ধরা যাক, বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে একটু একটু করে শরীর মেলা ঢাকা একটা বাজে শহর! থেকে থেকেই শহরের বায়ুমান দুনিয়ার সেরা দূষণের রেকর্ড করে চলেছে। গায়ে গায়ে লাগানো দালান। সড়কে গাড়ির জট আর শব্দের হানাহানি। খেলার মাঠ নেই, হাঁটার পথ নেই। আগুন থেকে বাঁচার নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেই। এতো নেই নেই’র মধ্যেও দিন দিন এই শহরের জনসংখ্যার গ্রাফ ঊর্ধ্বমুখি। কেউ কেউ হয়তো পালাতে চাচ্ছেন, সুযোগ বুঝে চলে যাচ্ছেন অন্যদের গড়া সাজানো শহরে। তারপরও অনেক লাভের শহর, লোভের শহর ঢাকাই বাংলাদেশের প্রাণ।
আর সব হিসেব দূরে রেখে এই শহরে উদ্যান রমনাকে আমি এখনো বলি ‘প্রাণ ভোমরা’। চলতে চলতে, বলতে বলতে দম যখন বন্ধ হয়ে যাবে প্রায়, ঢুকে পড়ুন রমনা উদ্যানে। মুহূর্তেই প্রাণ ফিরে আসবে। দিনে রাতে, সকালে, দুপুরে, বিকেলে, সন্ধ্যায়- নানা সময়ে রমনার নানা রূপ। গ্রীষ্ম থেকে বসন্ত-একেক ঋতুতে রমনা একেক রূপে ধরা দেয়। এই রূপ দেখার, এই সৌন্দর্য দেখবার মতো। যারা নয়ন মেলে দেখেন, মন খুলে অনুভব করেন, যারা দেখতে ভালোবাসেন তারা রমনায় নিত্য নতুন দৃশ্য দেখেন।
এই দেখার দলের একজন ফটোগ্রাফার আককাস মাহমুদ। শহরের নিউ ইস্কাটনের বাসিন্দা। ভাত-কাপড়ের লড়াইটাও তার এই অঞ্চলে বাঁধা। সেই সূত্রে রমনা উদ্যানের অবস্থানকে বলা যায় ঘর পেরোনো উঠানে। তাই বছরের পর বছর তিনি সকাল-বিকেল-দুপুর-সন্ধ্যা-রাতে হেঁটেছেন, দেখেছেন রমনার রূপ। এবং দেখার সুখকে ধরার চেষ্টা করেছেন ক্যামেরায়। ফোন ক্যামেরায় ধরা রমনার এক একটা চিত্র ফেসবুকে দিয়ে মায়া ছড়িয়েছেন বিশ্ব বাঙালির দুয়ারে। কতো কতো ছবি, কতো কতো গল্প। সেই শত শত, হাজার হাজার আলোকচিত্র থেকে বাছাই করে এবারের অমর একুশে বইমেলায় আনা হয়েছে ফটোঅ্যালবাম ‘রমনার ছায়া-ছবি’।
রমনার ছায়া-ছবি নিয়ে যখন লেখার চষ্টা চলছে তখন লিপ ইয়ারের বাড়তি দিন পেরিয়েও ফেব্রুয়ারি মাস শেষ। হিসেব মতো বইমেলাও গত হওয়ার কথা। কিন্তু এবার সীমানাগণ্ডি পেরিয়ে মেলা ৩১ দিনের। বইমেলার তাবু গোটানো হবে শনিবার, মার্চ মাসের দুই তারিখ। তার মানে শুক্র আর পরের দিন যারা দেখার, যারা কেনার ‘রমনার ছায়া-ছবি’ পাবেন বইমেলায়।
রমনার ছায়া-ছবি’তে যে ছবিগুলো দিয়ে করা হয়েছে অ্যালবাম, তার প্রতিটির দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে অনেক্ষণ। তারপর ভাবতে হবে। ভাবতে ভাবতে বলতে হবে, বাহ এতো এত রূপ ছড়িয়ে থাকে এই শহরের একটা পার্কে! এতো এতো ঘটনা ঘটতে থাকে ইট-পাথরে গড়া নিষ্ঠুর ঢাকা শহরের একটা উদ্যানে? এবং আপনি এই শহরের যে কোণায় থাকেন না কেনো ছবিগুলোয় চোখ পড়তেই এমন মায়া হবে রমনার জন্য যে, তখনি মন বলবে, একবার দেখে আসি নিজের শহরের উদ্যানকে।
ক্রিয়েটিভ ঢাকা পাবলিকেশন ফটো অ্যালবামটি যত্ন নিয়ে প্রকাশ করেছে। পেপারব্যাক কভারে, আর্ট পেপারে, বহুরঙে করা অ্যালবাটির বাড়তি পাওনা সাংবাদিকতার শিক্ষক গোলাম রহমান ও লেখক লুৎফর রহমান রিটনের ভূমিকা কথা। এবং এই প্রকাশনা নিয়ে আপাতত প্রান্তকথা- রমনা উদ্যানের বহুরূপী রূপ পুরোপুরি ধরার সাধ্য নেই কারো। এই সীমাহীন সৌন্দর্যের কিছুটা ধরে, ছবি পরে মলাটবন্দি করে দিলেন আককাস মাহমুদ। তার রমনাপ্রেম জাগ্রত থাকুক। এবং এই প্রেমটা ছড়িয়ে পড়ুক ঢাকা শহরের সবার বুকে বুকে।