নির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়িত করা যায় না প্রেমকে। হয়তো অনুমান কিংবা ধারণা করা যায়। যুগে যুগে কবি, লেখক, নাট্যকারদের লেখায় উঠে এসেছে প্রেমের আনুমানিক সংজ্ঞা। কেউ বলেছেন প্রেম স্বর্গীয়, শাশ্বত ও অমর। যদিও তারা শেষ পর্যন্ত সেখানে স্থির থাকতে পারেননি। প্রেম প্রেমের মতোই রয়ে গেছে। ইতিহাসের লাইলি-মজনু, শিরি-ফরহাদ, শাহজাহান-মমতাজের মতো ইংরেজ নাট্যকার শেক্সপিয়রের ‘রোমিও জুলিয়েট’ অমর প্রেমগাঁথা। যুগে যুগে এই প্রেমকাহিনী বিচিত্র বিভঙ্গে আর নানা ইন্টারপ্রিটেশনে বিবৃত হয়েছে, মঞ্চায়িত হয়েছে।
প্রেমের মতো চিরাচরিত এমন গল্প নিয়ে রোমিও অ্যান্ড জুলিয়েট- এর গল্প অবলম্বনে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যা সাতটায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হলো ‘অতঃপর প্রণয়।’
নাট্যকার রুমা মোদক-এর রূপান্তরে ও এইচ এম মোতালেবের নির্দেশনায় নাটকটি মঞ্চে এনেছে ‘দৃশ্যকাব্য’ নাট্যদল।
রুমা মোদক বলেন, বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে রোমিও জুলিয়েট -এর প্রেম কাহিনীর এডাপ্টেশন। কোন নিরীক্ষা করিনি করতেও চাইনি। কিন্তু করা যেত। চেয়েও ছিলাম। কিন্তু রোমিও জুলিয়েট -এর ট্র্যাজিক প্রেমকাহিনী আমাকে যুবতীবেলা থেকে এমনই আবিষ্ট করে রেখেছে যে যৈবতী কন্যার মন এখনও সচল হয়ে উঠে বয়সের বেড়া ডিঙিয়ে। এখনো রোমিও জুলিয়েট পাঠে আর্দ্র মন এখনো আফসোসে ডুবে মরে। আমি এই আর্দ্র আফসোস থেকে বের হতে পারি না। তাই লেখায়ও পারিনি। রোমিও জুলিয়েট রয়ে গেছেন ক্লাসিক প্রেমের প্রতিমূর্তি হয়ে শুধু প্রেক্ষাপট বদলে গেছে। দৃশ্যকাব্য নাট্যদল থিয়েটার পত্রিকা থেকে নাটকটি সংগ্রহ ও মঞ্চস্থ করছে। আমি অত্যন্ত আনন্দিত। মূলত প্রকাশিত নাট্যভাষ্য আর নাট্যকারের নয়। মঞ্চের, মঞ্চকর্মীদের। আমি সেখানে দর্শক মাত্র।
নাটকটির গল্প সংক্ষেপ: একই শহরে বসবাসকারী হিন্দু ধর্মাবলম্বী চৌধুরী পরিবার ও মুসলিম ধর্মাবলম্বী সৈয়দ পরিবার। এই দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বংশ মর্যাদা, আভিজাত্য আর প্রভাব প্রতিপত্তি প্রতিষ্ঠার দ্বন্দ বিরাজমান। কিন্তু দীর্ঘদিনের দ্বন্দ-সংঘাত আর ধর্মের বেড়াজালকে উপেক্ষা করে চৌধুরী পরিবারের মেয়ে জুঁই এবং সৈয়দ পরিবারের ছেলে রুম্মান দুজন দুজনার ভালোবাসার বাঁধনে বাঁধা পড়ে। তাদের এই প্রেমকে কেন্দ্র করে উভয় পক্ষের দুজন আকস্মিকভাবে খুন হয়। ফলে সেই খুনের প্রভাবে শহর জুড়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার উপক্রম হয়।
অন্যদিকে শহরের এক ধনী ব্যবসায়ী পিয়ারী মহনের সাথে জুঁই-এর বিবাহের দিন ধার্য করা হয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ ও জুঁই রুম্মান -এর ভালোবাসার সম্পর্ককে অটুট রাখতে জুঁই লোলিত কবিরাজের শরণাপন্ন হয়। লোলিত কবিরাজ এই সমস্যার সমাধান হিসেবে জুঁইকে এক বিশেষ ওষুধ প্রদান করে যা পান করলে একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত জুঁই অচেতন থাকবে। সবাই তাকে মৃত্য হিসেবে জানবে। পরবর্তীতে সে যখন চেতনা ফিরে পাবে তখন রুম্মানের সাথে তার বিবাহের ব্যবস্থা করবেন।
জুঁই কবিরাজের পরিকল্পনা অনুযায়ী এক রাতে ঐ বিশেষ ওষুধ পান করে এবং সকালে সবাই দেখে জুঁই মারা গেছে। জুঁই-এর মৃত্যুর খবর রুম্মানের কাছে পৌঁছায়। রুম্মান জুঁইকে একনজর দেখতে ছুটে আছে। প্রিয়তমার মৃত্যু মেনে নিতে না পারায় রুম্মান আত্মহত্যা করে। তার কিছুক্ষণ পরেই জুঁইয়ের চেতনা ফিরে আসে এবং সে দেখে রুম্মান মৃত। ভালোবাসার মানুষকে পাওয়ার জন্য জুঁই এতো কিছু করলো সেই মানুষটাই আজ নেই। তাই জুঁই আত্মহত্যা করে। আর এভাবেই দুটি নিষ্পাপ জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। এমন সব নাটকীয় ঘটনা নিয়ে নাটক ‘অতঃপর প্রণয়’।
নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন, এইচ এম মোতালেব, মৌসুমী বেগম, রিমন সাহা, নাইরুজ সিফাত, মো. ইসমাইল হোসেন, আরিয়ান, চিত্রা সাহা, আবুল হাসনাত, দীপু মাহমুদ, প্রত্যয়, সান্তনু সাহা, সারফুল ইসলাম, আতিকুর রহমান, নাজমুল হক বাবু, মহসীন শিবলী।
মঞ্চ পরিকল্পনায় ছিলেন ফজলে রাব্বি সুকর্ণ, আলোক পরিকল্পনা ফারুক খান টিটু, আবহসঙ্গীত হামিদুর রহমান পাপ্পু, পোষান পরিকল্পনা ও রূপসজ্জা শুভাশীষ দত্ত তন্ময়।