বিশ্বের নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা, প্রযোজক, চিত্রনাট্যকার ও আলোকচিত্রী আব্বাস কিয়ারোস্তামি। ইরানি নিউ ওয়েভ চলচ্চিত্র আন্দোলনের সার্থক রূপকার তিনি। চলচ্চিত্রে মন্তাজ বা রূপকের ব্যবহারে অনন্য ছিলেন কিয়ারোস্তামি। ৪০ টি’র বেশি চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছেন। ১৯৯৭ সালে তাঁর ‘টেস্ট অব চেরি’ চলচ্চিত্রটি কান চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পুরস্কার পাম ডি ওর জিতে নেয়। আব্বাস কিয়ারোস্তামির উল্লেখযোগ্য চলচ্চিত্রগুলো হলো ‘ক্লোজআপ’ (১৯৯০), ‘থ্রু দ্য অলিভ ট্রিজ’ (১৯৯৫) ‘টেস্ট অব চেরি’ (১৯৯৭), ‘দ্য উইন্ড উইল ক্যারি আস’ (১৯৯৯), ‘এবিসি আফ্রিকা’ (২০০১), ‘টিকেটস’ (২০০৫), ‘চাকান অন সিনেমা’ (২০০৭)। ২০১২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত জাপানি চলচ্চিত্র ‘লাইক সামওয়ান ইন লাভ’ তার নির্মিত সবশেষ চলচ্চিত্র।
চলচ্চিত্র নির্মাণে নিজস্বতায় স্বকীয় পরিচয় তুলে ধরেছিলেন বিশ্বব্যাপী। অসংখ্য নবীন চলচ্চিত্র নির্মাতার কাছে আব্বাস কিয়ারোস্তামি শ্রদ্ধার আলাদা জায়গা দখল করে আছেনে। ইরানে ত্রিশের দশকে যে কবিতা আন্দোলনের জন্ম হয়েছিল আব্বাস কিয়ারোস্তামি তা দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত ছিলেন। ইরানের এই কাব্যিক রেনেসাঁকে দক্ষতার সাথে চিত্ররূপ দিয়েছেন তিনি। তাই তাকে নির্দ্বিধায় চলচ্চিত্রের কবি বলেন চলচ্চিত্র বোদ্ধারা। কিয়ারোস্তামির এই অনন্য মেধার পরিচয় পাওয়া যায় “দি উইন্ড উইল ক্যারি আস” সিনেমাটিতে। মূল ফার্সি নাম “বদ ম র খহাদ বোর্দ”। সিনেমার প্রতিটি দৃশ্য যেন কবিতার একেকটি পংক্তি।
হয়তো অনেকেই জানেন না, তাঁর লেখা কবিতার সংখ্যাও কম নয়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ও কবিতা প্রেমীদের কাছে কিয়ারোস্তামির লেখা বাংলায় পৌঁছে দেয়ার উদ্যোগ নিয়েছেন কবি, সাংবাদিক রহুল মাহফুজ জয়। একুশে বইমেলায় বৈভব প্রকাশনায় পাওয়া যাবে ২০৮ পৃষ্ঠার ‘আব্বাস কিয়ারোস্তামির কবিতা সমগ্র’ বইটি।

কেন আব্বাস কিয়ারোস্তামির কবিতা ভাষান্তরের উদ্যোগ নিলেন রহুল মাহফুজ জয়? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা বললেন, তা হুবুহু পাঠকের উদ্দেশে তুলে ধরা হলো:
জাবের হাসানের অনুবাদে ২০১৭’র দিকে কিয়ারোস্তামির কিছু কবিতা পড়েছিলাম। কবিতাগুলি পড়ে ভালো লেগেছিলো। আমি অপেক্ষা করছিলাম জাবেরের বইটা হোক, বাংলায় পড়বো। সেই বই আর আসে না। এর বছর দুয়েক পর মেহেদি হাসান নামে একজন ফিল্ম মেকারের অনুবাদে কিছু কবিতা পড়লাম। ভাবলাম উনি বই করবেন। বই এলো না। পরে জানলাম চেরির স্বাদ নামে একটা বই আছে, ওই বইটাতে কিয়ারোস্তামির প্রথম কবিতার বইয়ের লেখাগুলি আছে। সম্ভবত জাবের আর মেহেদি ওই বইয়ের কিছু কবিতা অনুবাদ করেছিলেন। অ্যা উলফ লায়িং ইন ওয়েইট/অ্যা উলফ অন ওয়াচ নামের সেই বইটার পিডিএফ তখন অনলাইনে এভেইলেবল ছিলো। লন্ডনে চেরির স্বাদ সংগ্রহ করার উপায় নাই। আর আমার ইচ্ছা হলো কিয়ারোস্তামির সব বই-ই পড়বো। পিডিএফ এভেইলেবল বইটা ডাউনলোড করে পড়তে লাগলাম। পড়তে পড়তেই ভাষান্তর করতে ইচ্ছা হলো। সেই বই পড়া শেষে বাকি বইগুলা পড়ার তর সইছিলো না। এরপর আমাজনে সার্চ দিচ্ছিলাম কিয়ারোস্তামির বইগুলা একসাথে পাওয়া যায় কিনা। পেয়ে গেলাম, আমেরিকান এক প্রকাশনী পোয়েট্রি নিয়ে কিয়ারোস্তামির সকল কাজ এক ভলিউমে প্রকাশ করেছে। ব্যাপারটা কথাসাহিত্যিক সাগুফতা শারমীন তানিয়ার সাথে শেয়ার করলাম। উনি বললেন, দাঁড়াও দেখি আমি যেখান থেকে বই কিনি ওদের ওখানে আছে নাকি। এক সপ্তাহ পর আমাকে আনন্দে বিহ্বল করে তানিয়াদি বইটা উপহার দিলেন। কিয়ারোস্তামির কবিতার বইগুলি পড়া হলো। পড়ার পর খোঁজ নিলাম তাঁর তিনটা মৌলিক কবিতার বই-ই বাংলায় অনুবাদ হয়েছে কিনা। সব বইয়ের পিডিএফ যেহেতু পাওয়া যায় না, তাই অনেকটা নিশ্চিতই ছিলাম। তারপর খোঁজ নিয়ে পুরাপুরি নিশ্চিত হয়ে সিদ্ধান্ত নিলাম বাকি দুটি বইও অনুবাদ করবো। একটা বই ২০২১-এ অনুবাদ করে রেখেছিলাম। বাকি দুইটা করেছি গত বছর। এই হলো কিয়ারোস্তামির কবিতা অনুবাদের কাহিনী। অনুবাদ করতে উৎসাহী হয়েছিলাম স্রেফ কবিতার কারণেই। আর ওনার কবিতা পড়তে চেয়েছিলাম মাস্টার সিনেমামেকার কবি হিসাবে কতটা সংবেদনশীল সেটা বুঝতে। কবিতা পড়তে পড়তে কিয়ারোস্তামির প্রতি ভালোবাসা আরও বেড়েছে।
আব্বাস কিয়ারোস্তামির কবিতা সমগ্র ভাষান্তর: রুহুল মাহফুজ জয় প্রচ্ছদ: রাজীব দত্ত প্রকাশক: বৈভব [ঢাকা], ছাপাখানা [কলকাতা] একুশে বইমেলায় বৈভবের ঠিকানা ৫৪১ নম্বর স্টল