিয়ে বালু ভাস্কর্য নির্মাণকারী সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও বর্তমান কেন্দ্রীয় যুবলীগ নেতা ইশতিয়াক আহমেদ জয় বলেন, আগামী প্রজন্মকে বঙ্গবন্ধু বাঙালির স্বাধীনতা ও প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারে জানাতেই এই আয়োজন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ ইয়ামিন হোসেন জানান, মেলায় প্রতিদিন সার্কাস প্রদর্শনী, বিচ বাইক র্যালি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ডিজে শো, আতশবাজি, রোড শো, সেমিনার, ঘুড়ি উৎসব, ম্যাজিক শো, ফায়ার স্পিন, লাইফ গার্ড রেসকিউ প্রদর্শনী, ফানুস উৎসব, সার্ফিং প্রদর্শনী, বিচ ম্যারাথন, বিচ ভলিবল, পুরস্কার বিতরণী ও সমাপনী অনুষ্ঠান এবং কনসার্ট থাকবে। এ মেলায় পর্যটক ও দর্শনার্থীদের বিনোদনে স্থানীয় শিল্পীর পাশাপাশি বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শিল্পীরা আসছেন। তাদের মধ্যে কুষ্টিয়া লালন একাডেমি ও সিলেটের আঞ্চলিক ভাষার শিল্পীরা। এ ছাড়াও সুনামগঞ্জ থেকে আসা শিল্পীরা পরিবেশন করবেন হাসন রাজার গানসহ আঞ্চলিক ভাষায় নানা গান। ময়মনসিংহ থেকে মহুয়াপালা, কুড়িগ্রাম থেকে ভাওয়াইয়া গানের শিল্পীরাও আসবেন। বান্দরবান এবং খাগড়াছড়ি থেকে আসবেন ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দল। চট্টগ্রাম থেকে আঞ্চলিক গানের খ্যাতিমান শিল্পী প্রেম সুন্দর ছাড়াও আসবেন জাতীয় পর্যায়ের শিল্পীরা। একেক দিন মঞ্চে গাইবেন লিজা, ঐশী, তানজির তুহিন, রবি চৌধুরী, নিশিতা বড়ুয়াসহ আরও অনেক জাতীয় শিল্পী।
অপরদিকে বৃহস্পতিবার পড়েছে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী। শুক্র ও শনিবার সাপ্তাহিক ছুটি। তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে লাখো পর্যটকের সমাগম হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
টুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের পুলিশ সুপার জিল্লুর রহমান বলেন, পর্যটন মেলা ও বিচ কার্নিভ্যাল এবং তিনদিনের ছুটিতে কক্সবাজারে ব্যাপক পর্যটক সমাগম হবে। পর্যটকদের সার্বিক নিরাপত্তায় বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারকে দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে তুলে ধরতে এই মেলা ও বিচ কার্নিভ্যালের আয়োজন করা হয়েছে। আমরা আশা করছি,নানা বৈচিত্রে ভরা সাত দিনের এ উৎসরে রঙ বিশ্বব্যাপী ছড়ি পড়বে।