আমাদের দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থীর প্রথম পছন্দ বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসে ক্যারিয়ার গড়া। এটি কেন পছন্দের শীর্ষে, তা নিয়ে যথেষ্ট মতভেদ থাকতে পারে। তবে স্নাতক কিংবা স্নাতকোত্তর প্রত্যেক শিক্ষার্থীই বিসিএস ক্যাডার হয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চান।
বিসিএস-এর ধাপগুলোর মধ্যে সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক ধাপ প্রিলিমিনারি। কারণ, এখানে প্রতিযোগী বেশি। কিন্তু পাস করানো হয় কম। যেহেতু প্রিলিমিনারির নাম্বার চূড়ান্ত ফলাফলে কাজে লাগে না, তাই প্রিলিতে পাস করাটাই মুখ্য।
৪৬তম বিসিএসের আবেদন শেষ হয়ে প্রকাশিত হয়েছে প্রিলিমিনারি পরীক্ষার তারিখ। এখন পরীক্ষার অপেক্ষা। যার প্রস্তুতি যত ভালো থাকবে, পরীক্ষায় পাসের সম্ভাবনা তার তত বেশি। প্রতিযোগিতামূলক এই চাকরির পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পরিকল্পনা মাফিক প্রস্তুতির বিকল্প নেই।
প্রিলিমিনারিতে সফল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ৪১তম বিসিএস-এ কর ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত মো.মুবিনুল হক।
প্রিলিমিনারি প্রস্তুতি কতটা সহজ কিংবা কঠিন প্রশ্নে মুবিনুল বলেন, আমার কাছে কিছু কৌশল অবলম্বন করলে বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতি নেওয়া বা প্রিলিতে উত্তীর্ণ হওয়া সহজ মনে হয়। সর্বপ্রথম যে জিনিসটা দেখা দরকার তা হলো, যাতে সব বিষয়ে একটা গড় নাম্বার থাকে। দ্বিতীয়ত, প্রার্থী যে বিষয়ে ভাল সেই বিষয়ে যাতে ভাল মার্ক থাকে।
তৃতীয়ত, কমপক্ষে ১৪৫টা প্রশ্ন যাতে উত্তর করা যায়, সেটা নিশ্চিত করা। কারণ প্রিলিতে ১০ থেকে ১৫ টা প্রশ্ন যেকোন কারণে ভুল হতে পারে।
৪৬তম বিসিএসে বাকি ২ মাস প্রস্তুতির জন্য কতটুকু সময় বলে মনে করেন প্রশ্ন করলে তিনি জবাবে বলেন, আমি মনে করি দু’মাসের মধ্যে বিসিএস প্রিলির একটি ভাল প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব। সেক্ষেত্রে প্রার্থীর যেই বিষয়গুলোতে দুর্বলতা রয়েছে সেই বিষয়সমূহে সময় বেশি দিয়ে প্রস্তুতি নিতে পারে। পরিক্ষার আগমুহূর্তে প্রফেসর্সের বিশেষ সংখ্যা দেখা যেতে পারে।
বিষয়ভিত্তিক প্রস্তুতির বিষয়ে মুবিনুলের পরামর্শ:
বাংলা সাহিত্য: আমার কাছে বাংলা সাহিত্যের সিলেবাস এবং প্রশ্ন মিলে তা কঠিন মনে হয়। তাই এখানে আমি খুব বেশি জোর দিতাম না। বাংলা সাহিত্য আমি কমন এবং পরিচিত বিষয়সমূহ পড়তাম। এখানে আমার লক্ষ্য থাকতো যাতে ১০ নাম্বার থাকে।নবম-দশম শ্রেণীর বাংলা ব্যাকরণ ভাল করে পড়লে এখানে ১০ থেকে ১২ নাম্বার পাওয়া সম্ভব।
ইংরেজি ব্যাকরণে বুঝেশুনে উত্তর করলে ১৫ এর অধিক নাম্বার পাওয়া সম্ভব। ইংরেজি সাহিত্যে বিগত সালের প্রশ্ন এবং ১৫৫৮ সাল থেকে ১৯০০ সাল পর্যন্ত প্রসিদ্ধ লেখকদের সাহিত্যকর্ম দেখলে ৮-১০ নাম্বার পাওয়া সম্ভব।
বাংলাদেশ বিষয়াবলীতে সংবিধান, ১৯৪৭-১৯৭১, বঙ্গবন্ধু, অর্থনৈতিক সূচকসমূহ, সাম্প্রতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডসমূহ দেখলে মোটামুটি ভাল নাম্বার পাওয়া সম্ভব। বাংলাদেশ বিষয়াবলীতে কমপক্ষে যাতে ২২ নাম্বারের ওপরে থাকে, সেদিকে পরীক্ষার্থীকে খেয়াল রাখতে হবে।
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীতে সাম্প্রতিক আন্তর্জাতিক ঘটনাসমূহ, বৈশ্বিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহ, সাম্প্রতিক অনুষ্ঠিত এবং অনুষ্ঠিতব্য সম্মেলনসমুহ, বিভিন্ন দেশের পরিবর্তিত রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন সংস্থার পরিবর্তিত প্রধানের পরিচয় ইত্যাদি বিষয় দেখা যেতে পারে। এখানে যাতে ১৪ নাম্বারের ওপরে থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।
গণিত: বিগত সালের প্রশ্নসমূহ যে অধ্যায়গুলো থেকে এসেছে সেগুলো ভাল করা দেখা। বিশেষ করে লগ-সুচক, মান নির্ণয়, ধারা, সমীকরণ, পিথাগোরাসের উপপাদ্যের প্রয়োগ এবং ত্রিকোনমিতি ভাল করে দেখা যেতে পারে। গণিতে ৮-১০ নাম্বার ভাল টার্গেট হতে পারে।
কম্পিউটারে সফটওয়্যার, মাল্টিমিডিয়া, নেটওয়ার্ক, নেটওয়ার্ক প্রটোকল, মিডিয়া, কম্পিউটার ভাইরাস এবং সিকিউরিটি ইত্যাদি থেকে সাম্প্রতিক বিসিএসগুলোতে বেশি প্রশ্ন আসতেছে। কম্পিউটারে কমপক্ষে ৮-১০ নাম্বার পাওয়া নিশ্চিত করতে হবে।
বিজ্ঞানে বিগত সালের প্রশ্ন যে বিষয়সমূহ থেকে এসেছে সেই বিষয়গুলো ভাল করে পড়তে হবে। তন্মধ্যে এসিড-ক্ষারক, পানি, খাদ্য উপাদান, পর্যায় সারণি, ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ এবং মানবদেহের বিভিন্ন তন্ত্রসমূহ জোর দিয়ে পড়লে গড় নাম্বার পাওয়া সম্ভব। নন-সায়েন্স প্রার্থীদের জন্য বিজ্ঞানে ৭-৮ নাম্বার পেলে চলবে।
মানসিক দক্ষতার ক্ষেত্রে বুঝেশুনে উত্তর করলে ১২ এর ওপরে নাম্বার পাওয়া সম্ভব।
ভূগোলের ক্ষেত্রে এমপি-৩ এর ভূগোল বইটি অনুসরণ করলে ৭-৮ নাম্বার পাওয়া সম্ভব। ভূগোলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতি, শিলার প্রকারভেদ, দূর্যোগ প্রস্তুতি ইত্যাদি বিষয়ে জোর দিতে হবে।
সুশাসন ধারণার উৎপত্তি, বিভিন্ন সংস্থার অনুসারে সুশাসনের উপাদান, নৈতিকতা ও মূল্যবোধের বিভিন্ন সংজ্ঞা, সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকারসমূহ এবং বিখ্যাত সমাজবিজ্ঞানী ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের গ্রন্থসমূহের নাম ইত্যাদি পড়লে গড় নাম্বার পাওয়া সম্ভব।
এছাড়াও তিনি বলেন, শেষ সময়ে কমন বিষয়সমূহ, বিভিন্ন দিবস ও তারিখ, সাম্প্রতিক বিষয়সমূহে জোর দেওয়া যেতে পারে।