পাকিস্তানের সাধারণ নির্বাচনের ৫ দিন পার হয়ে গেলেও দেশটির নাগরিকরা এখনও জানে না কোন দল তাদের পরবর্তী সরকার গঠন করবে বা তাদের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন।
বিবিসি জানিয়েছে, পাকিস্তানের এবারের নির্বাচনে দেশটির সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের আটক হওয়া এবং তার দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফকে (পিটিআই) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না দেওয়ার পরেও দলের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সর্বাধিক ৯৬টি আসনে জয়লাভ করে পর্যবেক্ষকদের অবাক করে দিলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১৬৯টি আসনের তুলনায় এই সংখ্যা খুবই কম। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কোন দলই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি। তাই এখন সবাই চমকের অপেক্ষাতেই রয়েছেন।
পাকিস্তানের সংবিধান যা বলছে
পাকিস্তানের সংবিধানে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী ২৯ ফেব্রুয়ারি বা নির্বাচনের দিন থেকে তিন সপ্তাহের মধ্যে সরকার গঠন করতে হবে। দেশটির জাতীয় পরিষদে মোট ৩৩৬টি আসন রয়েছে, যার মধ্যে ২৬৬টি সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নির্ধারিত হয়। বাকি ৭০টি সংরক্ষিত যার মধ্যে ৬০টি মহিলাদের জন্য এবং ১০টি অমুসলিমদের জন্য।
বড় দলগুলোর আসন সংখ্যা
ইমরান খানের দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (পিটিআই) নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারলেও দলের সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সর্বাধিক ৯৬টি আসনে জয়লাভ করেছে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লীগ নওয়াজ (পিএমএল-এন) ৭৫টি আসনে জয় লাভ করে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন। তার সাথে দেশের শক্তিশালী সামরিক বাহিনীর সমর্থন ছিলো এবং তিনিই এবারের নির্বাচনে বিজয়ী হবেন বলে মনে করা হয়েছিল। অপরদিকে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির নেতৃত্বাধীন পাকিস্তান পিপলস পার্টি (পিপিপি) ৫৪টি আসনে জয় লাভ করে তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
জোট গঠনই সমাধান
পাকিস্তানের রাজনৈতিক বিশ্লেষক রফিউল্লাহ কাকার বলেছেন, এটি এমন একটি অবস্থা যেখানে কোন দলেরই একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নেই। তবুও তাদের অস্তিত্বের জন্য একটি সাধারণ ভিত্তি খুঁজে বের করতে হবে বা একটি জোট গঠন করতে হবে।
যদিও পিটিআই এবং পিএমএল-এন উভয়ই নিজেদের বিজয়ী ঘোষণা করেছে তবে একটি জোট সরকার অনিবার্য বলেই মনে হচ্ছে। এদিকে জয়ী না হওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থীরা ভোট কারচুপির অভিযোগে আদালতে অভিযোগ করেছে। পিটিআই-এর সমর্থকরাও সারাদেশে নির্বাচন কমিশন অফিসের বাইরে বিক্ষোভ করছে।
এই অবস্থায় কয়েকটি সম্ভাব্য পরিস্থিতি রয়েছে,
পিএমএল-এন ও পিপিপির জোট গঠন
ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সামিনা ইয়াসমিন বলেছেন, পিএমএল-এন পিপিপির পাশাপাশি কিছু ছোট দলের সাথে জোট গঠন করতে পারে। এই ২টি দল ২০২২ সালে ইমরান খানকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেওয়ার জন্য একটি জোট গঠন করে গত আগস্ট পর্যন্ত দেশটি শাসন করে। তবে এখানে মূল প্রশ্ন হলো, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন?
দেশটির সামাজিক উদারপন্থী রাজনৈতিক দল মুত্তাহিদা কওমি মুভমেন্টকেও (এমকিউএম) জোটে যুক্ত করতে আগ্রহী পিএমএল-এন। এবারের নির্বাচনে দলটি ১৭টি আসনে জয় পেয়েছে। পাশাপাশি স্বতন্ত্র প্রার্থীদেরও দলে ভেড়াতে চেষ্টা চালাচ্ছে দলটি।
পিটিআইয়ের পরিকল্পনা
পিপিপির সিনিয়র নেতা শেরি রেহমান বলেছেন, পার্টির দরজা সমস্ত রাজনৈতিক শক্তির জন্য উন্মুক্ত।
তবে ইমরান খানের মিডিয়া উপদেষ্টা জুলফি বুখারি বলেছেন, পিটিআই যদি সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে ব্যর্থ হয় তবে জোট গঠনের পরিবর্তে বিরোধীদের আসনে বসার খুব বেশি সম্ভাবনা রয়েছে।
পিটিআই-সমর্থিত স্বতন্ত্রদের ছোট কোন দলের সাথে যুক্ত হওয়া
একটি সম্ভাবনা হল, পিটিআই-সমর্থিত প্রার্থীরা জোট সরকার গঠনের জন্য একটি ছোট দলে যোগ দিতে পারে। এটি তাদের আসন একত্রিত করার জন্য এবং মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত আসন নিজেদের করতে সাহায্য করবে।
একটি রাজনৈতিক দল প্রতি ৩ দশমিক ৫ আসনের জন্য একটি মহিলা সংরক্ষিত আসন পায়। স্বতন্ত্র প্রার্থীরা কোন দলের না হওয়ায় তারা এজন্য অযোগ্য। নির্বাচনের ফলাফল চূড়ান্ত হওয়ার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে তাদের অবশ্যই একটি দলে যোগদান বা স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য হিসেবে সংসদে বসার ইচ্ছা প্রকাশ করতে হবে।
তবে লাহোর ইউনিভার্সিটি অফ ম্যানেজমেন্ট সায়েন্সেসের আসমা ফয়েজ বলেছেন, পিটিআই জোট সরকার গঠন করতে সক্ষম হবে তা খুবই অসম্ভব কারণ ছোট দলগুলোর সাথে জোট করলেও তারা সংখ্যাগরিষ্ঠতা থেকে দূরে থাকবে। তিনি বলেন, এতে পিটিআই-এর তেমন কোন সুবিধা হবে না।