মডেলিং, নাটক, ওটিটি- সব মাধ্যমেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন হাল সময়ের ক্রেজ অভিনেতা আফরান নিশো। তার প্রতি দর্শকদের আস্থা এতটাই যে, তিনি থাকা মানেই দর্শক অন্ধের মতো বিশ্বাস করেন যে কাজটি ভালো হবে! গত দুই দশকের ক্যারিয়ার পার করে নিশো এবার সিনেমা করছেন।
মঙ্গলবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) রাতে রাজধানীর একটি হোটেলে বসে নিশো তার প্রথম সিনেমা ‘সুড়ঙ্গ’র মহরত শেষে কথা বললেন চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে…
শোবিজে দুই দশকের বেশি সময় ধরে, এতোদিন পর কেন মনে হল ‘সুড়ঙ্গ’ সিনেমাটাই করি?
প্রত্যেক গল্পে নিজস্ব বিউটি থাকে। এই গল্পে নিশ্চয়ই ভালো লাগা আছে বলে আমাকে কানেক্ট করেছে। টিমে যারা আছে সবার কাছে প্রশ্ন ছিল গল্পটা কী ভাবিয়েছে নাকি কাজ করতে হয় তাই করছো? প্রত্যেকে সন্তোষজনকভাবে উত্তর দিয়েছে। তাই মনে হচ্ছে দর্শকরাও কানেক্ট করবেন। আমি সবসময় কাজে সততা রেখেছি। প্রতিটি কাজের আগে নার্ভাস হই, চ্যালেঞ্জ লাগে। যেহেতু এটা সিনেমা তাই যেমন বেশি অ্যাফোর্ড থাকবে তেমনভাবে রিল্যাক্স পাবো। সিনেমার জায়গাটা এখন চেঞ্জ হয়েছে। আমার পূর্বে যারা কাজ করেছেন তাদের সারাবছর ফিল্মে ব্যস্ততা দেখিনি। আমি আগে ফিল্মে আসার সৎ সাহসটা পাইনি। কিন্তু এখন ফিল্মে অনেক কিছু দেখে ‘জাস্ট ওয়াও ফ্যাক্ট’ কাজ করে। মনে হয়েছে এখন সিনেমা করা যায়। কেন ২০ বছর সিনেমা করিনি এটা আমার জন্য কোনো প্রেসার না। একটি সিনেমা করে দেখি কেমন লাগে এমন ভাবনা আমার কোনোদিনই ছিল না। পেশাদারভাবে এই সেক্টরে কাজ করতে পারবো কিনা সেটা সবসময় দেখেছি। এখন মনে হয়েছে একেবারে সঠিক সময়। একজন অভিনেতাকে পেশাদারিত্ব রাখতে গেলে বছরে কমপক্ষে দুই তিনটি সিনেমা করা লাগে। কারণ এটাই রুটি রুজি। আগে আমি পেশাদারভাবে আসতে পারছিলাম না বলে নাটকে ছিলাম। এখন সবকিছু বিবেচনা করে দেখলাম দিন বদলাচ্ছে।
‘সুড়ঙ্গ’-এর প্রস্তুতি কেমন?
বেশি স্টাক হওয়ার চেয়ে রিল্যাক্স থাকা জরুরি। জাস্ট গো ইউথ দ্য ফ্লো… অভিনয়ের অনেক পথ আছে। কেউ অবজারভেশন থেকে অভিনয় করে, কেউ থিওরি এপ্লাই করে আবার কেউ মেথড এক্টিং করে। আমি ওপেন থাকার চেষ্টা করছি। গল্প ভাবনা শুনে এবং স্ক্রিপ্ট পড়া থেকে প্রস্তুতি শুরু হয়। এই সিনেমার জন্য ওজন কমিয়েছি ব্যাপারটা তা না। ১৩ কেজির মত ওজন কমিয়েছিলাম। যেটা নিজের জন্য দরকার ছিল, সিনেমার ক্যারেক্টারের সঙ্গে অনেকটা সেটা যায়। রাফী আমাকে বহু আগে গল্পটা শুনেয়েছিল। তখন থেকে মনস্তাত্বিক প্রস্তুতি আছে। নাম যেহেতু ‘সুড়ঙ্গ’ আমাদের মাটির নিচে যেতে হবে। তাই আর্ট সেকশনের বড় প্রস্তুতি আছে। ফাইনালি ৫ মার্চ থেকে শুটিংয়ে যাচ্ছি। যে কোনো ঈদে মুক্তি পাবে।
সিনেমা যেহেতু, নাচগান নিশ্চয়ই আছে…?
নাচ গানের জায়গাটায় একটু ভয় আছে। এখানে আমাকে প্রস্তুত হতে হবে। তবে আমি মনে করি গল্প যদি ঠিক থাকে জোর করে নাচানাচির ওতো বেশি দরকার হয় না। তাছাড়া সবাই তো আর মুদ্রা ধরে নাচে না, আমার চরিত্র অনুযায়ী নাচা গানা হবে।
আপনার পূর্বে অনেকে নাটক থেকে সিনেমায় এসে নাটক ছেড়েছেন। আপনার ভাবনায় কী আছে?
একসময় মডেল ছিলাম। এরপর নাটক করেছি, পরে ওটিটি করেছি। এখন ফিল্ম নিয়ে ভাবছি। আমার কাছে প্রতিটা মাধ্যমই আলাদা। সিনেমায় ব্যবস্তা বাড়লে অন্য প্লাটফর্ম বাদ দেওয়ার দৃষ্টতা আমার নেই। হয়তো কম কাজ হবে কিন্তু আমি বাদ দিতে পারবো না। যদি নাটক করি তাহলে একটা করতে পারবো না। হয়তো করলে দশটি করতে হবে। যাতে আমার প্রতি কেউ মনঃক্ষুণ্ণ না হয়। সিনেমায় যদি পূর্বের প্লাটফর্মগুলোর মতো নিজেকে প্রমাণ করতে পারি তাহলে অন্য মাধ্যমে কাজ কমে যাবে।
যে সময়টা ফিল্মে দিচ্ছেন মনে হচ্ছে ফিল্ম করে আর্থিকভাবে লাভবান হবেন?
সিনেমায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি, এটা মনে হচ্ছে না। মাসে ১২টি নাটক করলে যে বাজেট থাকতো একটি ওটিটি করলে সেই পরিমাণ পারিশ্রমিক থাকছে। ওটিটির চেয়ে ফিল্মের বাজেট আরও বেশি। সেই হিসেবে পারিশ্রমিক নিয়ে কাজ করছি। ইটস অলমোস্ট সেইম ফিগার। আসলে সবকিছু ব্যালেন্স করে চলার চেষ্টা করছি।
ফিল্মে অদৃশ্য পলিটিক্স বিরাজমান! সালমান শাহ্ থেকে শাকিব খান যারা সুপারস্টার হয়েছেন, ভালো ভালো কাজ করেন- তাদের প্রায় সবারই কমন অভিযোগ,পদে পদে তাদের আটকানোর চেষ্টা করা হয়। এসব বিষয়ে আপনি অবগত?
ভালো কাজে যদি ঝামেলা আসে বা আটকানোর চেষ্টা করা হয় তবে সেটা ভালোভাবেই মোকাবিলা করা উচিত। কেউ যদি পলিটিক্স করে তাহলে সেটা পলিটিক্সের মাধ্যমে জবাব দিতে হবে। পারফর্মার হিসেবে আমার ধর্ম হচ্ছে কাজ। কাজই সবকিছুর প্রতিফলন করাবে। একটা ভালো কাজ যদি পলিটিক্সের মাধ্যমে মুখ থুবড়ে পড়ে তাহলে সেই প্লাটফর্ম মোটেও আমাদের হবে না। এসব নিয়ে আমি কোনোসময় ভয় পাই না।
অনেকবার বলেছেন প্রয়াত হুমায়ুন ফরীদি আপনাকে প্রভাবিত করে। তিনি সিনেমায় নেতিবাচক চরিত্র করতেন। আপনার তেমন ইচ্ছে আছে?
আমি সর্বপ্রথম ব্যক্তি হুমায়ুন ফরীদির প্রেমে মশগুল হয়েছি, পরে তার পারফর্মেন্সে মুগ্ধ হয়েছি। আমি তাকে অনুসরণ করিনা, অনুকরণ করি কিছু কিছু ক্ষেত্রে। তিনি যে মাছ খেতে পছন্দ করতেন ঠিক একই মাছ আমার পছন্দ। তার এটিটিউড ভাইব আমার সাথে মিলে যায়। তার সাথে আমার কনভারসেশন মিলতো, মেন্টাল কানেকশন ছিল। তিনি বড় অভিনেতা হওয়ার পরেও তাকে পুরস্কৃত করা হয়েছে কম। তাই আমার নিজস্ব ইচ্ছা আমার সকল পুরস্কার তাকে দেই। এটা আমার একধরনের প্রতিবাদ। উনি যে মাপের অভিনেতা তাকে সেই উঁচুমানের চরিত্রগুলো আমরা তাকে দিতে পারিনি। সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারিনি বিধায় তিনি নেগেটিভ চরিত্র করতেন। তার এই কষ্টগুলো কেউ বোঝেনি। কাজেই তার মতো অভিনেতা আমাকে হতে হবে এমনটা নয়।
প্রথম সিনেমার উদ্দেশ্য সফল হওয়া নাকি ব্যর্থ হওয়ার ভয় কাজ করছে?
যে কেউই চাইবে প্রথমে সফল হতে। তবে সফল হলে যেন অহংকার না আসে সেটা খেয়াল রাখা উচিত। আমি মনে করি যখন ব্যর্থতা আসে তার মানে থেমে যাওয়া নয়, ব্যর্থতা একটা শিক্ষা। সফলতা কিংবা ব্যর্থতা দুটোর যেকোনো একটা আসবে। দীর্ঘদিন কাজ করে অনেকবার হেরেছি আবার জিতেছি। ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে আবার আপ্রাণ চেষ্টায় সাফল্যের দেখা পেয়েছি।