চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘যে তোমার সাথে অসদাচরণ করলো, তার সাথে তুমি ভালো ব্যবহার করো’

মহামহিমান্বিত রমজান, পর্ব-২

রমজানুল মোবারকের ফজিলত: রমজানের দুটি ফজিলত। মানসামা রমাদান ওয়া ইখতে সাবান গুফেরালাহ মা তাকাদ্দামা মিন জামবিহি। যে রোজা রাখবে ইমান রেখে এবং সাওয়াবের আশা করে, বিশ্বাস রেখে তাহলে আল্লাহ তাবারাকা ওয়া তায়ালা আল্লাহ নবীর মাধ্যমে ঘোষণা দিয়েছেন, গুফিরালাহু মা তাকাদ্দামা মিন জামবিহ। পূর্বের যত পাপ আছে তা আল্লাহ পাক মাফ করে দেবেন। ওয়ামান ক্ব মা লাইলান, দ্বিতীয় আরেকটি থাকে, রাত্র জাগরণ করে একটু নামাজ পড়া। ক্বিয়ামুল লাইল। এর অর্থ হলো, তারাবিহ যেটা আমরা পড়ে থাকি।

এই তারাবিহ যেটা আমরা পড়ে থাকি এখানে ৮ রাকাতও এর ভেতরে থাকে, ১০ রাকাতও এর ভেতরে থাকে, অতএব আমরা বেশিরটা যদি আদায় করি অর্থৎ ২০ রাকাত যদি আদায় করি তাহলে অল্প যেগুলো আছে আমরা সেগুলো তার ফজিলতের মধ্যে পেয়ে যাবো। অতএব আমরা নামাজ ২০ রাকাত না ৮ রাকাত সেদিকে না তাকিয়ে, আমরা নিয়মিতভাবে তারাবির নামাজটা পড়ার চেষ্টা করি। দ্বিতীয় আরেকটি হলো তারাবির ভিতরে কুরআন মজিদ একবারে শেষ করা। সারা রমজান মাসে একবার যদি কেউ কুরআন মজিদ পাঠ করে তবে একটা সুন্নত আদায় হলো। সে যদি কেউ ৭ দিনে করে, ১০ দিনে করে, সেটাতেও কোন সমস্যা নেই।

কিন্তু তারাবিহ কিন্তু রমজান মাসের ২৯ তারিখ পর্যন্ত, অর্থৎ রমজানের শেষ দিন পর্যন্ত সুন্নত থেকেই যাবে। তারাবির নামাজটা আমাদের মা বোনরাও পড়বে। মসজিদেও পড়তে পারে। তবে যদি কেউ ঘরে ব্যবস্থা করে, খতমে তারাবির ব্যবস্থা অথবা সুরা তারাবির ব্যবস্থা, এটা পড়তে চায়, এবং কোরান খতমের ব্যবস্থা তাতেও কোন সমস্যা নাই। এটা যে মসজিদেই পড়তে হবে এমন কোন কিছু না। মসজিদ ছাড়া বাড়িতে হোক বা নিজেদের ব্যবস্থাপনা হোক সেখানেও তারাবির নামাজ আদায় করা যায়। শুধু মাত্র ফরজ নামাজটি মসজিদে পড়ে জামাত শেষ করে তারপর ঘরে হোক বা নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় যে কোন জায়গায় হোক, হোক সেখানে গিয়ে তারা পড়তে পারে। অনেক সময় ফ্ল্যাটের নিচে এরকম ব্যবস্থাপনা থাকে, তাতে কোন সমস্যা নেই। খতম তারাবিহ পড়তে পারে। রোজার ফজিলতের ভিতরে ইফতারের একটি ফজিলত। ইফতারের সময় সূর্য অস্ত যাবার সঙ্গে সঙ্গে দেরি না করে ইফতার করা, এটাও একটা ফজিলতের বিষয়।

ইফতারের জন্য নিজে যেমন করবে তেমনি ঠিক অনুরূপ ভাবে অপরকেও যদি ইফতার করায় তবে হাদিসে আছে, সামান্য একটু দুধ দিয়ে হোক, সামান্য একটু শরবত দিয়ে হোক, যদি অন্য কোন ভাইকে ইফতার করায় তবে একটি রোজা যে সে রাখলো সেই একটি রোজার সোয়াব সে পেয়ে যাবে। মিন গাইরি আই ইন কাসারিন উজুরিহিম শিআ, কিন্তু যিনি রোজা রেখেছেন, রোজাদার রোজা রেখেছেন, তার সোয়াবে কোন কমি হবেনা। যিনি করালেন তিনি অনুরূপ সাওয়াব পেয়ে যাবেন। এটা আল্লাহর তরফ থেকে বিরাটবড় হাদিয়াহ, বিরাট বড় গিফট। অতএব আমরা এ বিষয়টাও বিশেষ ভাবে লক্ষ রাখবো। এবং সহুরে, শেষ রাতে যে খাবার আমরা খাই, সেটি সর্বশেষ সময়ে খাওয়া অর্থাৎ সময় শেষ আর আমার সেহরি খাওয়াও শেষ। এটা হলো সর্বোত্তম। দেরি করে সেহরি খাওয়া। এবং খুব দ্রুত অর্থাৎ ওয়াক্ত হবার সাথে সাথে ইফতার করা। আর আল্লাহর নবী হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) এ সময় বেশি বেশি কলেমা শরিফ পড়তেন। এবং বেশি বেশি জান্নাত চাইতেন। আমরাও বেশি বেশি জান্নাত চাইবো। দোযোখ থেকে পানাহ চাইতেন, ইয়া আল্লাহ তুমি আমাকে দোযখ থেকে রক্ষা কোরো। এ তিনটি বিষয় এবং আমরা বেশি কোরান তেলওয়াত করবো। এবং দান খয়রাত যত বেশি পারি, অবশ্যই আমরা সেটার দিকে বিশেষ খেয়াল করবো। এই দান খয়রাতের মধ্যে সবসময় আমরা দেখবো আমাদের নিকট আত্মীয় কারা। দানের ভেতরে একটা হলো ফরজ। যেটা যাকাত। এই যাকাতটা যদি দেন, তাহলে তাদের দিতে পারেন, যারা দরিদ্র আত্মীয় স্বজনের ভেতরে রয়েছেন। এ সময় একটা ফরজে ৭০টা ফরজের সোয়াব হবে।

আর একটা নফল করলে নফলের সমান সোয়াব আদায় হবে মাহে রমজানের ইবাদতে। অনেকেই অপেক্ষায় থাকেন যে সেটা যাকাত হোক বা অন্য কোন নফল দান হোক, সেটা আরো বেশি বেশি করার চেষ্টা করা এবং নিকট আত্মীয় দিয়ে সেটা শুরু করা। আমরা অনেক সময় দেখি আমাদের অনেক আত্মীয় স্বজনের সাথে কিছুটা মনোমালিন্য থাকে। তবে মনোমালিন্য থাকলেও সেটাকে ভুলে গিয়ে আমরা যদি দান করি, তাহলে আল্লাহ বেশি খুশি হবেন। হাদিস শরিফে এসেছে সিলবান কাতায়াক, তোমার থেকে আলাদা হলো, যে বিচ্ছিন্ন করলো তোমাকে, তাকে তুমি জোড়ো। তার সঙ্গে তুমি সদাচার করো। তার সঙ্গে তুমি ভালো ব্যবহার করো। ওয়াফু আন্না জলামা। যে তোমার ওপর জুলুম করে তুমি তাকে ক্ষমা করো। এমনিতে যে তোমার জন্য কিছু করে, তার প্রতিদানে সবাই কিছু করার চেষ্টা করে। কিন্তু প্রথম এবং প্রধান যেটা তা হলো যে তোমার সাথে অসদাচরণ করলো, তার সাথে তুমি ভালো ব্যবহার করো। এটি ইসলামের একটি বড় আদর্শ।

বক্তব্য: হাফেজ মাওলানা মুফতি রুহুল আমীন, খতিব, বায়তুল মোকাররম, জাতীয় মসজিদ