বৃহস্পতিবার পাকিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের টেস্ট সিরিজে নামছে অস্ট্রেলিয়া। প্রথম টেস্টে ফিলিস্তিনিদের প্রতি সমর্থনের স্লোগান লেখা জুতা পরে খেলতে চেয়েছিলেন উসমান খাজা। আইসিসির বাধায় পার্থ টেস্টে সেই জুতা পরে নামতে পারছেন না। তাতে অবশ্য দমে যাচ্ছেন না অজিদের টপঅর্ডার ব্যাটার। আইসিসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ঘোষণা দিয়েছেন।
সিরিজের প্রথম ম্যাচের আগে অনুশীলনে বিশেষ জুতা পরে নেমেছিলেন খাজা। জুতায় লেখা ছিল- ‘সব প্রাণই সমান’, ‘স্বাধীনতা সকল মানুষের অধিকার’। তাতে আলোচনা ওঠে গাজার পাশে দাঁড়াতে এমন বার্তা দিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গাজার পক্ষে খাজার সেই বার্তা ছড়িয়ে পড়লে ‘রাজনৈতিক বক্তব্যের’ আইন দেখিয়ে মাঠে প্রদর্শন নিষিদ্ধ করে আইসিসি।
ঘটনার পর ভিডিও বার্তায় আইসিসির সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে লড়াই করার বিষয়টি জানান খাজা। বলেছেন, ‘লক্ষ্য করেছি, আমার জুতার লেখায় কিছুটা আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে। খুব বেশি বলতে চাই না, এবং দরকারও নেই। যারা বিষয়টি নিয়ে রাগান্বিত হয়েছেন, তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই। নিজেদের এই প্রশ্নগুলো জিজ্ঞেস করুন, স্বাধীনতা কি সবার জন্য নয়? প্রতিটি জীবন কি সমান নয়?’
‘ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে আপনি কোন জাতি, কোন ধর্মের বা কোন সংস্কৃতির তা কোনো বিষয় না। সত্যি করে বলুন তো, প্রতিটি জীবন সমান বলায় যদি অনেক মানুষ কষ্ট পান, আমাকে ডাকেন এবং বলেন, সেটাই কি বড় সমস্যা নয়? এই মানুষগুলো অবশ্যই আমি যা লিখেছি, তাতে বিশ্বাস করেন না। এটা শুধু গুটিকয়েক লোক নয়। কতজন এভাবে অনুভব করেন তা জানলে হতবাক হবেন।’
‘আমি জুতায় যা লিখেছি তা রাজনৈতিক নয়। কারো পক্ষ নেইনি। আমার কাছে প্রতিটি মানুষের জীবন সমান। একজন ইহুদি, একজন মুসলিম ও একজন হিন্দু বা অন্য ধর্মের, প্রত্যেকের জীবন আমার কাছে সমান। তাদের হয়ে কথা বলছি, যাদের কথা বলা অধিকার নেই। এটা আমার হৃদয় ছুঁয়ে যায়। যখন দেখি হাজার হাজার নিষ্পাপ শিশু মারা যাচ্ছে, ওই জায়গাতে কোনো চিন্তা ছাড়াই আমার দুটি মেয়েকে কল্পনা করি। কী হতো যদি ওখানে ওরা থাকত?’
‘কে কোথায় জন্ম নেবেন, তা কিন্তু কেউই বেছে নিতে পারেন না। তবে দেখছি, পুরো বিশ্ব তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। আমার হৃদয় এটা নিতে পারেনি। ইতিমধ্যে অনুভব করছি, যখন বেড়ে উঠেছি, আমার জীবন অন্য সবার মতো ছিল না। তবে সৌভাগ্যবশত, এমন কোনো পৃথিবীতে বাস করিনি যেখানে বৈষম্য মানে জীবন-মৃত্যু।’
‘আইসিসি আমাকে বলেছে, তাদের নিয়ম অনুযায়ী মাঠে জুতাটি পরতে পারব না। কারণ, তারা বিশ্বাস করে এখানে রাজনৈতিক বক্তব্য আছে। এটা বিশ্বাস করি না, এটি একটি মানবিক আবেদন। তাদের দৃষ্টিভঙ্গি ও সিদ্ধান্তকে সম্মান করি। কিন্তু এর বিরুদ্ধে লড়াই করব এবং অনুমোদন নেয়ার চেষ্টা করব। স্বাধীনতা মানবিক অধিকার, এবং প্রতিটি জীবনই সমান। এই বিষয়ে কেউ আমার সঙ্গে একমত হোক বা না হোক, কিন্তু কখনোই এই বিশ্বাস থেকে সরে দাঁড়াবো না।’
এর আগে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অস্ট্রেলিয়ার অধিনায়ক প্যাট কামিন্স জানিয়ে যান দল খাজার পাশে আছে। ৩০ বর্ষী কামিন্স বলেন, ‘আমাদের দলটির একটি শক্তিশালী দিক হল, দলের সবাই মতামত প্রকাশ করতে পারে। সেদিক থেকে দলের প্রত্যেকের নিজস্ব মতামত ও ভাবনা আছে। খাজা সঙ্গে এপ্রসঙ্গে আমার কথা হয়েছে। আমার মনে হয়েছে, এবিষয়ে তার আসলে কোনো হইচই করার উদ্দেশ্য ছিল না। তবে আমরা তার পাশে আছি।’
‘আইসিসি নিয়মের বিষয়টি সামনে এনেছে। যে নিয়ম উজি জানত কিনা তা জানি না। তার জুতায় লেখা ছিল- ‘সব প্রাণই সমান’, ‘স্বাধীনতা সকল মানুষের অধিকার’ আমার মনে হয়, এটা খুব বেশি বিভেদ সৃষ্টি করে না। এটা নিয়ে খুব বেশি মানুষের অভিযোগ থাকার কথা না।’
All Lives are Equal. Freedom is a Human right. I’m raising my voice for human rights. For a humanitarian appeal. If you see it any other way. That’s on you… pic.twitter.com/8eaPnBfUEb
— Usman Khawaja (@Uz_Khawaja) December 13, 2023
খাজার জুতার ছবি ভাইরালের পর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া (সিএ) বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘খেলোয়াড়দের ব্যক্তিগত মতামত জানানোর অধিকারকে আমরা সমর্থন করি। তবে ব্যক্তিগত মতাদর্শ মাঠে প্রদর্শনের ব্যাপারে আইসিসির কিছু নিয়ম-কানুন আছে। আমরা চাই প্রত্যেক খেলোয়াড় সেসবকে যথাযথ সম্মান দেখাবেন।’
আইসিসির নিয়ম অনুযায়ী, খেলোয়াড়দের জার্সি বা সরঞ্জামাদিতে সাংঘর্ষিক কিছুর প্রদর্শনী নিষিদ্ধ। বিশেষ করে জাতীয় লোগো, বাণিজ্যিক লোগো, ইভেন্ট লোগো, প্রস্তুতকারকের লোগো, খেলোয়াড়ের ব্যাটের লোগো, চ্যারিটি লোগো বা অ-বাণিজ্যিক লোগোর বাইরে কোনো লোগো ক্রিকেটারদের জার্সি বা সরঞ্জামাদিতে প্রদর্শন করা যাবে না।