সিডনি টেস্ট শেষে পুরস্কার বিতরণীর মঞ্চে দুই দলের অধিনায়ক ও ম্যাচসেরা খেলোয়াড় এসে জানালেন নিজেদের প্রতিক্রিয়া। এরপর এলো ডেভিড ওয়ার্নারের পালা। ম্যাচ কিংবা সিরিজসেরা না হয়েও তিনিই লাইমলাইটে চলে এলেন। ক্যারিয়ারের শেষ টেস্ট ম্যাচ খেলে ফেলা ৩৭ বর্ষী ক্রিকেটার দেন আবেগঘন বিদায়ী বক্তব্য।
ক্যারিয়ারের শেষ ইনিংসে সাজঘরে ফেরার সময়ই ক্রিকেটে ইতিহাস হয়ে যান ওয়ার্নার। দীর্ঘ পথচলার সমাপ্তি টানার পর পরিবার, দলের সবাইকেসহ সাধারণ মানুষদের প্রতি জানান কৃতজ্ঞতা। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ক্রিকেটারদের প্রতিও দিয়ে রাখলেন টেস্ট খেলার বিশেষ বার্তা।
‘আমরা অনেকে প্রায় ৩০ বছরের বেশি বয়সী আছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমরা ছোট হচ্ছি না। কিন্তু এই দলটিতে যারা আছে, তারা উদ্যমী, বিশ্বমানের এবং ছেলেদের নিয়ে গঠিত একটি দুর্দান্ত দল। মনে রাখতে চাই আমার পথচলা ছিল উত্তেজনাপূর্ণ, বিনোদনমূলক। আশা করি আমি যেভাবে খেলেছি তাতে সবার মুখে হাসি ফুটিয়ে তুলেছি। আশা করি সেখানকার ছোট বাচ্চারা আমার পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারবে। সাদা বলের ক্রিকেট থেকে টেস্ট ক্রিকেট, এটা আমাদের খেলার শীর্ষবিন্দু। তাই কঠোর পরিশ্রম করতে থাকুন এবং লাল বলের ম্যাচটি খেলুন, যা আনন্দদায়ক। সবাইকে ধন্যবাদ।’
১১২ টেস্ট খেলা ক্রিকেটার সাদা পোশাকের শেষদিনের সকালটা কেমন কেটেছিল, সেটি জানান। বললেন, ‘স্থানীয় ক্যাফে পর্যন্ত একটি নৈমিত্তিক হাঁটাহাঁটি, একজন তরুণের সাথে কফি পান, তারপর আমি গাড়িতে উঠলাম। আমি খুশি এবং সত্যিই গর্বিত। গত এক দশকে আমার ক্যারিয়ারে যারা আমাকে এবং অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটকে যে সমর্থন দেখিয়েছে, নিজের ঘরের মাঠের দর্শকরা যারা এসেছেন, তাদের ধন্যবাদ জানানো যথেষ্ট নয়। আপনাদের ছাড়া আমরা এটি করতে পারব না। আসলেই এটা অনেক প্রশংসার দাবিদার।’
ওয়ার্নার ৭৫ বলে ৭ চারে খেলেন ৫৭ রানের ইনিংস। সাজিদের বলে রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে গেলে বল তার প্যাডে আঘাত হানে। লেগ বিফোরের আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলেও রিভিউতে সফল হয় পাকিস্তান। শেষ হয় তার রাজকীয় টেস্ট ক্যারিয়ার। শেষ ইনিংস নিয়েও তিনি নিজের অনুভূতি জানান।
‘আমরা বিনোদন দিতে নিয়োজিত আছি। এখানে এসে সব সময় যা করার চেষ্টা করি, তা প্রদর্শন করতে পেরে আমি আনন্দিত। টি-টুয়েন্টি দিয়ে শুরু করেছি, এখানে এসে সেটা অনুকরণের চেষ্টা করেছি। আমার শট খেলার চেষ্টা করেছি। আমাকে যেভাবে খেলতে হয়েছিল সেভাবে করে জয় পেতে সক্ষম হয়েছি, যা দুর্দান্ত ব্যাপার।’
ব্যাট হাতে ক্রিকে নামার সময় ও আউট হওয়ার পর ড্রেসিং রুমে ফেরার পথে সিডনির গ্যালারিতে ছিল ২০ হাজারেরও অধিক দর্শক। তাদের মাঝেই ছিলেন ওয়ার্নারের পরিবারের সদস্যরাও। করতালি দিয়ে মুহূর্তগুলোকে তারা স্মরণীয় রাখেন। পরিবারের সবার প্রতি তার ভালোবাসার কথা বাঁহাতি ব্যাটার খোলামনে প্রকাশ করেন।
‘পরিবার আপনার জীবনের বিশাল অংশ। তাদের সমর্থন ছাড়া আপনি যা করেন, তা পারবেন না। আমাকে একটি সুন্দর এবং চমৎকারভাবে প্রতিপালনের জন্য আমি বাবা-মায়ের কাছে ঋণী। আমার ভাই স্টিভ, আমি তার পদাঙ্ক অনুসরণ করেছি। তারপর ক্যান্ডিসের (ওয়ার্নাররের স্ত্রী) আমার কাছে আসা। আমাদের একটি সুন্দর পরিবার আছে। আমি তাদের সাথে থাকা প্রতিটি মুহূর্ত আগলে করি। আমৃত্যু তাদের ভালোবাসি। আর বলতে পারবো না কারণ আমি খুব আবেগপ্রবণ হয়ে যাব। কিন্তু তুমি আমার জন্য যা করেছে, তার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ, ক্যান্ডিস। তুমি আমার কাছে পৃথিবী।’
টেস্টে ২০৫ ইনিংস খেলা ওয়ার্নার ৪৪.৫৯ গড়ে করেন মোট ৮,৭৮৬ রান। ২৬টি শতকের পাশাপাশি রয়েছে ৩৭টি অর্ধশতক। ২০১৯ সালে অ্যাডিলেডে পাকিস্তানের বিপক্ষে করেন ট্রিপল সেঞ্চুরি। ৩৩৫ রানে অপরাজিত ছিলেন, টেস্ট ইতিহাসের কোনো ব্যাটারের পঞ্চম সর্বাধিক রানের ইনিংস। অপরাজিত থাকা ব্যাটার হিসেবে তিনি টেস্টে সবচেয়ে বড় ইনিংসের মালিক।