আগামী ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করছে আওয়ামী লীগ। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দানকারী গণমানুষের দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ইশতেহার শুধু একটি দলীয় ইশতেহার নয়, এটি প্রকৃত অর্থে পুরো জাতির ইশতেহার।
আসন্ন নির্বাচনে দেশের মানুষ আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কী প্রত্যাশা করছে এবং আওয়ামী লীগে দল হিসেবে মানুষের সেই চাওয়াকে কিভাবে বাস্তবায়ন করবে তার রূপরেখা এই ইশতিহার।আওয়ামী লীগের এই ইশতেহার দেখে নিঃসন্দেহে বলা যায় একটি দীর্ঘ প্রস্তুতি ও গবেষণার ফল এটি।
৩ অক্টোবর দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এবং কমিউনিটি লিডারদের কাছে ইশতিহার বিষয়ে মতামত চেয়েছিল দলটি। ২০ অক্টোবরের মধ্যে জমা হওয়া সেইসব মতামত পর্যালোচনা করে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়ন উপ-কমিটি।
আওয়ামী লীগের এবারের ইশতেহারের মূল থিম ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ বিনির্মাণ। পাশাপাশি তরুণ ভোটারদের কীভাবে কাছে টানা যায় সেটি ইশতেহারে প্রাধান্য পেয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্ব পেয়েছে কৃষি, সেবা, অর্থনৈতিক ও শিল্প উৎপাদন খাত।
বলা হয়েছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা হবে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত রাষ্ট্রে পরিণত করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ইশতেহারে স্থান পেয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের পর বাঙালির যা কিছু বড় অর্জন তার সবটাই এসেছে শেখ হাসিনার হাত ধরে। ১৯৮১ সালের ১৭ মে দেশে ফিরেন বঙ্গবন্ধু কন্যা, সেদিন ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে সিক্ত হয়েছিলেন লাখ মানুষের ভালোবাসায়, পুনরাবৃত্তি ঘটেছিলো ১৯৭২ এর ১০ জানুয়ারির চিত্র।
মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসায় সিক্ত শেখ হাসিনা সেদিন মাতৃভূমির কল্যাণে যেকোনো ত্যাগ শিকারের শপথ নেন। শুরু করেন গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন। ১৯৯৬ সালের ১২ জুন সাধারণ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বিপুল ভোট জয় লাভ করে এবং শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠন করে। তার হাত ধরে ঐসময়ে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তি, ভারতের সাথে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি সম্পাদিত হয়।
২০০৮ সালের ১২ ডিসেম্বর তিনি ঘোষণা করেছিল দিন বদলের সনদ, ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপরেখা। তার সেই ইশতিহার পুরোপুরি বাস্তবায়ন করে, গণতন্ত্র, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, নারীর ক্ষমতায়ন, বিদ্যুৎ, তথ্য প্রযুক্তি, গ্রামীণ অবকাঠামো, বৈদেশিক কর্মসংস্থানসহ নানান পদক্ষেপ জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশ তার ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করে।
শেখ হাসিনার দৃঢ় নেতৃত্বের জোরে ও মানুষের ভালোবাসায় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি এবং ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয় লাভ করে আরও দুবার রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসে। বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ করোনা মহামারী, আন্তর্জাতিক দুর্যোগ, যুদ্ধ, পৃথিবী ব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দার মতো চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশকে সামিল করেছে।
নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু সহ দেশ জুড়ে বাস্তবায়ন হয়েছে অসংখ্য মেগা প্রজেক্ট । শেখ হাসিনার প্রতিসৃত উন্নয়ন এখন দৃশ্যমান। তাই দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ইশতিহার স্মার্ট বাংলাদেশ থিমে, উন্নয়ন দৃশ্যমান বাড়বে এবার কর্মসংস্থান স্লোগান নিয়ে রচিত হয়েছে।
আওয়ামী লীগের এবারের ইশতিহারে বরাবরের মতোই প্রাধান্য পেয়েছে সাধারণ মানুষের চাওয়া, আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য পরিকল্পনা ও বিশ্ব বাজারে অস্থিতিশীল দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের এবং সহনশীলতার মধ্যে আনার প্রত্যয়।
আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যে ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে:
১. দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া,
২. কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা ,
৩. আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা,
৪. লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি,
৫. দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো,
৬. ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা,
৭. নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা,
৮. সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা,
৯. আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা,
১০. সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা,
১১. সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
আওয়ামী লীগ অঙ্গীকার করেছে গণতন্ত্র, নির্বাচন ও একটি কার্যকর সংসদ তৈরি করার। একই সাথে অঙ্গীকার করা হয়েছে আইনের শাসন ও মানবাধিকার নিশ্চিত কল্পে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংরক্ষণ ও মর্যাদা সমুন্নত রাখার।
গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করন ও অবাধ তথ্য প্রবাহের জন্য যা করা দরকার তা করার কথা উঠে এসেছে ইশতিহারে, বলা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইনের প্রয়োজনীয় সংস্কার চালু রাখার। স্মার্ট বাংলাদেশে স্মার্ট প্রশাসন, দক্ষ আইন শৃঙ্খলা বাহিনী গড়ার প্রত্যয় নেয়া হয়েছে।
আওয়ামী লীগ তার ইশতিহার বিগত সময়ে ভুলত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে, বাংলাদেশের ইতিহাসে যেটি একটি বিরল ঘটনা। বড় দল, সরকারের বিশাল কর্মযজ্ঞে কিছু ভুল ত্রুটি হতেই পারে , মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয় , কিন্তু সেটা শিকার করে, শুধরে সামনে এগুতে পারে কজন?
ইশতিহারে দুর্নীতির বিপক্ষে জিরো টলারেন্সের কথা বলা হয়েছে, একই সাথে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়েছে সন্ত্রাস সাম্প্রদায়িকতার বিপক্ষে। স্থানীয় সরকারে ক্ষমতায়ন, বাজেট বৃদ্ধি ও সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বলা হয়েছে। ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সম্পূর্ণরূপে চালু করার কথা বলা হয়েছে, যার ফলে ভূমি ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটবে, সুশাসন নিশ্চিত হবে , শৃঙ্খলা ফিরবে এই সংক্রান্ত মামলায়।
আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা ও অপরাধ দমনে অঙ্গীকার করা হয়েছে। শিল্প উন্নয়নে দেশের যুব সমাজের কার্যকর অংশ গ্রহণ নিশ্চিত করা, বছরে ২০ লাখের বেশি কর্মসংস্থানের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে ইশতিহারে। উন্নয়নের চাবি কাঠি বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে নেয়া হয়েছে বিশেষ পরিকল্পনা।
বিগত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে উন্নয়নের পাশাপাশি, আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার ও ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট এ উন্নীত করার দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে । এছাড়া শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ মাত্রা ঠিক করা হয়েছে।
নির্বাচনী ইশতেহারে সাধারণত দলগুলো কিছু সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকে যার ভিত্তিতে দলটি নির্বাচনে জিতলে দেশ ও জনগণের জন্য কাজ করার কথা। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরাবরই তার ইশতিহার বাস্তবায়নে বদ্ধপরিকর।
জনগণের আস্থা এবং ভোটে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত হলে এই ইশতিহার যে শতভাগ বাস্তবায়ন হবে তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সরদার সিরাজুল ইসলাম তার এক লেখায় লিখেছিলেন শেখ হাসিনা যে সঠিক পথে আছে তার প্রমাণ ‘৭৫ -এ জনককে হত্যার পর ঘাতকের বন্দুক এখনো শেখ হাসিনার দিকে।
বাঙালির ঠিকানা আওয়ামী লীগ এবং তার নেত্রী শেখ হাসিনা, এখনো তারুণ্যের প্রতীক হাতে মঙ্গল ও প্রগতির আলোকবর্তিকা। তিনি ভুলে যাননি জীবন কাঁপানো জয় বাংলা আর দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর অঙ্গীকার। সুতরাং তারুণ্যের উপর ভর করে আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশ এই রূপরেখা, শেখ হাসিনার উন্নয়নের রূপরেখা, দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের আওয়ামী লীগের এই ইশতিহার আগামীর বাংলাদেশকে বদলে দিয়ে এক উন্নত সমৃদ্ধিশালী সত্যিকারের সোনার বাংলায় রূপান্তরিত করবে বলে আমার বিশ্বাস।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)