প্রায় এক দশক পর সম্পূর্ণ নতুন ধরনের কোন প্রযুক্তি পণ্য লঞ্চ করতে যাচ্ছে টেক জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান অ্যাপল। ডিভাইসটির নাম ‘অ্যাপল ভিশন প্রো’। এটি মূলত একটি হেডসেট, যা ব্যবহারকারীদের ভার্চুয়াল জগতে বাস্তব অনুভুতি এনে দিতে সক্ষম। আর এমনটাই দাবি করছে অ্যাপল। তাই এই হেডসেটকে ঘিরে তৈরি হচ্ছে মানুষের কৌতূহল ও আগ্রহ।
চলতি মাসের শুরুতেই অ্যাপল ভিশন প্রো নামক নতুন একটি হেডসেট ডিভাইস বাজারে নিয়ে আসার ঘোষণা দেয় অ্যাপল। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং অগমেন্টেড রিয়ালিটি প্রযুক্তির মিশ্রণে তৈরি এই হেডসেটটি আগামী বছরের শুরুর দিকে যুক্তরাষ্ট্রে লঞ্চ হতে যাচ্ছে। সম্প্রতি হেডসেটটির ব্যবহার এবং সুবিধা নিয়ে নিজেদের ওয়েবসাইটে বিস্তারিত জানিয়েছে অ্যাপল। দেখে নেয়া যাক কী থাকছে অ্যাপলের নতুন এই হেডসেটে।
জীবন্ত ও প্রাণবন্ত ইন্টারফেস
অ্যাপল ভিশন প্রো ব্যবহারের শুরুতেই যে ইন্টারফেসটি সামনে আসবে তা হবে বেশ জীবন্ত ও প্রাণবন্ত, পরিবেশের সাথে মানিয়ে ব্যবহারকারীর চোখের সামনে ভাসতে থাকবে ইন্টারফেসটি। যেই পরিবেশে হেডসেটটি ব্যবহার করা হবে, মনে হবে ইন্টারফেসটি সেই পরিবেশেরই অংশ। এমনকি বাস্তব পরিবেশের সাথে নিজের আলো ছায়াকে মিলিয়ে নিজের বাস্তব প্রতিচ্ছবি তৈরি করবে ইন্টারফেসটি।
ভিশন অপারেটিং বা চোখের সাহায্যে নিয়ন্ত্রণ
অ্যাপল ভিশন প্রো হেডসেটে থাকছে ভিশন অপারেটিং সিস্টেম বা চোখের সাহায্যে মনিটর নিয়ন্ত্রণ করার সুবিধা। যেখানে প্রয়োজন হবে না মাউস, কি-বোর্ড বা টাচপ্যাডের। শুধুমাত্র চোখের ইশারায় এর ভাসমান মনিটরকে নিয়ন্ত্রণ করা যাবে, অনেকটা মাউস কার্সরের মত। এছাড়াও হাতের ইশারায় করা যাবে সিলেক্ট ও স্ক্রল করার কাজ। আর যেকোনো কমান্ড দেওয়া যাবে ভয়েসের মাধ্যমে।
বদলে যাবে বোরিং পরিবেশ
অ্যাপল ভিশন প্রো ব্যবহার করে একজন ব্যবহারকারী বদলে ফেলতে পারেন তার আশেপাশের পরিবেশ। ধরা যাক কেউ প্লেন জার্নি করছেন, এমন অবস্থায় ভিশন প্রো ব্যবহার করে তিনি উপভোগ করতে পারবেন পছন্দমত মুভি। এছাড়াও বদলে ফেলতে পারবেন পরিবেশ যেমন, পাহাড় বা সমুদ্রের শান্ত পরিবেশকে নিয়ে আসতে পারবেন দৃশ্যপটে। তবে পরিবেশ বদলে গেলেও বা চোখ ঢাকা থাকলেও বাস্তব জগৎ থেকে আলাদা হবেন না ব্যবহারকারী। যেমন কেউ ঘরে প্রবেশ করলে ব্যবহারকারী তা দেখতে ও বুঝতে পারবেন, এমনকি ভার্চুয়াল পরিবেশে থেকেও তার সাথে কথা বলতে পারবেন।
মুভি উপভোগের নতুন মাত্রা
ভিশন প্রো এর সাহায্যে মুভি উপভোগ করা যাবে সম্পূর্ণ ভিন্ন মাত্রায়। এতে ব্যবহারকারী ঘরে বসেই পেতে পারেন থিয়েটারের অনুভূতি। ব্যবহারকারী তার ইচ্ছেমত মুভির স্ক্রীন ছোট বা বড় করতে পারবেন। আর থ্রিডি ইফেক্টের জন্য দৃশ্যমান মুভির পরিবেশের অংশ হিসেবে নিজেকে অনুভব করতে পারবেন।
ছবি তোলা ও দেখায় ভিন্নতা
অ্যাপল ভিশন প্রো হেডসেটটির মাধ্যমে যেকোনো ছবি তার আসল আকার ও মাত্রায় দেখা যাবে। ব্যবহারকারী চাইলে ইশারার সাহায্যে ছবির আকার ছোট বা বড় করতে পারবেন। চোখের ইশারায় তুলতে পারবেন ছবি। সেই সাথে এর থ্রিডি ক্যামেরা দিবে প্যানেরোমা ভিসনের সুবিধা, যার সাহায্যে ছবি তোলার মুহূর্তটিকেও অনুভব করা যাবে।
বাস্তবধর্মী গেমিং
যারা গেম খেলতে ভালোবাসেন তাদের জন্য ভিশন প্রো দিচ্ছে বিশাল স্ক্রীন এবং অত্যাধুনিক শব্দের মিশেলে গেমে বাস্তব অনুভুতির ছোঁয়া।
ওয়ার্কস্পেস ফিচার
ব্যবহারকারী যেখানেই থাকুক কাজের প্রয়োজনে ওয়ার্কস্পেস বা কর্মক্ষেত্রেরমতো আবহ তৈরি করে দেবে অ্যাপল ভিশন প্রো। যেখানে ব্যবহারকারী তার ইচ্ছেমত লেখালেখি ও ইন্টারনেট ব্রাউজিং করতে পারবেন। এছাড়াও ব্রাউজারে ওপেন ট্যাবগুলোকে নিজের সুবিধামত বিন্যাস করতে পারবেন।
ভিডিও কলে নতুন অভিজ্ঞতা
অ্যাপল ভিশন প্রো তে রয়েছে এমন ফিচার যার সাহায্যে ভিডিও কলে থাকা অপর প্রান্তের ব্যক্তির বাস্তব আকার, মাত্রা ও শব্দের এক অভূতপূর্ব সমন্বয় থাকবে। এতে করে ব্যবহারকারীর মনে হবে তিনি যেন সামনা সামনি কথোপকথন করছেন। একই ভাবে গ্রুপ কলেও দেয়া যাবে মুখোমুখি আড্ডা।
ব্যবহারে স্বাচ্ছন্দ্য
ভিশন প্রো হেডসেটটি ব্যবহারকারীর আরামের বিষয়টি মাথায় রেখেই ডিজাইন করেছে অ্যাপল। ব্যবহারে থাকছেনা কোনোরকম অস্বস্তি। ওজনে হালকা ও আরামদায়ক হেডব্যান্ড যুক্ত করা হয়েছে এতে। তাই যেকোন ধরনের নড়াচড়ার ক্ষেত্রে ব্যবহারকারী পাবেন স্বাচ্ছন্দ্য। এছাড়াও ওজনে হালকা করার জন্য এর ব্যাটারিকে মূল হেড সেট থেকে আলাদা করা হয়েছে। একবার ব্যাটারি চার্জ করে টানা ২ ঘণ্টা হেডসেটটি ব্যবহার করা যাবে।
এককথায় ব্যবহারকারীর স্বাচ্ছন্দ্য, বাস্তবতা, প্রযুক্তি ও ভার্চুয়াল রিয়ালিটির এক অপূর্ব মেলবন্ধন হতে যাচ্ছে অ্যাপল ভিশন প্রো হেডসেট। এর মূল্য নির্ধারণ করা হয়েছে সাড়ে তিন হাজার ডলার বা প্রায় তিন লাখ পঁচাত্তর হাজার টাকা। এর আগে বাজারে নানা ব্র্যান্ডের থ্রিডি হেডসেট পাওয়া গেলেও একই সাথে এতগুলো ফিচার এবং সেই সাথে এমন নিখুঁত ভার্চুয়াল রিয়ালিটি ও বাস্তবতার মেলবন্ধন এর আগে দেখা যায়নি। তাই নির্দ্বিধায় বলা যায় ‘অ্যাপল ভিশন প্রো’ হতে যাচ্ছে অনুভূতির ভার্চুয়াল জানালা।