রাজধানীর বেইলি রোডে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৪৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। গুরুতর অগ্নিদগ্ধ হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বহু মানুষ। মর্মান্তিক এ ঘটনায় শোকে নিমজ্জিত সারাদেশ। অগ্নিকাণ্ডের শোক তারকা ক্রিকেটার তামিম ইকবাল ও মুশফিকুর রহিমকেও ছুঁয়ে গেছে।
বিপিএলের ফাইনালে শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিপক্ষে ফরচুন বরিশালের হয়ে মাঠে নামবেন তামিম ও মুশফিক। শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচের কয়েকঘণ্টা আগে বাংলাদেশ দলের সাবেক দুই অধিনায়ক সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেইলি রোড ট্র্যাজেডিতে নিজেদের শোক প্রকাশ করেন।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেই প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা নেয়ার বার্তা দিয়েছেন তামিম। নিজের ফেসবুক পেজে লিখেছেন, ‘বেইলি রোডের ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি। আমাদের পরিবর্তন হওয়া উচিৎ। নয়তো কখনো পরিবর্তন হবে না!’
মুশফিক লিখেছেন, ‘আসসালামু আলাইকুম এবং আপনাদের সবাইকে জুম্মা মোবারক। আসুন আমরা তাদের (নিহতদের) বিদেহী আত্মার জন্য দোয়া করি, যারা গতকাল দুর্ভাগ্যজনকভাবে অগ্নিকাণ্ডের সময় প্রাণ হারিয়েছিলেন। আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুক।’
ফায়ার সার্ভিস জানায়, বৃহস্পতিবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে বেইলি রোডের একটি বহুতল ভবনের দ্বিতীয় তলায় ‘কাচ্চি ভাই’ রেস্টুরেন্টে আগুন লাগে। প্রায় ২ ঘণ্টার চেষ্টার পর রাত ১১টা ৫০ মিনিটের দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। সিড়িসহ ভবনটির অনেক স্থানে গ্যাস সিলিন্ডার ছিল বলেও ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়।
বেইলি রোডের বহুতল ভবনে ফায়ার এক্সিট না থাকায় ইতিমধ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় বীমা দিবস ২০২৪’ উদযাপন অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘সেখানে কোন ফায়ার এক্সিট নেই। আমাদের যারা আর্কিটেক্ট তাদের সব সময় অনুরোধ করি, আপনারা যখন ঘরবাড়ি তৈরি করেন, একটু খোলা বারান্দা, ফায়ার এক্সিট বা ভেন্টিলেশনের ব্যবস্থা করবেন। কিন্তু আর্কিটেক্টরা ওরকম ডিজাইন ঠিক মতো করে না। আবার মালিকরাও এক ইঞ্চি জায়গা ছাড়তে চায় না।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন জানিয়েছেন, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন অনেকেই।শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক ইনস্টিটিউটে আহত ১২ জনের কেউই শঙ্কা মুক্ত নয়। প্রধানমন্ত্রী আহতের সার্বিক খোঁজ খবর নিচ্ছেন বলে জানান তিনি।
ফায়ার সার্ভিসের সর্বশেষ তথ্য বলছে, এই পর্যন্ত ৩৯ জনের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। ৩৫ জনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারকে ২৫ হাজার টাকা এবং আহতদের পরিবারকে ১৫ হাজার টাকা সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
আগুনের ঘটনা অনুসন্ধানের জন্য ফায়ার সার্ভিস, পিবিআই এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তবে সিঁড়িসহ ভবনটিতে অনেক গ্যাস সিলিন্ডার থাকায় আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।