দেখতে দেখতেই ২৫ বছর পার করে ফেললো বাসু চ্যাটার্জি পরিচালিত ও বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত কালজয়ী রোমান্টিক চলচ্চিত্র ‘হঠাৎ বৃষ্টি’। আর জনপ্রিয় এই চলচ্চিত্রটির ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে শনিবার (১৮ নভেম্বর) চ্যানেল আইয়ের ছাদ বারান্দাতে গানে কথায় আর স্মৃতিচারণে আয়োজিত হয় এক বিশেষ আয়োজনের।
যদিও এমন অনুষ্ঠানের মূল বিষয়বস্তু একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন। বইটির নাম ‘চিত্রনাট্য ও অন্যান্য প্রসঙ্গ’। যে বইয়ে থাকছে বাসু চ্যাটার্জির রচনায় ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ সিনেমা’র মূল চিত্রনাট্য এবং সঙ্গে থাকছে এই সিনেমার অনেক স্থিরচিত্র, শিল্পী-কলাকুশলীর অভিজ্ঞতার কথা।
এদিন বিকালে চ্যানেল আইয়ের আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র প্রযোজক হাবিবুর রহমান খান, ইমপ্রেস টেলিফিল্মস লিমিটেড ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর সহ ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ খ্যাত চিত্রনায়ক ফেরদৌস আহমেদ, বইটির সম্পাদনার দায়িত্বের থাকা নির্মাতা ছটকু আহমেদ, চলচ্চিত্র সাংবাদিক আব্দুর রহমানের পাশাপাশি ছিলেন কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন, নির্মাতা মতিন রহমান, মুশফিকুর রহমান গুলজার, চিত্রনায়ক রিয়াজ সহ দেশের আরও বরেণ্য সব তারকারা।
অনুষ্ঠানে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র মতো বহু কালজয়ী ছবি প্রযোজনা করার জন্য চ্যানেল আইয়ের পক্ষ থেকে সম্মানিত করা হয় প্রযোজক হাবিবুর রহমানকে। তাকে উত্তরীয় পরিয়ে সম্মাননা জানান কথাসাহিত্যিক ইমদাদুল হক মিলন। তার হাতে স্মারক তুলে দেন ফরিদুর রেজা সাগর। অনুষ্ঠানে প্রযোজক হাবিবুর রহমান ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ নির্মাণের পেছনের কাহিনী শোনান উপস্থিত শ্রোতা দর্শকদের। কীভাবে এই সিনেমায় চিত্রনায়ক ফেরদৌসকে যুক্ত করলেন, সে গল্পও এদিন সন্ধ্যায় শোনালেন এই প্রযোজক।
২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে প্রকাশনাটি নিয়ে হাবিবুর রহমান বলেন, এই বইটি প্রকাশে আমাকে সর্বোত সহায়তা করেছেন আমার বাল্য বন্ধু চিত্রনাট্যকার, পরিচালক ছটকু আহমেদ।
অনুষ্ঠানে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র নায়ক ফেরদৌস বলেন, এই সিনেমার সাথে আমাদের প্রত্যেকের অনেক স্মৃতি। আমার তো হাজার হাজার স্মৃতি জড়িত। আজকে যে বইটি প্রকাশিত হয়েছে, তাতে আমার কিছু স্মৃতি লিখেছি। তিনি বলেন, এই বইটি প্রকাশে পুরো বিষয়টির নাটের গুরু সাগর ভাই। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ সিনেমাটিকে ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যানারে নিয়ে এসে সারা বিশ্বের মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়ার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
এসময় বাসু চ্যাটার্জীর কথাও স্মরণ করেন ফেরদৌস। বলেন, বাসু দা ৯৪ বছরে মারা যান। মারা যাওয়ার মাসখানেক আগেও আমার সাথে কথা হয়েছে। তিনি আমাকে বলেছিলেন, তিনি আরো একটি সিনেমা নির্মাণ করতে চান; আমাকেও চিত্রনাট্য পাঠিয়েছিলেন। আমারকাছে চিত্রনাট্যটি এখনও আছি। ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র পর তার সাথে আমার আত্মিক সম্পর্ক তৈরী হয়ে যায়।
অনুষ্ঠানের শেষের দিকে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ এবং এই ছবির প্রযোজক হাবিবুর রহমানের সাথে পরিচয়ের সূত্রপাত কীভাবে হলো, সে বিষয়ে স্মৃতিচারণ করেন প্রখ্যাত শিশুসাহিত্যিক ও ইমপ্রেস টেলিফিল্মের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। জানান বাংলাদেশ টেলিভিশনে কীভাবে প্রথমবার কোনো নতুন ছবির ‘প্রিমিয়ার’ করেছিলেন, সেই গল্পও।
প্রকাশিত বইটিতে ‘হঠাৎ বৃষ্টি’র পূর্ণাঙ্গ চিত্রনাট্য ছাড়াও লিখেছেন বাসুদেব চ্যাটার্জী মেয়ে, জুন মালিহা, প্রিয়াংকা, শ্রীলেখা মিত্র এবং নচিকেতা সহ অনেকে।
১৯৯৮ সালে মুক্তি প্রাপ্ত বাংলাদেশ-ভারত যৌথ প্রযোজনার এই ‘হঠাৎ বৃষ্টি’ ছবিটি প্রথমে মুক্তি পায় টেলিভিশনে। এরপর সিনেমা হলে মুক্তি পেয়েও রেকর্ড পরিমাণ ব্যবসা করে। সে ছবিতে ফেরদৌসের নায়িকা ছিলেন কলকাতার অভিনেত্রী প্রিয়াঙ্কা, আরো ছিলেন শ্রীলেখা মিত্র।
ঢাকা/এমটিএল