চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘হাওয়া’ নিষিদ্ধের নোটিশে অভিনয়শিল্পী সংঘের প্রতিবাদ

বন্য প্রাণী সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা আইন লংঘন সহ ‘ভায়োলেন্স’ ও ‘অশ্লীলতা’র অভিযোগ এনে গত সোমবার ‘হাওয়া’ সিনেমাটি প্রদর্শন নিষিদ্ধে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। এর প্রতিবাদে সোচ্চার চলচ্চিত্রের মানুষ। এ ঘটনায় এবার বিবৃতি দিয়েছে বাংলাদেশ অভিনয়শিল্পী সংঘ।

মঙ্গলবার সংগঠনটির সভাপতি আহসান হাবীব নাসিম ও সাধারণ সম্পাদক রওনক হাসানের স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে ‘হাওয়া’ সিনেমার বিরুদ্ধে অভিযোগ সরাসরি চলচ্চিত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে এমন ঘটনার প্রতিবাদ জানানো হয়েছে।

ওই বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র যখন কয়েকজন তরুণ, মেধাবী, শিক্ষিত শিল্পী, নির্মাতার হাত ধরে ধ্বংসস্তূপ থেকে আবার নতুনভাবে একটু একটু করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে, আবার যখন সিনেমা হলে মানুষের জোয়ার নেমেছে, মানুষ দলে দলে সিনেমা দেখতে আসছে, ঠিক তখনি এ জোয়ার বন্ধ করার ষড়যন্ত্র নিয়ে অশুভ শক্তি মাথাচাড়া দিয়ে দাঁড়িয়েছে। বিভিন্ন সময় বিভিন্নভাবে এই অশুভ শক্তি বাংলাদেশের শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার জন্য জঘন্যতম তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এবার তারা আইনের ধারা উপধারাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যে হাওয়ায় পুরো বাংলাদেশ ভাসছে, সেই হাওয়াকে রুদ্ধ করার ষড়যন্ত্রের নকশা নিয়ে উপস্থিত।

বলা হচ্ছে ‘হাওয়া’ চলচ্চিত্রের সকল রকম প্রদর্শনী বন্ধ করতে হবে। বলা হচ্ছে বন্য প্রাণী আইন লঙ্ঘন হয়েছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। শিল্পী সাহিত্যিক সংস্কৃতি কর্মী মানেই তারা সমাজের সবচেয়ে সচেতন জনগোষ্ঠীর অংশ। আমরা কখনোই আমাদের সমাজ, পরিবেশ ও প্রকৃতি বিরুদ্ধ কোনো কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করি না। বরং সকল প্রকার সমাজ সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডে শিল্পীরাই সর্বাগ্রে সবসময় ভূমিকা পালন করে আসছে। নাটক চলচ্চিত্র নির্মাণে কখনোই শিল্পী নির্মাতারা পশু-পাখি প্রাণী হত্যা ও নির্যাতন করেন না। গল্পের প্রয়োজনেই কখনো কখনো পশু-পাখিদের দেখানো হয়ে থাকে। যা হাওয়া চলচ্চিত্রে ঘটেছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জেলেরা গভীর সমুদ্রে হারিয়ে গেলে পাখি ছেড়ে দিয়ে দেখেন কাছাকাছি কোনো স্থলভূমি আছে কিনা! যা এই চলচ্চিত্রে দেখানো হয়েছে। এটি জীবনেরই অংশ এবং চলচ্চিত্রে ঘোষণাই দেয়া হয়েছে এখানে কোনো বন্য প্রাণীর ক্ষতিসাধন করা হয়নি। জন্মলগ্ন থেকে আমরা বিভিন্ন নাটক চলচ্চিত্রে দেখে আসছি এমন কতো দৃশ্য সেগুলো নিয়ে আপত্তি উঠলো না কেনো!

উদাহরণ টেনে বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার নিয়ন্ত্রিত বাংলাদেশ টেলিভিশন প্রযোজিত ভীষণ জনপ্রিয় নাটক বহুব্রীহির সেই খাঁচায় বন্দী টিয়া পাখির ‘তুই রাজাকার’ সংলাপ এখনো আমাদের স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করছে। এমন হাজারও ঘটনায় কর্তৃপক্ষ তখন কোথায় ছিলো? এ ঘটনায় চলচ্চিত্রের প্রযোজক, পরিচালককে ডেকে কথা বলা যেতো। আইন লঙ্ঘন হয়ে থাকলে কীভাবে তা শোধরানো যায় সেই আলোচনা ও পদক্ষেপ নেয়া যেতো। তা না করে ২০ কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা, চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বন্ধের জন্য আইনি তলব এসবই আমাদের শিল্প সংস্কৃতির কণ্ঠ রুদ্ধ করার, শিল্প সাহিত্য চর্চাকে নিরুৎসাহিত করার ষড়যন্ত্র হিসেবেই আমরা দেখছি।

পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলার কথা টেনে বিবৃতিতে বলা হয়, নাট্য নির্মাতা অনন্য ইমন এর বিরুদ্ধে ১৫ কোটি টাকার মামলা, মেজবাউর রহমান সুমন এর বিরুদ্ধে ২০ কোটি টাকার মামলা ও হাওয়া সিনেমা প্রদর্শনী বন্ধের ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে আমরা তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানাচ্ছি। আমাদের সংস্কৃতি চর্চার পথকে রুদ্ধ রৰার সকল অপচেষ্টাকে রুখে দেবার জন্য আমরাও বদ্ধ পরিকর।