মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পেয়েছিলেন এক নিরন্নের অভাবী বাংলাদেশকে। যুদ্ধবিধ্বস্ত সেই বাংলাদেশে ছিল পাক হানাদারদের ধ্বংসাত্মক চিহ্ন, স্বজন হারানোর আহাজারি আর অনিশ্চিত ভবিষ্যত। পাকহানাদাররা পরিকল্পিতভাবে মানুষ হত্যার পাশাপাশি বাংলাদেশের সম্পদেরও হত্যা করেছিল। শহর থেকে গ্রাম-সবজায়গাতেই বিভিন্ন অবকাঠামো, রাস্তাঘাট, ব্রীজ তারা মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়েছিল। ২০ লক্ষেরও বেশি বাড়ি ধ্বংস করে দেয়া হয়েছিল। সেই বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে সামনে রেখেই স্বপ্ন মেলে ধরেছিলেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর কাছে অগ্রগণ্য ছিল কৃষি। কৃষক আর কৃষি জমি বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে এটিই ছিল তাঁর অন্যতম উন্নয়ন দর্শন। কৃষির অবকাঠামো পুননির্মাণ, উচ্চফলনশীল বীজের সরবরাহ, আধুনিক সেচ যন্ত্রের আমদানি, ভুর্তকি বা বিনামূল্যে কৃষি উপকরণ সরবরাহ, কৃষকদের বিরুদ্ধে এক লক্ষ সার্টিফিকেট মামলা প্রত্যাহার, কৃষি ঋণের ব্যবস্থা এবং কৃষকদের জন্য ন্যায্য মূল্য এবং রেশন সুবিধা চালুর মতো উদ্যোগগুলো শুরু করেছিলেন বঙ্গবন্ধুই।
‘কৃষি দেবে খাবার, কর্মসংস্থান’-এটি বঙ্গবন্ধু মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন। বাংলাদেশ সবসময়ই কৃষি নির্ভর দেশ। কৃষিই আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। কৃষির উন্নয়ন হলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন হবে এটিই সত্য। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার কৃষিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে অনেক ধরনের কৃষিবান্ধব নীতি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। এটি সত্য যে কোনো সময়ের তুলনায় আমাদের কৃষি উৎপাদন অনেক অনেক বেশি। কিন্তু কৃষি জমির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা, তদারকি ও রক্ষায় আমরা যেনো এখন একেবারেই নির্বিকার। আর এ কারণেই আমাদের আহারের যোগান হয় যে জমি থেকে সেই কৃষি জমি বহুবিধ কারণে এখন কমে আসছে। সেই কমে আসাটা ভয়ংকরও বটে। অপরিকল্পিত নগরায়ন, যত্রতত্র অবকাঠামো নির্মাণ, নদী ভাঙ্গন, ইটভাটা, কলকারখানা স্থাপন, বাগানবাড়ি, রিসোর্ট-এসব নানা কারণেই কমে আসছে কৃষি জমি। প্রতিদিনই কৃষি জমি কমছে। সবুজের সমাহারের আড়ালে তাই উঠছে ঘরবাড়ি, অবকাঠামো। যে রাস্তার দুপাশে একসময় দেখা গেছে কেবলই ফসলের ক্ষেত, সেই রাস্তার দুপাশে এখন নানান অবকাঠামো। অনেক জায়গাতেই চিরচেনা ফসলের ক্ষেত আড়াল করে ফেলছে নতুন নতুন বসতি। এদিকে প্রতিবছরই রাস্তাঘাট উন্নয়নের নামেও বিপুল পরিমাণ কৃষি জমি অধিগ্রহণ করা হচ্ছে।
কৃষি জমির কমে আসার তথ্যটা এখন বেশ ভয়ংকর, অশনি সংকেতও বলা যায়। পরিবেশবিদরা অনেক আগে থেকেই বিষয়টি নিয়ে সোচ্চার। নীতি-নির্ধারকরাও এখন উচ্চস্বরে কথাবার্তা বলছেন। কিন্তু কাজের কাজ তেমন একটা হচ্ছে না। বরং প্রতিদিনই কমছে কৃষি জমি। কৃষি জমি রক্ষায় ‘কৃষি জমি (যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণ) আইন ২০২২’ নামে একটি বেসরকারি বিল গ্রহণ করা হলেও তা এখনও আইনে পরিণত হয়নি। ফলে কৃষি জমি রক্ষায় এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোনো আইন বা নীতি প্রণীত হয়নি। এমন প্রেক্ষিতে প্রতিবছরই কৃষি জমি কমে আসার খবর আসছে। এইতো কয়েকমাস আগে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো: শাহাবউদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে প্রতিবছর গড়ে প্রায় ৬৯ হাজার হেক্টর আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে যাচ্ছে। ফলে এই জমিগুলোতে আর কোনো ধরনের চাষবাস হচ্ছে না। ঐ একই অনুষ্ঠানে পরিবেশ অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক জানান প্রতিবছর আমাদের দেশে ১ শতাংশ হারে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা চলমান থাকলে আগামী ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশে আর কোনো কৃষি জমির অস্তিত্বই থাকবে না।
দেশের প্রতিটি উপজেলাতেই এখন কৃষি জমি অকৃষি খাতে চলে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। সম্প্রতি ঢাকা ট্রিবিউন-এ ফরিদপুর জেলার কৃষি জমি হ্রাস সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয় গত ৬ বছরে ফরিদপুর জেলায় ৯টি উপজেলাতেই ব্যাপক হারে কৃষি জমি হ্রাস পেয়েছে। বলা হয় গত ২০১৬-২০১৭ অর্থবছরে জেলা জুড়ে মোট আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৮ হেক্টর। জমি হ্রাস পেতে পেতে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে এসে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৩২ হাজার হেক্টর জমিতে। অর্থাৎ গত ৫ বছরে প্রায় ১৪ হাজার হেক্টরেরও বেশি আবাদি জমি অকৃষি খাতে চলে গেছে। কেন এমন হয়েছে এমন উত্তরে বলা হয়েছে অপরিকল্পিত বাড়িঘর নির্মাণ, ইটভাটা স্থাপন, ফসলি জমির মাটি বিক্রি, পুকুর খনন ইত্যাদি। শুধু ফরিদপুর বলে কথা নয়- রাজবাড়ী, মাগুরা, যশোর সর্বত্রই এমন চিত্র এখন দৃশ্যমান। মাগুরা থেকে যশোর যাওয়ার রাস্তার দু পাশেই ছিল দিগন্ত ছোঁয়া কৃষি জমি। কিন্তু সেখানেও নগরায়নের কারণে কৃষি জমি দিন দিন কমে আসছে। যশোরের খাঁজুরা, বাহাদুরপুর, হাশিমপুর, বাঘারপাড়া, মাগুরা জেলার শালিখায় মূল রাস্তার দুপাশের অনেক ধানী জমিতে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট শিল্প কল-কারখানা। ঢাকার আশেপাশের জেলার অবস্থা অবশ্য সবচেয়ে করুন। মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, নরসিংদী, টাঙ্গাইল-এ সব জেলার বিপুল পরিমাণ জমি চলে যাচ্ছে আবাসান খাতে। প্রতিবছরই উল্লিখিত এসব জেলার জমি গ্রাস করছে হাউজিং কোম্পানীগুলো।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) মতে, ১৯৮০ সালে কৃষিজমির পরিমাণ ছিল দেশের মোট জমির ৬৫ দশমিক ৫৯ শতাংশ। তা কমতে কমতে ২০১৯ সালে এসে ৫৯ দশমিক ২৮ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ৩৯ বছরে কমেছে ৭ দশমিক ৩১ শতাংশ। আর ভূমি জরিপ বিভাগের তথ্য মতে, ১৯৭১ সালে আবাদি জমির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ১৭ লাখ হেক্টর। ২০০৩ সালে তা কমে দাঁড়ায় ৭০ লাখ ৮৭ হাজার হেক্টরে। গত ৩২ বছরে আবাদি জমি কমেছে ১ কোটি ৪৬ লাখ ১৩ হাজার হেক্টর। পরের ১৮ বছরে এর পরিমাণ আরো কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন কৃষি জমি রক্ষা এখন সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। আইন তৈরি এবং আইনের প্রয়োগ করা না গেলে কৃষি জমি কমতেই থাকবে। কিন্তু আইন এবং আইনের প্রয়োগ কবে আলোর মুখ দেখবে তাও বলা মুশকিল। কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার নিয়ে প্রথম আইনের খসড়া হয় ২০১১ সালে। এরপর ১০ বছর কেটে গেছে। কিন্তু চূড়ান্ত হয়নি কৃষিজমি সুরক্ষা ও ভূমি ব্যবহার আইন। কৃষি জমি অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করলে ৩ বছরের কারাদন্ডের বিধান রেখে এবছর একটি বেসরকারি বিল গ্রহণ করে জাতীয় সংসদ। ৩১ মার্চ বৃহস্পতিবার স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ অধিবেশনের শুরুতেই বিলটি উত্থাপন করেন জাতীয় পার্টির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রওশন আরা মান্নান। এই আইন কার্যকর হলে কেউ কৃষি জমি অকৃষি কাজে ব্যবহার করলে অর্থদন্ড ও কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন এমন বিধান রাখা হয়েছে। এই বিলটি উত্থাপনের পর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটিতে প্রেরণ করা হয়। উত্থাপিত আইনটি কৃষি জমি (যথাযথ ব্যবহার ও সংরক্ষণ) আইন-২০২২ নামে অভিহিত করা হয়েছে।
এই আইন কার্যকর হওয়ার পর হতে দেশের সকল কৃষি জমি কৃষি কাজ ব্যতীত অন্য কোনো কাজে ব্যবহার করা যাবে না, বা অন্য কোনো কাজে ব্যবহারের জন্য ভাড়া, ইজারা বা অন্য কোনোভাবে হস্তান্তর করা যাবে না। কোনো ব্যক্তি এই আইনের কোনো বিধান লঙ্ঘন করলে তিনি অনধিক ৩ বছরের কারাদন্ডে অথবা অনধিক ৫০ হাজার টাকা অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবেন। এই বিলের উদ্দেশ্যে সম্পর্কে বলা হয়েছে- অপরিকল্পিত আবাসন, শিল্প কারখানা, রাস্তাসহ অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণের কারণে প্রতিদিন কমে যাচ্ছে প্রায় ২১০ হেক্টর জমি। বর্তমানে দেশে মাথাপিছু জমির জমির পরিমাণ ১৪ শতাংশ। অপরিকল্পিত ব্যবহার অব্যাহত থাকলে মাথাপিছু জমির পরিমাণ ২০৪১ সাল নাগাদ ৬ শতাংশে নেমে আসবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। চাষের জমির এই ক্রমহ্নাসমান প্রক্রিয়াকে বিশেষজ্ঞরা ইতোমধ্যে অস্বাভাবিক বলে অভিমত ব্যক্ত করেছেন। বর্তমান সময়ে আমরা দেখছি নীতিনির্ধারকরা কৃষি জমি রক্ষায় বিষয়টি কিছুটা হলেও আমলে নিয়েছেন। কৃষি জমির সুরক্ষায় সম্প্রতি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমির সিলিং-এর বিষয়টিও বলা হয়েছে। ‘ভূমি সংস্কার আইন-২০২২’ এ বলা হয়েছে ব্যক্তি ও পরিবার পর্যায়ে কেউ আর এখন ৬০ বিঘার বেশি কৃষি জমির মালিকানা রাখতে পারবেন না বলে । জানা গেছে এই আইনটি কার্যকর হওয়ার পর থেকে কৃষি জমি রক্ষায় নিবিড় তদারকি ব্যবস্থা গড়ে তোলা হবে। এই আইনেরও মূল উদ্দেশ্য হলো কৃষি জমির সুরক্ষা দেওয়া। ‘ভূমি সংস্কার আইন-২০২২’-এর দ্বিতীয় অধ্যায় কৃষি জমি অর্জন সীমিতরকণ বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। আইনের ৪ (১১) ধারায় বলা হয়েছে, যিনি বা যার পরিবার ৬০ প্রমিত বিঘা (৩৩ শতক এক বিঘাকে প্রমিত বিঘা বোঝানো হয়) অপেক্ষা অধিক কৃষি জমির মালিক, তিনি নতুন করে হস্তান্তর, উত্তরাধিকার, দান বা অন্য যে কোনো উপায়ে নতুন কোনো কৃষি জমি অর্জন করতে পারবেন না।
কৃষি জমি দিনের পর দিন কমতে থাকার কারণে আমাদের কৃষি উৎপাদন যেমন কমে আসছে, একইভাবে পরিবেশের সার্বিক ভারসাম্যও বিঘ্নিত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এভাবে কৃষিজমি নষ্ট হলে ধীরে ধীরে খাদ্যনিরাপত্তাও সংকুচিত হয়ে আসবে। কৃষি প্রধান দেশ হওয়া সত্ত্বেও আমরা একটা বিষয় খেয়াল করছি যে কৃষি জমি রক্ষা বা সুরক্ষায় কারোরই তেমন কোনো মনোযোগ নেই। আর এ কারণেই কৃষি জমি চলে যাচ্ছে অকৃষি খাতে।
কৃষি জমি রক্ষায় কিছু প্রস্তাবনা:
১. কৃষি জমি রক্ষায় প্রস্তাবিত আইন ও নীতিমালা দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
২. জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় দেশের সকল ধরনের কৃষিজমি রক্ষা ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে একটি সুনিদিষ্ট সর্বজনীন গ্রহণযোগ্য জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৩. নিদিষ্ট শিল্পাঞ্চলের বাইরে কৃষি জমির ওপর যত্রতত্র ছোট-বড় শিল্প-কলকারখানা, বাণিজ্যিক পার্ক, বাগান বাড়ি নির্মাণ বন্ধে আইন প্রণয়ন ও তার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি জমিতে ইট ভাটা নির্মাণ, বেচাকেনা সম্পূর্ণরুপে বন্ধ ঘোষণা করতে হবে।
৪. সরকারের যে কোনো উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ব্যাপক (রাস্তাঘাট, অবকাঠামো নির্মাণ) পরিমাণ কৃষি জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে সঠিক যাচাই বাছাই করতে হবে। কৃষিজমি ব্যবহার করে অপরিকল্পিত রাস্তাাঘাট, দালানকাঠা, বাসভবন নির্মাণ বন্ধ করতে হবে।
৫. দেশের দক্ষিণাঞ্চলে (যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা) জলবদ্ধতা দূর করে কৃষি জমি উদ্ধার ও চাষপোযোগী করতে হবে। ছোট বা বড় নদী খননের সময় (ড্রেজিং) যে কোনো ধরনের কৃষি জমিতে বালু ফেলা নিষিদ্ধ করতে হবে।
৬. চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, যশোর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট প্রভৃতি এলাকায় কৃষি জমিতে ঢুকে পড়া পানির লবণাক্ততা কমিয়ে বোরো চাষের উপযোগী করতে হবে।
৭. কৃষি জমির ক্ষয় রোধে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এ বিষয়ে জনগণকে সতর্ক ও সচেতন করতে রাষ্ট্রীয়ভাবে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালানোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮. কৃষি জমির সক্ষমতা ধরে রাখার জন্য কৃষককে এবং সাধারণ জনগণকে সচেতন করতে হবে।
৯. কৃষি জমিতে কীট বালাইনাশক ব্যবহারের ক্ষেত্রে সুনিদ্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। ক্ষতিকারক ও অঅনুমোদিত কীটনাশক বিক্রেতাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
১০. জৈবচাষ পদ্ধতি ব্যবহারের জন্য কৃষকদের সরকারিভাবে আরো সহযোগিতা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে এবং এ বিষয়ে কৃষকদের আরো উৎসাহিত করতে হবে।
১১. কৃষি জমিতে সেচসরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য অগ্রাধিকারভিত্তিতে বিদ্যুৎ ও ডিজেল সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। ফসল কাটার পর কৃষি জমি গোচারণের জন্য উন্মুক্ত করে দিতে হবে।
১২. কৃষিজমিতে খাদ্যশষ্যের বাইরে যে কোনো ধরনের বাণিজ্যিক ও ব্যাপকভিত্তিক ফল চাষ ( তামাক, বরই, ফুল, পেয়ারা, স্ট্রবেরী) কমিয়ে আনতে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।
১৩. খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষে কৃষককে সরাসরি ভর্তুকি প্রদান করতে হবে। কথিত বাণিজ্যিক কৃষিকে নিরুৎসাহিত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
১৪. বিভিন্ন নদনদীতে জেগে ওঠা চরসমূহকে চাষের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধ করতে হবে। নদীর নব্যতা ফিরিয়ে আনতে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৫. হাওর, বাওর, বিল, জলাশয়, জলমহালে প্রকৃত মৎস্যজীবী, নদীজীবী ও মৎস্য চাষীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। হাওর, বাওর, বিল, জলাশয়, জলমহালে পানি ধরে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
১৬. কৃষি জমি নষ্ট করে অপরিকল্পিত বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করতে হবে। কৃষিজমির প্রাণরক্ষায় গতিহীন মরে যাওয়া এবং হাজামজা সকল ছোট নদ-নদী, খাল পুনখননের ব্যবস্থা করতে হবে। কৃষি খাসজমি, জলমহাল বন্দোবস্তে প্রকৃত ভূমিহীনদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। সরকারি কৃষি খাস জমি কোনোভাবেই বিক্রি করা চলবে না। পতিত জমি কৃষি জমিতে পরিণত করতে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
১৭. শিল্প প্রধান অঞ্চলগুলোতে কৃষি জমি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ডিসি অফিস থেকে পারমিশন নেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। খাস কৃষি জমিতে কোনো ধরনের আশ্রয়ন/আবাসন বা অপ্রয়োজনীয় যে কোনো ধরনের প্রকল্প তৈরি বন্ধ করতে হবে।
১৮. পৌর এলাকার বাইরে টাউনশীপ কনসেপ্টের ভিত্তিতে বসতবাড়ি নির্মাণ নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। কর্পোরেট কৃষি এবং কণ্টাক্ট ফার্মিং-এর নামে কৃষি জমির সর্বোচ্চ বাণিজ্যিক ব্যবহার বন্ধ করে কৃষির স্থায়ীত্বশীল ব্যবহারে মনোযোগী হতে হবে। ফ্যামিলি ফার্মিংকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। পারিবারিক চাষাবাদকে আরো উৎসাহী করতে হবে।
১৯. অধিক মুনাফা লাভের অজুহাতে কর্পোরেট এনজিওসহ যে কোনো কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানের হাতে সরকারি- বেসরকারি‘ কৃষি জমি তুলে দেওয়া বন্ধ করতে হবে। শিল্প-কারখানা প্রতিষ্ঠার নামে কৃষিজমি গ্রাস বন্ধ করতে হবে।
২০. দ্রুত দেশে ‘ল্যান্ড ব্যাংক ’ স্থাপন করে কৃষি জমিতে যে কোনো ধরনের শিল্প-কারখানা স্থাপনে নিরুৎসাহিত করতে হবে।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)