কেমন হতে পারে তুরস্কে এরদোয়ানের শাসন

টানা তৃতীয়বারের মত তুরস্কের ক্ষমতার শীর্ষ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। প্রথম এবং দ্বিতীয় দুই দফার ভোটেই তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কেমাল কিলিকদারোগ্লুকে পেছনে ফেলে নির্বাচিত হয়েছেন তিনি। তৃতীয়বারের মত নির্বাচিত হওয়ায় তাকে ঘিরে আগ্রহ তৈরি হয়েছে জনগণ ও বিশ্ব নেতৃবৃন্দের।

এরদোয়ানের জয়ে তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন ন্যাটোভুক্ত পশ্চিমা নেতৃবৃন্দ। তবে এর বাইরে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও শুভেচ্ছা জানিয়েছেন তাকে। তুরস্কে ভূমিকম্প পরবর্তী অবস্থা এবং ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধ পরিস্থিতিতে দেশকে কীভাবে নেতৃত্ব দিতে যাচ্ছেন তুরস্কের নব নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান, তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা চলছে বিশ্বমহলে।

তুরস্কের ধর্মীয় ভাবমূর্তি
তুরস্কের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান একজন ইসলামপন্থী নেতা। অপরদিকে তুরস্ক একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ আর তাই প্রায় ২০ বছর ধরে দেশটিতে তার একটি বিশাল অনুসারী গোষ্ঠী গড়ে উঠেছে। নতুন প্রেসিডেন্টের কাছে তাদের চাওয়া ছোট বড় বিভিন্ন ধরণের সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে তিনি দেশটির ধর্মীয় ভাবমূর্তি ধরে রাখবেন।

ব্যক্তি স্বাধীনতা এবং মানবাধিকার পরিস্থিতি
একদিকে যেমন ধারণা করা হচ্ছে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্কে বিদ্যমান ধর্মীয় ভাবমূর্তি ধরে রাখবেন। অপরদিকে ধারণা করা হচ্ছে এই ভাবমূর্তি ধরে রাখতে গিয়ে ব্যক্তি স্বাধীনতায় প্রভাব ফেলবেন তিনি। কারণ ইতিমধ্যেই তার বিজয় ভাষণে কারাগারে থাকা কুর্দিশ এক নেতা এবং এলজিবিটি কমিউনিটিকে সমর্থন করে তৈরি করা নীতির সমালোচনা করেছেন তিনি। তাই ধারণা করা হচ্ছে দেশটিতে মানবাধিকার এবং বাকস্বাধীনতা আগামী বছরগুলোতে আরও ক্ষয় হতে পারে। অনেকেই ভবিষ্যদ্বাণী করছেন ধর্মনিরপেক্ষ এই দেশটিতে ধর্ম বেশি এবং কম স্বাধীনতা থাকবে।

রাশিয়ার সাথে মিত্রতা
ন্যাটোর ঘোরতর বিরোধী দেশ রাশিয়া। অপর দিকে তুরস্ক ন্যাটোভুক্ত একটি দেশ। তা সত্ত্বেও রাশিয়ার সাথে মিত্রতা বজায় রেখেছে এরদোয়ান সরকার। নির্বাচনের ফল প্রকাশের আগেই এরদোয়ানকে অভিনন্দন জানিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। পুতিন রাশিয়ান প্রাকৃতিক গ্যাসের জন্য প্রায় ৬০০ মিলিয়ন ডলার অর্থপ্রদান স্থগিত করেছে তুরস্কের জন্য। এমনকি ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে তুরস্ক এবং রাশিয়ার মধ্যে বাণিজ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বলা যায় রাশিয়া আশা করছে তুরস্কের সাথে তাদের এই মিত্রতা বজায় থাকবে।

ইউক্রেনের সাথে সম্পর্ক
রাশিয়ার সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখলেও আবার ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা দিয়ে থাকেন প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান। তিনি দু’টি দেশের মধ্যেকার আলোচিত একটি চুক্তির মধ্যস্থতা করেছিলেন যার মাধ্যমে রাশিয়া ইউক্রেনের শস্য সরবরাহের উপর অবরোধের অবসান ঘটিয়েছিল। এর ফলে ওই শস্য তাদের উপর নির্ভরশীল বিশ্বের অন্যান্য দেশেও সরবরাহ হয়।

এছাড়াও ইউক্রেনের সুবিধার কথা চিন্তা করে দীর্ঘ দ্বিধা-দ্বন্দ্বের পর তিনি রাশিয়ার প্রতিবেশী ফিনল্যান্ডকে ন্যাটোতে যোগদানের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দিয়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে ইউক্রেনের সাথে এই সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন এরদোয়ান। তবে একই সাথে শত্রু ভাবাপন্ন দু’টি দেশের সাথে মিত্রতা তার বিপদের কারণও হয়ে উঠতে পারে।

পশ্চিমাদের সাথে ঘনিষ্টতা এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতি
রাশিয়ার সাথে মিত্রতা পশ্চিমাদের সাথে তুরস্কের সম্পর্কের অধপতনের কারণ হতে পারে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের এরদোয়ানকে শুভেচ্ছা জানানোর বিষয়টি ভালোচোখে নেয়নি যুক্তরাষ্ট্র এবং ফ্রান্স।

হোয়াইট হাউস সুইডেনের ন্যাটো সদস্যপদ অনুমোদনের জন্য এরদোগানকে রাজি করার চেষ্টা করছে। রাশিয়ার বিরুদ্ধে জোট গঠনের জন্য সুইডেনকে ব্যবহার করতে চাইছে তারা। তুরস্ক এবং হাঙ্গেরী একমাত্র ন্যাটো দেশ যা এখনও স্টকহোমের সদস্যপদ অবরুদ্ধ করে রেখেছে।

পশ্চিমাদের মতে, তুরস্কে চলমান অর্থনতিক সঙ্কট মুহূর্তে এরদোয়ানকে আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে। সুইডেনের ন্যাটোতে যোগদানের বিষয়ে নমনীয় হলে তুরস্ক সহজেই এই বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারবে। অর্থাৎ ন্যাটোতে তুরস্কের কিছু সিদ্ধান্ত দেশটির সাথে পশ্চিমাদের মিত্রতা এবং অর্থনৈতিক পরিস্থিতির উপর প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে।

ইউক্রেনতুরস্কতুরস্কের নির্বাচনন্যাটোভ্লাদিমির পুতিনরাশিয়ারিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান