বিশ্বকাপের সুপার লিগ টেবিলের দ্বিতীয় দল ইংল্যান্ড, বাংলাদেশ আছে ছয়ে। টেবিলের সেই অবস্থানের মতো দুদলের পারফরম্যান্সেও স্পষ্ট পার্থক্য। তিনে থাকা ভারতের সঙ্গে সিরিজ জিতলেও দুইয়ের ইংলিশ দলের কাছে পাত্তাই পাচ্ছে না বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়ানোর আশা ছিল। আশার গুঁড়েবালি। ১৩২ রানের বড় ব্যবধানে জিতেছে ইংল্যান্ড, এক ম্যাচ হাতে রেখেই জিতে নিয়েছে সিরিজও।
টানা দুম্যাচে বিবর্ণ থাকা বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল সবচেয়ে দৃষ্টিকটু। বোলিং ছিল নির্বিষ। খুঁজে দেখা যাক টাইগারদের ভরাডুবির কিছু কারণ-
টস: ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণে টস গুরুত্বপূর্ণ। সেখানে ভাগ্যবান বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম ইকবাল। তবে প্রথম ম্যাচের পরিস্থিতি বিবেচনায় টস জিতেও এদিন ফিল্ডিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন তামিম। আগের ম্যাচে নিয়েছিলেন ব্যাটিং। তামিমের সিদ্ধান্ত এদিনও যথার্থ প্রমাণ করতে পারেননি সতীর্থরা! ইংল্যান্ড ৩২৬ রানের বড় সংগ্রহ গড়ে ফেলে।
মোস্তাফিজকে দেরিতে বোলিংয়ে আনা: প্রথম ওয়ানডেতে পঞ্চম বোলার হিসেবে ২১তম ওভারে মোস্তাফিজকে আক্রমণে এনেছিলেন তামিম। নতুন বলে কার্যকর ফিজ বলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হওয়ার পর বোলিংয়ে এসে তেমন কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারেননি। এদিনও একই কাজ করেছেন টাইগার অধিনায়ক। প্রথমদিকে স্পিন চালিয়ে ফিজকে আনলেন ১০ম ওভারে। তাসকিন দ্রুত প্রথম উইকেট নেয়ার পর ফিজকে আনেননি তামিম।
রয়-বাটলারের জুটিকে চাপে ফেলতে না পারা: ইংল্যান্ডের বড় সংগ্রহের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে চতুর্থ উইকেট জুটি। ওপেনার জেসন রয় ও অধিনায়ক উইকেটকিপার-ব্যাটার জস বাটলার ৯৩ বলে ১০৯ রানের জুটি গড়েন। দ্রুত প্রতিপক্ষের তিন উইকেট তোলার পর যে জুটির সামনে চাপ তৈরি করতে পারেনি বাংলাদেশ। বোলিং ছিল নির্বিষ।
জেসন রয়ের সেঞ্চুরি: অধিনায়ক তামিম প্রথম থেকেই ইংল্যান্ডের ব্যাটারদের স্পিনে কুপোকাত করতে চেয়েছিলেন। তাতে ভড়কে যাননি দীর্ঘদিন বিপিএলে খেলা জেসন রয়, সমানতালে রান তুলতে থাকেন। রান ও বলের মধ্যে খুব একটা ফারাক হতে দেননি। ক্যারিয়ারের ১২তম সেঞ্চুরি তুলে নেন ডানহাতি ওপেনার। ১২৪ বলে ১৩২ রানে আউট হন। রয়ের স্ট্রাইকরেট আটকে ফেলা বা তাকে রান তুলতে চাপে ফেলার কাজটা করতে পারেননি টাইগার বোলাররা।
বোলারদের ছয়ের বেশি রান দেয়া: তামিম পাঁচ বোলার ব্যবহার করেছেন। যার মধ্যে চারজনের ইকোনমি ৬-এর বেশি। একমাত্র তাইজুল ইসলাম ১০ ওভারে ৫৮ রান দিয়েছেন, সামান্য হলেও ছয়ের কম ইকোনমি তার। বাকি বোলাররা একসাথে হাত খুলে রান বিতরণ করলে ব্যাটারদের চাপে পড়ার মঞ্চ তৈরি হয়ে যায় প্রথম ইনিংসেই।
বাটলার-মঈনের স্ট্রাইকরেটে লাগাম টানতে না পারা: পঞ্চম ব্যাটার হিসেবে ইংলিশ অধিনায়ক জস বাটলার যখন ব্যাটে আসেন, তখন ৩ উইকেট হারিয়ে ৯৬ রান সফরকারীদের। চাপে থাকার পরও বাটলারের স্ট্রাইকরেট ১০০-এর বেশি ছিল। মিরাজের বলে আউট হওয়ার আগের দুই বলে দুটি ছক্কা হাঁকিয়ে সেটাকে আরও বাড়িয়ে নেন। ৬৪ বলে ৭৬ রানের পথে স্ট্রাইকরেট কখনই ১০০-এর নিচে আসতে দেননি বাটলার। একই কাজ করেছেন স্পিনিং অলরাউন্ডার মঈন আলীও, খেলেছেন ৩৫ বলে ৪২ রানের ইনিংস। বোলাররা শেষদিকে রান আটকাতে না পারায় হাতছাড়া হতে থাকে আশারপাল।
শেষ ৫ ওভারে ১১+ রানরেট: শেষ ৫ ওভারে ইংল্যান্ড ১১.৪০ রানরেটে ৫৭ রান তুলেছে, উইকেট হারিয়েছে মাত্র একটি। সেসময় ক্রিজে থাকা স্যাম কারেন ১৭৩.৬৮ স্ট্রাইকরেটে ১৯ বলে ৩৩ রান করেছেন। আদিল রশিদেরও স্ট্রাইকরেট ছিল ১২০। স্লগ ওভারে বোলারদের লাগাম ধরে রাখতে না পারা লক্ষ্যটা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।
টপ অর্ডারের ব্যর্থতা: বাংলাদেশের বোলিং কখনও কখনও কিছুটা বলার মতো হলেও এই সিরিজে ব্যাটিং ধারাবাহিক ব্যর্থতার গল্প বলছে। ভরাডুবি ঘটছে টপ অর্ডারে, মিডলে নেই প্রতিরোধ, গড়ে ওঠেনি জুটি, লোয়ার অর্ডারেও সমর্থন মেলেনি। প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচও একই চিত্র। ৩২৭ রান তাড়া করতে নেমে প্রথম ওভারের চতুর্থ বলে লিটন দাস ও পঞ্চম বলে নাজমুল হোসেন শান্ত উইকেট বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তৃতীয় ওভারের দ্বিতীয় বলে মুশফিকুর রহিমের আউট ভরাডুবির তালিকা সমৃদ্ধ করেছে। টপ অর্ডারের এই ছুঁড়ে আসার প্রবণতা বাকিদের উপর বাড়িয়েছে চাপ, করেছে দিশেহারা। রানরেটের সাথে পাল্লা দেয়া তাই সম্ভব হয়নি ইনিংসের কোনো পর্যায়েই।
শরীরিভাষা: বাংলাদেশ প্রথম ওয়ানডেতে ২০৯ রান করে জেতার জন্য ফিল্ডিংয়ে যেমন আগ্রাসী ছিল, দ্বিতীয় ওয়ানডেতে কোন খেলোয়াড়কে দেখে মনে হয়নি তারা সিরিজে সমতা টানার উদ্দেশ্যে নেমেছে। শরীরিভাষার মধ্যে যেন হারার আগেই হার মানার গল্প। অথচ চেনা মাঠ, ঘরের উইকেট, চেনা দর্শকের সামনে তাদের মাঝে স্পৃহার অন্য পর্যায়ই আশা করা যায়!