চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ শেষের জন্য কমিটি গঠন করা হবে। যুব ও ক্রীড়ামন্ত্রী নাজমুল হাসান পাপন বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, কমিটিতে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ (এনএসসি), বাফুফে ও একজন কারিগরি বিশেষজ্ঞ থাকবেন।
বৃহস্পতিবার দুপুরে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম পরিদর্শনে যান ক্রীড়ামন্ত্রী। এরপর নিজের পর্যবেক্ষণ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন।
নাজমুল হাসান পাপনের ভাষ্য, কমিটির সদস্যরা মিলে সময় মতো আমাদের প্রতিবেদন দিতে থাকবেন, এটার অগ্রগতি সম্পর্কে। কোনো জায়গায় পিছিয়ে গেছে কিনা, পিছিয়ে থাকলে কিসের জন্য, সেটা অন্তত জানাবে। এইভাবে আমরা যদি আগাতে থাকি, তাহলে আশা করছি যত দ্রুত সম্ভব কাজটা শেষ করা যাবে।
নিজের পর্যবেক্ষণ নিয়ে ক্রীড়ামন্ত্রী জানান স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজের দুটি বড় সমস্যা স্পিঙ্কলার (মাঠে পানি ছেটানোর যন্ত্র) এবং প্রেসবক্স। সমস্যার সমাধান করার বিষয়টি তিনি নিজেই দেখভাল করবেন। এনএসসির সঙ্গে বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবেন বলেও এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন।
‘সংস্কার কাজে পরিবর্তন করা খুব একটা অসম্ভব বলে আমার মনে হয় না। কিছু একটা তো করতেই পারব। সব না পারলেও বেশিরভাগই করা যাবে। এটাই হচ্ছে আমার পর্যবেক্ষণ। কিন্তু উনাদের সাথে কথা না বলে, কাগজপত্র না দেখে আসলে মন্তব্য করা ঠিক হবে না। কারণ এখানটায় আমরা কথা বলতে গেলে হয় এটা এনএসসির উপর দায় পড়বে, না হয় যারা আমাদের কনসালটেন্ট অথবা ফুটবল ফেডারেশন। কাজেই নির্দিষ্ট কাগজপত্র না দেখে এরকম মন্তব্য করাটা ঠিক হবে না।’
‘আমি ধরে নিচ্ছি, ভুল যারই হোক, সমস্যা আছে। সমস্যাকে নিরসন করা সম্ভব হলে আমরা অবশ্যই করবো। প্রধান বিবেচনায় যেটা থাকবে, বড় সমস্যা থাকলে তা দূর করা। বাকিগুলো হয়তো কিছু সমস্যা থাকবে, সেটা করতে গেলে আমাদের প্রকল্পের যে সময়কাল আছে, তার চেয়ে অনেক বেশি বেড়ে যাবে। অনেক দেরি হয়ে যাবে।’
‘আমাদের এখন পর্যন্ত যে লক্ষ্য শুনেছি, এই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে। আমরা ওইটাতেই থাকতে চাই। এর বাইরে যেতে চাই না। সময়ের কথা বলতে গিয়ে এমন কিছু যদি করি যে আন্তর্জাতিক ফুটবলই খেলতে পারব না, তাহলে তো লাভ নাই। সময়সীমার মধ্যে যা যা পরিবর্তন করা দরকার, সেটা করা যায় কিনা তা দেখে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব কাজ শেষের চেষ্টা করব।’
তিন বছর আগে প্রায় ৯৮ কোটি টাকা বাজেট বরাদ্দ রেখে শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের সংস্কার কাজ। ২০২৩ সালের জুনে কাজ শেষের কথা থাকলেও বাজেট স্বল্পতার কারণে তা হয়নি। সবমিলিয়ে সংস্কার কাজে প্রায় ১৫০ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে বলে জানানো হয়। পরে বাজেট আরও বাড়িয়ে তা পৌনে দুইশ কোটি টাকায় উন্নীত হয়।
ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করতে গেলে বাজেট আরও বাড়বে কিনা, এ প্রসঙ্গে ক্রীড়ামন্ত্রীর সাফ কথা, ‘এই মুহূর্তে বলা মুশকিল। বাড়বে কিনা সেটা আমি জানি না। এটা উনারা বলার পর জানতে পারব। বাড়লে তা কত পরিমাণে সেটাও জানি না।’
‘আপনারা প্রেসবক্স নিয়ে যে সমস্যার কথা বলছেন, সেটা আরও আগে মাথায় আসা উচিৎ ছিল। আমি যখন প্রথম দেখলাম, তখনই মনে হয়েছে এরকম পিলার তো সাধারণত কোথাও দেখি নাই। যা হওয়ার হয়েছে। যদি পরিবর্তন করা যায় করব, না পারলে ভবিষ্যতে যাতে এমন না হয় সেই চেষ্টা করব। কিন্তু পরিবর্তনের কথা বলে আরও এক বছর দুই বছর সময় বাড়ানো, সেটা আমার মনে হয় ঠিক হবে না।’
এনএসসির সাথে বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনের নীতি নির্ধারকদের দূরত্বের বিষয়টি নতুন কিছু নয়। নাজমুল হাসান পাপন ক্রীড়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালনের সময় সেই দূরত্ব কমবে কিনা, সেই প্রশ্নের উত্তর তিনি নিজেই দেন।
‘কোনো একটা স্থাপনা যখন করা হবে, সেটা সংস্কার হোক কিংবা নতুন করে করা হোক, যে যে ক্রীড়া ফেডারেশন এটার সাথে জড়িত, তাদের কাছ থেকে নিয়ে একটা পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে। ওই পরিকল্পনা স্বাক্ষর করতে হবে। যদি সেটার অনুমোদন হয়ে যায়, এটা নিয়ে কথা বলার আর উপায় নাই। একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, এনএসসিও কিন্তু কারিগরি দিক দিয়ে বিশেষজ্ঞ না। একেক খেলায় একেক রকমের চাহিদা। সেটা নির্দিষ্ট ফেডারেশনই ভালো বলতে পারবে যে তাদের চাহিদা কি। এখানে উনাদের আরও বেশি সম্পৃক্ত থাকতে হবে।’