আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নয় বছর পার করার পর ফর্মের তুঙ্গে আছেন সিকান্দার রাজা। জিম্বাবুয়েকে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে নিতে রেখেছেন অবদান। ব্যাট হাতে পারফর্ম করে বাছাইপর্বে হয়েছেন টুর্নামেন্ট সেরা খেলোয়াড়।
সম্প্রতি বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টুয়েন্টি সিরিজেও হয়েছেন সেরা ক্রিকেটার। প্রথম ওয়ানডেতে একই দলের সঙ্গে অপরাজিত ১৩৫ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংস খেলে হন ম্যাচ সেরা।
শৈশবকাল থেকেই ফাইটার পাইলট হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন সিকান্দার রাজা। পাকিস্তান বিমান বাহিনীতে (পিএএফ) ফাইটার পাইলট হওয়ার আশায় প্রশিক্ষণের জন্য সাড়ে তিন বছর কাটিয়েছিলেন। চোখের সমস্যার কারণে তার স্বপ্ন পূরণ হয়নি।
তবে পিএএফ কলেজে কঠোর ট্রেনিং রাজাকে জীবন পাল্টাতে ও একজন ক্রিকেট যোদ্ধা হওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি তৈরিতে বড় ভূমিকা রেখেছিল। ফাইটার পাইলট হতে না পেরে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হন রাজা। খেলাধুলায় বেশ দেরিতে আসার পর তিনি ক্রিকেটার হন। জিম্বাবুয়ের নাগরিকত্ব নিয়ে দেশটির প্রতিনিধিত্ব করছেন।
টাইগারদের বিপক্ষে ৩০৪ রান তাড়া করতে নেমে ১৪তম ওভারে জিম্বাবুয়ের স্কোর ছিল ৩ উইকেটে ৬২ রান। কঠিন সেই পরিস্থিতিতে ইনোসেন্ট কাইয়ার সঙ্গে গড়েন ১৯৪ রানের বিশাল জুটি। ১০৯ বলে ১৩৫ রান করে দলকে উদ্ধার করে দলকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন।
ম্যাচ শেষে চাপ সামলে এমন দারুণ ইনিংস খেলার ব্যাপারে রাজা বলেন, ‘আমি মিথ্যা বলবো না। ভালো খেলার চাপ অবশ্যই আছে। এয়ার ফোর্স ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আসাটা চাপ সামলাতে অবশ্যই সাহায্য করে। আমরা হাল ছাড়ি না। আঘাত পাওয়া, হাত পায়ের আঙুল ভাঙা এসবের কোনোকিছুরই আমি পরোয়া করি না।’
‘পিএএফ কলেজে সাড়ে তিন বছর কাটানোয় এমন মানসিকতা তৈরিতে আমাকে সাহায্য করেছে। আমি ফাইটার পাইলট হতে পারিনি। তবে একজন মানুষ হিসেবে আমি সবসময় একজন যোদ্ধা থাকবো বজিম্বাবুয়ে বলেই মনে করি। মানসিক এবং শারীরিকভাবে প্রশিক্ষণ নেয়ার সুফল পাওয়া যাচ্ছে।’
বোলিং করার সময় সাইড স্ট্রেন ইনজুরিতে পড়েন হার্ডহিটার ব্যাটার রায়ান বার্ল। বাংলাদেশের ইনিংসের ২১তম ওভারে তিনি মাঠ ছাড়েন। বার্ল ব্যাটিং নাও করতে পারেন এই চিন্তা থেকেই দ্রুত রান তাড়া করছিল জিম্বাবুয়ে।
কাইয়ার সঙ্গে বিশাল জুটি গড়ার সময় বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে রানের জন্য ক্ষুধার্ত ছিলেন রাজা। ব্যাটিং করার সময় উরুতে আঘাত পেয়ে রান নেয়ার সময় ঠিকঠাক দৌড়াতে পারছিলেন না। ব্যথার নিয়েই ব্যাট লড়াই করে নিজের যোদ্ধা মানসিকতাটাই দেখালেন ৩৬ বর্ষী ক্রিকেটরা।
‘দুর্দান্ত খেলছিল ইনোসেন্ট। তাই আমার উপর ভালো খেলার চাপ ছিল। পরিকল্পনা ছিল জেতার জন্য খেলবো। তবে আমরা পরিকল্পনাকে ছোট ছোট অংশে ভাগ করেছিলাম। এই ছোট লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে এবং সেখান থেকে জয় পেতে চেয়েছিলাম।’
১৩৫ রানের ইনিংসে ৮ চারের পাশাপাশি ৬টি ছক্কা মারেন সিকান্দার রাজা। ছক্কায় মারতে পারদর্শী হওয়ার পেছনে কোনো রহস্য নেই বলেও তিনি জানান।
‘ভালোভাবে টাইমিং করতে পারাটা আমি নিশ্চিত করি। একবার যদি আপনার আত্মবিশ্বাস থাকে এবং আপনি যে বলটি চেয়েছিলেন তা পেয়ে যান, তারপরে যা হওয়ার তাই হয়। মূলত কোনো গোপন বিষয় নেই।’
টানা নয় বছর ও ১৯ ম্যাচ হারের পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ওয়ানডেতে জিতল জিম্বাবুয়ে। এমন জয়ে রাজা আনন্দিত হলেও সিরিজের বাকি দুই ম্যাচে টাইগারদের বেশ সমীহই করলেন।
‘আমরা নয় বছরে বাংলাদেশকে হারাতে পারিনি। জয় সঠিক সময়ে আসছে। ভারত আসছে। আমরা অস্ট্রেলিয়া যাচ্ছি। আমাদের সামনে বিশ্বকাপের অপেক্ষায় আছে। জিম্বাবুয়ের জন্য এটি একটি ভালো সময়।’
‘এই সত্যটি আমরা অস্বীকার করতে পারি না যে বাংলাদেশ একটি বড় ক্রিকেট রাষ্ট্র। তারা ওয়ানডে সুপার লিগের পয়েন্ট টেবিলে এক কিংবা দুই নম্বরে বসে আছে। তারা ওয়েস্ট ইন্ডিজে জিতেছে। আমি বাংলাদেশকে মোটেও অসম্মান করতে রাজি নই। তারা একটা পাওয়ার হাউস।’
বাংলাদেশকে সম্মান দেখালেও রোববার দ্বিতীয় ওয়ানডে জিতেই সিরিজ জেতার আশাবাদ ব্যক্ত করে রাজার ভাষ্য, ‘আমরা সঠিক মনোভাব নিয়ে আগাতে চাই।’