বড় লক্ষ্য তাড়ায় টপঅর্ডারের ৫ উইকেট দ্রুত হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। রানের গতি সচল থাকলেও ব্যাটারদের আসা-যাওয়ায় সফরকারীরা খেই হারায়। ধাক্কাটা আর সামলানো যায়নি। তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে প্রথমটিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে বৃষ্টি আইনে ৪৪ রানের পরাজয় দেখেছে নাজমুল হোসেন শান্তর বাংলাদেশ।
রোববার ডানেডিনে তিনবার বৃষ্টিবাধার মুখে পড়ে ম্যাচ। টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামা কিউইরা ৭ উইকেটে ২৩৯ রানে থামে। বৃষ্টি আইনে টাইগারদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৩০ ওভারে ২৪৫ রান। ব্যাট হাতে লড়াকু মেজাজ দেখিয়ে টিম টাইগার্স ৯ উইকেটে ২০০ রানে পৌঁছাতে পারে।
ওয়ানডে বিশ্বকাপ দলে না থাকা সৌম্য সরকার ফিল্ডিংয়ে ছেড়েছেন দুটি ক্যাচ। ব্যয়বহুল বোলিংয়ে ৬ ওভারে ৬৩ রান খরচায় ছিলেন উইকেটশূন্য। ব্যাটিংয়ে নেমে রানের খাতা না খুলেই অ্যাডাম মিলনের বলে টম ল্যাথামের হাতে ধরা পড়েন। এক রানে লাল-সবুজের দল প্রথম উইকেট হারায়।
শুরুটা সাবলীল করলেও ইনিংস বড় করতে ব্যর্থ হন শান্ত। রিভার্স সুইপ খেলতে গিয়ে ১৫ বলে ২ চারে ১৭ রান করে ইশ সোধির বলে বোল্ড হন। দলে ফেরা এনামুল হক বিজয়ের ব্যাটে ছন্দ দেখা গেলেও পাননি ফিফটি। অভিষিক্ত ডানহাতি পেসার জশ ক্লার্কসনের বলে পুল শট খেলতে গিয়ে ফিরতি ক্যাচ দেয়ার আগে খেলেন ৩৯ বলে ৫ চারে ৪৩ রানের ইনিংস।
চারে নামা লিটন দাস করেছেন হতাশ। বড় ইনিংস খেলার আশা জাগিয়ে ১৯ বলে এক চার ও এক ছক্কায় ২২ রানে থামেন। ক্লার্কসনের স্লোয়ার বাউন্সারে অহেতুক হুক করতে গিয়ে বিপদ ডেকে আনেন। বল তার গ্লাভসে লেগে উইকেটরক্ষক টম ব্লান্ডেলের গ্লাভসে জমা পড়ে।
মুশফিক মাত্র ৪ রান করে রাচীন রবীন্দ্রর বলে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে আনেন সর্বনাশ। তার গ্লাভসে বল ছুঁয়ে ব্লান্ডেলের গ্লাভসে ধরা পড়লে মাঠ ছাড়েন।
ষষ্ঠ উইকেটে দ্রুত রান তুলে ৫৬ রান যোগ করেন তাওহীদ হৃদয় ও আফিফ হোসেন। সুইপ খেলতে গিয়ে হৃদয়ের ব্যাটের উপরের কানায় বল লেগে যায়। সোধির বলে ডিপ ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে মিলনে ক্যাচ নেন। হৃদয় ২৭ বলে ২ চার ও এক ছক্কায় ৩৩ রানে থামেন।
খানিকপর আফিফও তাকে অনুসরণ করেন। বাঁহাতি ব্যাটার জ্যাকব ডাফির বলে শর্ট মিড উইকেটে উইল ইয়াংয়ের হাতে সহজ ক্যাচ তুলে দেন। সাবলীল ব্যাটিংয়ে ২৮ বলে ৫ চার ও এক ছক্কায় তার ব্যাটে আসে ৩৮ রান।
এরপর ডানেডিনে অন্যতম সেরা একটি ক্যাচের দেখা মেলে। শরিফুল ইসলামের শট বাউন্ডারি লাইন পেরিয়ে যাচ্ছিল। ডিপ মিড উইকেটে দড়ির কাছে দাঁড়িয়ে থাকা উইল ইয়াং শরীর খানিকটা পিছিয়ে শূন্যে লাফ দেন। ডান হাতে বল তালুবন্দি করার পর শেষ মুহূর্তে শরীর বাঁকিয়ে নিজেকে সীমানার ভেতর রাখেন। টিভি আম্পায়ার রিপ্লেতে আউট ঘোষণা করলে ৫ রানে ফেরেন শরিফুল।
অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজের ২১ বলে এক চার ও ২ ছক্কায় ২৮ রানের অপরাজিত ইনিংসটি শেষদিকে খানিক ব্যবধান কমাতে পেরেছে। কিউইদের পক্ষে দুটি করে উইকেট পকেটে পোরেন অভিষিক্ত ক্লার্কসন, সোধি ও মিলনে।
এর আগে রোববার ডানেডিনে টস জিতে আগে বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। বৃষ্টির কারণে খেলা শুরু হতে এক ঘণ্টা ১০ মিনিট বিলম্ব হয়।
প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে রানের খাতা না খুলে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে ধরা পড়ে রাচীন রবীন্দ্র। শেষ বলে দ্বিতীয় স্লিপে এনামুল হক বিজয়ের হাতে ধরা পড়ে শূন্য রানে ফেরেন হেনরি নিকোলস। দশম ওভারের প্রথম বলে জীবন পান ১৮ রানে থাকা ল্যাথাম। কিউই অধিনায়ক মোস্তাফিজুর রহমানের বলে প্রথম স্লিপে ক্যাচ দিলেও তা নিতে পারেননি সৌম্য।
স্বাগতিকদের স্কোর যখন ১৩.৫ ওভারে ২ উইকেটে ৬৩, দ্বিতীয়বার বৃষ্টিবাধার মুখে পড়ে খেলা। ৪৫ মিনিট পর খেলা আবারো শুরু হয়। ততক্ষণে ম্যাচ ৪০ ওভারে নেমে আসে।
হাসান মাহমুদের করা ১৯তম ওভারের প্রথম বলে দুই রান নিয়ে ল্যাথাম ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৪ হাজার রান পূর্ণ করেন। দ্বিতীয় বলেও নেন দুই রান। এরপর আবারো নামে বৃষ্টি। তৃতীয় দফায় বৃষ্টির বাধার মুখে খেলা বন্ধের আগে কিউইদের স্কোর ছিল ১৯.২ ওভারে ২ উইকেটে ১০৮ রান।
তৃতীয় দফায় বৃষ্টি বাগড়া দেয়ার পর ৩০ ওভারে নেমে আসে ম্যাচ। বাইশ গজে দ্রুত রান তুলতে থাকেন ল্যাথাম ও ইয়াং। ২৩তম ওভারে ৬৮ রানে আবারো জীবন পান ল্যাথাম। নিজের বলে ফিরতি ক্যাচ ফেলে দেন সৌম্য।
সেঞ্চুরির দুয়ারে যাওয়া ল্যাথাম নার্ভাস নাইন্টিজে কাটা পড়েন। ৭৭ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৯২ রান করে মেহেদী হাসান মিরাজের বলে বোল্ড হন। ভেঙে যায় তৃতীয় উইকেটে ১৭১ রানের জুটি। ১১ বলে ২০ রান করে মার্ক চ্যাপম্যান রান আউট হওয়ার পর শতক হাঁকান ইয়াং। ৮৪ বলে ১৪ চার ও ৪ ছক্কায় ১০৫ রানের ইনিংস খেলেন।
শেষদিকে টম ব্লান্ডেল ও অভিষিক্ত জশ ক্লার্কসনও হন রান আউট। নিউজিল্যান্ডের ইনিংস ৭ উইকেটে ২৩৯ রানে থামে। বৃষ্টি আইনে টাইগারদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ২৪৫ রান।
বাংলাদেশের পক্ষে ৬ ওভারে ২৮ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন শরিফুল। মিরাজ একটি উইকেট পেলেও ছিলেন খরুচে, ৫ ওভারে দেন ৫৩ রান।