এই খবরটি পডকাস্টে শুনুনঃ
ব্যাংক একীভূতকরণ আতঙ্কে শেষ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছর জানুয়ারি- ১ মাসের ব্যবধানে ব্যাংকে আমানত কমেছে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যংকের প্রকাশিত ‘ইসলামিক ব্যাংকিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স স্টাটিসটিক’ শীর্ষক প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে।
সেখানে দেখা যাচ্ছে: যেখানে শেষ ডিসেম্বরে ব্যাংকিং খাতে আমানত ছিলো ১৭ লাখ ৭০ হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা। সেখানে জানুয়ারিতে এসে সেই আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ ৫৭ হাজার ৪২৩ কোটি টাকা। টাকার অঙ্কে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা কম।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে: ব্যাংক খাতের মোট আমানতের মধ্যে জানুয়ারি শেষে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে রয়েছে ৪ লাখ ১৩ হাজার ৯৬৯ কোটি টাকা। যা গত ডিসেম্বর শেষে ছিল ৪ লাখ ২২ হাজার ৪৬৪ কোটি টাকা।
সে হিসাবে শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকগুলোতে জানুয়ারিতে আমানত কমেছে ৮ হাজার ৪৯৫ কোটি টাকা। আর প্রচলিত ধারার ব্যাংকগুলোতে কমেছে ৪ হাজার ৪৪৩ কোটি টাকা।
এমন পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ব্যাংকাররা বলছেন: সুদ যোগ হয়ে সব সময় আমানতের স্থিতি বাড়ে। কিন্তু জানুয়ারিতে কেন কমল, তার সুনির্দিষ্ট কারণ বলা কঠিন। গত ডিসেম্বরে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি দুর্বল ব্যাংক একীভূতকরণের সিদ্ধান্ত জানানোর পর না বুঝে অনেকে টাকা তোলা শুরু করেন।
‘‘মার্চে আনুষ্ঠানিক একীভূতকরণ শুরুর পর আতঙ্ক আরও বেড়েছে। হয়তো তারই প্রভাবে আমানত কমেছে।’’
এ প্রসঙ্গে অর্থনীতিবীদ ড. মাহফুজ কবীর বলছেন: একীভূতকরণ নিয়ে অনেক আমানকারীদের মধ্যে ভয় রয়েছে। কোন ব্যাংক কার সঙ্গে একীভূত হয় এবং একীভূত হলে টাকা ফেরত পাওয়া যাবে কি না এমন সন্দেহে অনেকেই টাকা তুলে নিচ্ছেন।
‘‘এর বাইরে মূল্যস্ফীতি বাড়ায় বাড়তি টাকার প্রয়োজন হওয়ায় অনেক গ্রাহক তাদের ফিক্সড ডিপোজিট ভাঙ্গানোসহ অন্যান সঞ্চয়ের টাকা ব্যাংক থেকে তুলে নিচ্ছেন। এটাও আমানত কমার একটি কারণ।’’
এমন পরিস্থিতিতে বেসিক ব্যাংকের পক্ষ থেকে অর্থমন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে বলা হয়েছে: ৮ এপ্রিল একটি বেসরকারি ব্যাংকের সঙ্গে একীভূতকরণ নিয়ে সংবাদ প্রকাশের প্রেক্ষিতে অস্বাভাবিকভাবে আমানত উত্তলন করা হচ্ছে।
এমন পরিস্থিতিতে গভীর সঙ্কটে পড়েছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন ব্যাংকটি।
দুর্বল ব্যাংকের সঙ্গে সবল ব্যাংকের একীভূতকরণ প্রক্রিয়ার আলোচনার মাঝে ৪ ফেব্রুয়ারি ব্যাংকিং খাতে শৃংখলা ফেরাতে ও সুশাসন নিশ্চিত করতে ১৭ দফা রোডম্যাপ ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৪ মার্চ পদ্মা ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক, ৩ এপ্রিল সরকারি খাতের রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংককে (রাকাব) বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে এবং বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংককে (বিডিবিএল) সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এরপর ৮ এপ্রিল সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংককে এবং সবশেষ বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংককে একীভূত করার সিদ্ধান্ত হয়।