আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক বলেছেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভোট কেন্দ্র ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণসহ ভোটদানে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সারাদেশে ৫ লাখ ১৭ হাজার ১৪৩ জন সদস্য মোতায়েন করেছে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী।
শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাজধানীর খিলগাঁওয়ে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এতথ্য জানান তিনি।
মেজর জেনারেল একেএম আমিনুল হক বলেন, নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক সারাদেশের ৪২ হাজার ১৪৯টি ভোট কেন্দ্রের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা ও ব্যালট বাক্সের নিরাপত্তা রক্ষায় ৫ লাখ ৫ হাজার ৭৮৮ জন সাধারণ আনসার ও ভিডিপি সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
তিনি জানান, ইতোমধ্যে ২৫০ প্লাটুন আনসার ব্যাটালিয়ন সদস্যরা ১ হাজারটি সেকশনে ভাগ হয়ে গত ২৯ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত ১৩ দিনের জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে মোতায়েন রয়েছে। উপকূলের ১৩টি উপজেলা বাদে সকল উপজেলায় আনসার ব্যাটালিয়ন এর একটি করে স্ট্রাইকিং টিম নির্বাচনী পরিবেশ অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ রাখতে সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং কর্মকর্তার পরিকল্পনা অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করছে। এছাড়াও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ২ হাজার ৮৫৫ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োজিত রয়েছেন।
মহাপরিচালক বলেন, নির্বাচনী কেন্দ্রের নিরাপত্তায় প্রতিটি কেন্দ্রে মোট ১২ জন করে আনসার ও ভিডিপি সদস্য সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করবেন। তাদের মধ্যে একজন প্লাটুন কমাস্ট্রার (পিসি) ও একজন সহকারী প্লাটুন কমাস্তার (এপিসি) এর নেতৃত্বে উ জন পুরুষ ও ৪ জন মহিলা ভিডিপি সদস্য নিয়োজিত থাকবেন।
পিসি ও এপিসিগণ অস্ত্রসহ এবং ভিডিপি সদস্য- সদস্যাগণ লাঠি হাতে ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত থাকবেন। আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির কোনোরূপ অবনতি ঘটলে তা দ্রুতসময়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
আনসার ও ভিডিপি’র মহাপরিচালক বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন জাতিকে উপহার দেওয়ার জন্য নির্বাচন কমিশনের নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করতে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষ নির্ভয়ে আগ্রহভরে অত্যন্ত উৎফুল্লভাবে ভোট কেন্দ্রে আসতে পারে সেই জন্য আনসার ভিডিপির সদস্যরা নিরাপত্তার পরিবেশ নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। তাদেরকে অত্যন্ত সতর্কতা ও নিষ্ঠার সঙ্গে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের জন্য সচেষ্ট থাকার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে কোনো ধরনের অবহেলা বা গাফলাতি বরদাশত করা হবে না।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক প্রস্তুত আছে। নির্বাচন বিরোধী যারা আছে তারা চায় নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিভিন্ন কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করবে। আমরা সচেতন আছি। নাশকতা নির্মূল করতে আমরা সক্ষম।
রেল ও কেপিআই স্থাপনার নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার শঙ্কা আছে কি না জানতে চাইলে আনসার প্রধান বলেন: যে কোনো ধরণের নাশকতারোধে অভিযান ও সাধারণ মানুষের চলাচলের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। কেপিআই স্থাপনায় আমাদের যে নিরাপত্তা ছিলো সেটি মোতায়েন থাকবে। রেলের নিরাপত্তায় ১৫ হাজার ৭০০ সদস্য কাজ করে যাচ্ছে। সব মিলিয়ে যারা যে দায়িত্ব পালন করেছে তারা নির্বাচনী দায়িত্বের বাহিরে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কোনো সরঞ্জামের ঘাটতি রয়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন: নিরাপত্তা সরঞ্জামের কোনো ঘাটতি নেই। সরকার ও নির্বাচন কমিশন সকল সরঞ্জাম দিতে সহযোগিতা করেছে।
সারাদেশে কতগুলো কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে জানতে চাইলে আমিনুল হক বলেন: কোনো কেন্দ্রে ভোট দিতে পারবে না এমন কোনো তথ্য নেই। তবে নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার কারণে দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হতে পারে। সেই সকল কেন্দ্র আমরা ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অন্যান্য তথ্যানুযায়ী ১০ হাজার কেন্দ্রের কথা বলা হয়েছে। এসকল কেন্দ্রে আমরা বেশি গুরুত্ব দিবো। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করবো।
সংবাদ সম্মলনে আনসার-ভিডিপির অতিরিক্ত মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজিম উদ্দিন, উপমহাপরিচালক (প্রশাসন) কর্নেল মো. তসলিম এহসান, উপমহাপরিচালক (অপারেশন্স) মো. ফখরুল আলম উপমহাপরিচালক (প্রশিক্ষণ) মো. জিয়াউল হাসান ও অন্যান্য উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।