‘আসলে মেয়েদের ফুটবল দল গড়া ছাড়াও একটা প্রফেশনাল লিগের যে ক্লাব, তাদের প্রত্যেকের একাডেমি থাকা উচিৎ। ওই হিসেবে তো তাদের সবার একাডেমি নাই। মেয়েদের ফুটবলটা তো আরও পরে আসছে। মেয়েদের ফুটবলের পাশাপাশি ছেলেদের ফুটবলের জন্য একাডেমি করা দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।’
সাফ অনূর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপাজয়ী বাংলাদেশ দলের কোচ সাইফুল বারী টিটু চ্যানেল আই অনলাইনকে দেশের ক্লাবগুলোর একাডেমি না থাকা সম্পর্কে আক্ষেপ নিয়ে বললেন এভাবেই। সঙ্গে ফুটবলকন্যাদের লিগ আয়োজনে সরকারকে ভূমিকা রাখতে অনুরোধ জানালেন।
বুধবার সকাল ১১টায় বাফুফের বাসে চড়ে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে আসেন শিরোপাজয়ী বীরকন্যারা, তাদের ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেয়া হয়। চ্যানেল আইয়ের সংবর্ধনা অনুষ্ঠান শুরুর আগে ফুটবলে সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে গুরুত্ব দিয়েই মেয়েদের ক্লাব ফুটবল মাঠে অব্যাহত রাখার তাগিদ দিলেন সাইফুল বারী।
‘সব দেশের জাতীয় ফুটবলাররা ক্লাব একাডেমি থেকে তৈরি হয়। বিদেশে ফেডারেশনগুলো শুধু খেলা আয়োজন করে। খেলোয়াড় তৈরি করা তাদের কাজ না, ক্লাবের কাজ। পরে জাতীয় দল ক্যাম্প করতে পারে। আমার বিনীত অনুরোধ থাকবে সরকারের প্রতি, ক্লাবগুলোকে যেন সাহায্য করা হয়। যদি ক্লাবকে সাহায্য করা যায়, ক্লাব যদি স্বাবলম্বী হয়, তারাও কিন্তু পদক্ষেপগুলাতে আগাতে পারবে। ক্লাবেরও তো টাকার ব্যাপার আছে। সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনা নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে আগাতে হবে।’
![](https://i0.wp.com/www.channelionline.com/wp-content/uploads/2024/02/Channeliadds-Reneta-16-04-2024.gif?fit=300%2C250&ssl=1)
স্বাধীনতার পর থেকে নব্বই দশক পর্যন্ত ক্লাবগুলোর স্পন্সরের অভাব হতো না। উল্টো কে আগে স্পন্সর করবে তা নিয়ে চলতো তীব্র প্রতিযোগিতা। বর্তমানে সেই জোয়ার না থাকার কারণও ব্যাখ্যা করলেন বাঘিনীদের কোচ।
‘এখন এতো বেশি স্পোর্টস, এতো বেশি সবকিছুতে বাচ্চারা যুক্ত। ফুটবলটা আমরা সেল করতে পারছি কিনা, ক্রিকেট বেশি সেল হচ্ছে কিনা, এটা আসল বিষয়। এগুলো বোঝার ব্যাপার রয়েছে। আমাদের সময় ছিল একটা টিভি চ্যানেল আর সিনেমা হল। বিনোদনের আর কোনো মাধ্যম ছিল না। এখন তো মেয়েদের কাছেও মোবাইল থাকে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। আগেকার কথা ধরে বসে থাকলে হবে না। আধুনিক বাচ্চারা কীভাবে আগাতে চায়, ভাবতে হবে। ফুটবল উন্নয়নে সেরা পন্থা হচ্ছে একাডেমি।’
একের পর এক সাফল্য এনে দেয়া মেয়েদের সাফল্য নিয়ে মাতামাতি হলেও ব্র্যান্ড ইমেজ পর্যাপ্তভাবে কাজে লাগানো যাচ্ছে না। তাতে আসছে না পর্যাপ্ত স্পন্সর। ফুটবলারদের সচ্ছলতার রাস্তাও তৈরি না হওয়ার শঙ্কা থাকছে। সাইফুল বারী টিটু অবকাঠামোগত উন্নয়নে পিছিতে থাকার বিষয়টি সামনে আনলেন।
‘যদি অবকাঠামো চান, মেয়েদেরটা এখনো যথেষ্ট না। আপনি যদি একটা একাডেমি চালাতে চান, তাহলে বড় বিল্ডিং লাগবে, অনেক মাঠের ব্যাপার থাকবে। ওই জিনিসগুলোর জন্য আমার মনে হয় যে, কর্পোরেট হাউজগুলো এগিয়ে আসলে সহজ হয়। আমরা অনেক কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, তারা যতটা পারে এগিয়ে আসছে। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোর সীমাবদ্ধতা আছে, সামাজিক দায়বদ্ধতার বাইরে যেয়ে তো বেশিকিছু করতে পারবে না। এখানে মনে হয় সরকারি সমর্থনটা বিশালভাবে দরকার। সরকারই আমাদেরকে যথেষ্টভাবে সমর্থন দিতে পারে। সরকার চেষ্টা করে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নানা সময়ে অনেক সমর্থন করেছেন, কোনো সন্দেহ নেই।’
‘আমরা এমন একটা অবকাঠামো তৈরি করতে চাই, যেখানে মেয়েরা আসবে ও সফল হবে। ওইটার জন্য আমাদের বড় ধরনের পরিকল্পনা লাগবে। আমাদের মাঠ থাকতে হবে, ৫০০ জন মেয়ে উঠবে ক্যাম্পে। এমন পরিকল্পনা অবশ্যই থাকতে হবে। এটার জন্য বড় আর্থিক সাহায্য লাগবে, যেটা সরকারই দিতে পারে।’
‘কর্পোরেট হাউজগুলো যথেষ্ট করছে, চ্যানেল আইও আগেই করেছে। অন্যান্য কর্পোরেট হাউজগুলো করে। এগুলো হল স্বীকৃতি। সবাই স্বীকৃতি পেলে খুশি হয়। আসল যে উন্নতি, এটা বড় টাকার ব্যাপার। ওইটার জন্য আপনার লাগবে সিরিয়াস কাজ, সময় এবং অর্থ।’
‘প্রধানমন্ত্রীর সামর্থ্যের মধ্যে থাকলে উনি না করে থাকবেন না। আমাদের মনে রাখতে হবে, শুধু মেয়েদের ফুটবল না, অনেকগুলো স্পোর্টস বাংলাদেশে আছে। সবার দিকেই নজর দিতে হবে। ওনার পক্ষে শুধু একদিকে নজর দেয়া সম্ভব না। এটাও আমাদের বুঝতে হবে।’