কুড়িগ্রামের দাসিয়ারছড়া বাংলাদেশের এক গৌরবময় অধ্যায়। আজকের দিনটি দীর্ঘ ৬৮ বছরের অন্ধকার কেটে আলোয় ফেরার দিন। বৈষম্য ও সুবিধা বঞ্চিত গ্রাম দাসিয়ারছড়ার মানুষের ছিল না কোন স্বাধীন স্বত্বা। ফলে ওই সময় শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের কোন ছোঁয়া লাগেনি এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠীর জীবনে।
২০১৫ সালের ৩১ জুলাই সাবেক ছিটমহলবাসীদের জন্য ছিল একটি মুক্তির মাহেন্দ্রক্ষণ। বিশ্বের ইতিহাসে এইদিনে স্বয়ংক্রিয়ভাবে ১১১টি ছিটমহল বাংলাদেশে এবং ৫১টি ছিটমহল একীভূত হয় ভারতের সাথে। এরফলে মুজিব-ইন্দিরা ছিটমহল বিনিময় চুক্তির সফল সমাপ্তি ঘটে শেখ হাসিনা ও মোদি সরকারের উদ্যোগের কারণে।
জেলা ও উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা গেছ, বিলুপ্ত এই ছিট বিনিময়ের পর থেকেই বাংলাদেশ সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রমে বদলে গেছে বৃহত্তম ছিটমহল দাসিয়ারছড়া। ৬৮ বছরের গ্লানি মুছে দিতে গত ৮ বছরে বাংলাদেশ সরকার ৫৭ কিলোমিটার বিদ্যুৎ লাইন স্থাপন করে ২ হাজারেরও বেশি পরিবারকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েছে। পাকা করা হয়েছে ২৬ কিলোমিটার সড়ক ও ৫টি ব্রীজ-কালভার্ট। নতুনভাবে ৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবকাঠামো নির্মাণ করে দিয়েছে। এমপিওভুক্ত করেছে নিম্নমাধ্যমিক ও মাদ্রাসাসহ ৪টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ৩টি কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, মন্দিরসহ তৈরী করে দেয়া হয়েছে রিসোর্স সেন্টার। ৩ হাজার ভিজিডিসহ শতভাগ বাড়ীতে নিশ্চিত করা হয়েছে সুপেয় পানি ও স্যাানিটেশন ব্যবস্থা। এছাড়াও শতভাগ সেচের আওতায় নেয়া হয়েছে কৃষি জমি। সরকারের এই উন্নয়ন পদক্ষেপে ব্যাপক খুশী সাবেক ছিঠমহলবাসী।
বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহলের আন্দোলনকারী ছাত্রনেতা জাকির হোসেন জানান, চুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে ৬৮ বছরে আমাদের অবরুদ্ধ জীবনের অবসান ঘটেছে। মূল ভূখণ্ডে যুক্ত হওয়ার বছরের মধ্যে বর্তমান সরকার ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তা, সেতু-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ দাসিয়ারছড়ায় ব্যাপক উন্নয়ন কর্মকাণ্ড হয়েছে। আমরা কখনো কল্পনা করিনি সরকার এত দ্রুত দাসিয়ারছড়ায় উন্নয়ন করবে। এ জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
এ বিষয়ে কথা হয় দাসিয়ারছড়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাণীর সঙ্গে। তিনি বলেন, আগে ভুয়া পরিচয় দিয়ে বাংলাদেশের স্কুলে পড়তাম। এখন নিজের পরিচয় দিয়ে স্কুলে পড়ছি। খুবই ভালো লাগে।
সাবেক বাংলাদেশ-ভারত ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটির দাসিয়ারছড়া ইউনিটের সভাপতি আলতাফ হোসেন জানান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দাসিয়ারছড়া এসে আমাদের দাসিয়ারছড়াবাসীকে একগুচ্ছ ফুল বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি আমাদেরকে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ, রাস্তা, ইন্টারনেট ব্যবস্থা,কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, যাতায়াত সেতু-কালভার্ট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, কমিউনিটি ক্লিনিকসহ অনেক কিছুই দিয়েছেন। আমরা দাসিয়ারছড়াবাসী প্রধানমন্ত্রীর কাছে চির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।
আজ ৩১ জুলাই সোমবার দাসিয়ারছড়ায় ছিটমহল বিনিময় দিবসটি উপলক্ষে সন্ধায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন, দোয়া মাহফিল ও আলোচনাসভা আয়োজন করা হবে।