পাকিস্তানি দালাল রুখবে তারুণ্য, বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ, গৌরব ‘৭১ ও অপারজেয় বাংলা এই চারটি সংগঠনের পক্ষ থেকে ক্রিকেটার তানজিম হাসান সাকিব ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর নারী বিদ্বেষী,ধর্ম বিদ্বেষী, স্বাধীনতা বিরোধী বক্তব্য ও জাতীয় পতাকা অবমাননা করা লেখা প্রসঙ্গে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বরাবর একটি স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে।
গতকাল ২১ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার এই চারটি সংগঠনের পক্ষ থেকে পাকিস্তানি দালাল রুখবে তারুণ্যর সভাপতি হামজা রহমান অন্তর বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বরাবর এই স্মারকলিপি প্রদান করেন।
স্মারকলিপিতে বিসিবি সভাপতির উদ্দেশ্যে বলা হয়, জাতীয় দলের ক্রিকেটার জনাব তানজিম হাসান সাকিব ও জনাব মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী আপনাদের বেতনভুক্ত ও আপনাদের আওতাধীন খেলোয়াড়। সাম্প্রতিক সময় একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাদের অভিষেক হয় এবং কিছুদিন পূর্বেই তারা অনুর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলের সদস্য ছিলেন।
সাম্প্রতিক সময়ে এই দুজন তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম প্রোফাইলে (ফেসবুক) বাংলাদেশের সমস্ত পেশাজীবি নারীদের উদ্দেশ্য করে বুরুত্বপূর্ণ লেখা প্রকাশ করে একই সাথে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত ১৬ ডিসেম্বরের মহান বিজয় নিবসে জাতীয় পতাকা নিয়ে দেশের নাগরিকদের উচ্ছ্বাসকে কটাক্ষ করে বক্তব্য প্রদান করেন।
এসব করেই তারা ক্ষান্ত হননি। এই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ইসলাম ধর্ম ছাড়া অন্য ধর্মের ব্যাক্তিদেরকে কাফের ও মুরতাদ বলে অভিহিত করেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রীদের একত্রের অধ্যায়ন করা কিংবা নারী বন্ধুর সাথে পুরুষ বন্ধুত্বকে কিংবা এক সহপাঠীর সাথে আরেক সহপাঠীর বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে অত্যন্ত নোংরা ভাষায় ও অশ্লীল ইঙ্গিতপূর্ণ বাক্যে তাদের ফেসবুক প্রোফাইলে প্রকাশ করেন। এহেন কুরুচিপূর্ণ, অশ্লীল, নারী বিদ্বেষী, ধর্মবিরোধী, সাম্প্রদায়িক ও সভ্যতা বিবর্জিত কাজ সারা দেশের মানুষকে হতবাক করে দেয়।
আমরা লক্ষ্য করেছি আপনাদের একজন প্রতিনিধি, ক্রিকেট অপারেশনস এর কর্তাব্যাক্তি জনাব জালাল ইউনুস বলেছেন, তানজিম সাকিব নাকি ক্ষমা চেয়েছে। অথচ তানজিম সাকিবের এমন গর্হিত অপরাধ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) অত্যন্ত বড় অপরাধের আওতায় পড়ে। আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করেছি আপনারা এই বিষয়ে কোন তদন্ত কমিটি গঠন করেন নাই, কোনো তদন্ত রিপোর্ট দেন নাই এবং পুরো বিষয়টাকে হাল্কা ভাবে নিয়ে এড়িয়ে চলে যেতে চাইছেন। আমরা আপনাদের এই আচরনে অত্যন্ত হতাশ ও বিস্মিত।
নারীদের প্রতি, মুসলিমদের প্রতি ও এশিয়ান অঞ্চলের মানুষদের প্রতি বিদ্বেষ পূর্ণ বক্তব্যের জন্য অতীতে আমরা দেখেছি ইংল্যান্ডের জাতীয় দলের ক্রিকেটার অলি রবিনসন শান্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন। ভারতীয় জাতীয় দলের ক্রিকেটার হার্দিক পান্ডে ও কে এল রাহুলও নারীদের প্রতি অবমাননাকর বক্তব্যের কারণে শাস্তির মুখোমুখি হয়েছিলেন। অথচ আমাদের দেশের একজন ক্রিকেটার এমন ভয়ংকর মন্তব্য করবার পরও সেটির প্রেক্ষিতে কার্যকর ব্যবস্থা দেখা যায়নি। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থার সদস্য হয়ে আপনাদের এমন ভূমিকাকে আমরা নিন্দা জানাই।
নারীর প্রতি অবমাননাকর বক্তব্য, অন্য ধর্মালম্বীদের বিরুদ্ধে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, জাতীয় পতাকার অবমাননার বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত কমিটি গঠন করে, সেই তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ্যে এনে আলোচ্য ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আপনার কাছে অনুরোধ জানাই। আপনারা যদি যথাযথ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন, তাহলে এই বিষয়টি এখানেই সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা অবশ্যই এই বিষয়টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট সংস্থায় জানাবো এবং প্রতিকার চাইবো।
আমরা কখনোই চাইনা বাংলাদেশে সংগঠিত একটি বিষয় আন্তর্জাতিক সংস্থায় যাক এবং দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হোক ৷ কিন্তু আমরা এও চাইনা আপনাদের বিচার-বিবেচনার ব্যার্থতা আমাদের সে পথে ধাবিত করুক। ফলে আপনার কাছে আমাদের বিনীত অনুরোধ, ক্রিকেটার তানজিম হাসান সাকিব ও মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর বিষয়ে একটি নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটি গঠনপূর্বক তাদের সমস্ত লেখার প্রেক্ষিতে তার ব্যখ্যা চাওয়া হোক এবং এই ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক যাতে করে উত্তর প্রজন্মে বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটার এই রকম দুঃসাহস দেখাবার কথা কল্পনাও না করতে পারে।